নয়াদিল্লি: বিরোধী দলে থাকলে অসৎ-দুর্নীতিগ্রস্ত। আর বিজেপিতে (BJP) যোগ দিলে সেই লোকগুলোই হয়ে যায় স্বচ্ছ, পবিত্র গঙ্গাজলের মতো! বিজেপি কি একটা ওয়াশিং মেশিন? পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (CM Mamata Banerjee) বহুবার এই অভিযোগ তুলেছেন বিজেপি এবং কেন্দ্রীয় সরকারি তদন্তকারী সংস্থাগুলির (Central Investigation Agencies) আচরণের প্রতিবাদে। এবার তৃণমূল নেত্রীর সুরেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির (PM Narendra Modi) বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জমাট বাঁধল। ৮টি বিরোধী দল (Opposition Parties) মিলে মোদিকে চিঠি দিয়ে কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলির অবব্যবহার নিয়ে অভিযোগপত্র লিখেছে। যদিও দেশের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস (Congress) এই প্রতিবাদপত্রে স্বাক্ষর না করে নিজেকে সরিয়ে রাখার সিদ্ধান্ত নেয়।
আম আদমি পার্টির নেতা তথা দিল্লির প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসোদিয়াকে গ্রেফতারির ঘটনায় বিরোধী দলগুলি যারপরনাই ক্ষুব্ধ। শুধু আম আদমি পার্টি নয়, বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে একের পর এক বিরোধী নেতা-নেত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনে তদন্ত শুরু করে। এর মধ্যে বাদ যায়নি কোনও বিরোধী দলই। কংগ্রেস নেতা রাহুল এবং সোনিয়া গান্ধীও ছাড় পাননি। অথচ, মামলা চলাকালীন কিংবা তার ঠিক আগেই দলবদলু নেতাদের ছাড় দেওয়া হয়েছে, যার তালিকাটাও দীর্ঘ। এমনই অভিযোগ ৮টি বিজেপি-বিরোধী দলের।
প্রতিবাদপত্রে স্বাক্ষর করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, কে চন্দ্রশেখর রাও, পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মান, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল, ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ফারুক আবদুল্লা, এনসিপি নেতা শরদ পাওয়ার, শিবসেনার উদ্ধব ঠাকরে, সপা নেতা অখিলেশ যাদব এবং বিহারে উপমুখ্যমন্ত্রী তথা আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব।
মোদিকে চিঠিতে লেখা হয়েছে, আমরা আশা করি আপনি স্বীকার করবেন ভারত এখনও গণতান্ত্রিক দেশ। কিন্তু, বিরোধী দলগুলির উপর একরোখা কেন্দ্রীয় এজেন্সির অপব্যবহার দেশকে একনায়কতন্ত্রের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। দীর্ঘদিনের চেষ্টায় মণীশ সিসোদিয়াকে গ্রেফতার করেছে সিবিআই। তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আছে, কিন্তু এর পিছনে এক কণাও তথ্যপ্রমাণ নেই তদন্তকারী সংস্থার হাতে।
চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, ২০১৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত যত জন রাজনৈতিক নেতাকে আটক, গ্রেফতার, তল্লাশি এবং জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে, তাঁদের অধিকাংশই বিরোধী শিবিরের। আশ্চর্যজনকভাবে তদন্ত শুরুর পরে যেসব নেতা বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে তদন্ত ধীরগতি নিয়েছে এজেন্সিগুলো। চিঠিতে দৃষ্টান্ত দিয়ে বলা হয়েছে, বর্তমানে অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা সারদা চিটফান্ড মামলায় সিবিআইয়ের নজরে ছিলেন। তখন তিনি কংগ্রসে ছিলেন বলেই সিবিআই তাঁকে পদে পদে নজরে রেখেছিল। কিন্তু, সেই মামলা আর এগল না, যখন তিনি দলত্যাগ করে বিজেপিতে যোগ দিলেন।
একইভাবে প্রাক্তন তৃণমূল নেতা, বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বিরোধী দলনেতা বিজেপির শুভেন্দু অধিকারীকে নিয়েও একই পথে হেঁটেছে কেন্দ্র। সারদা মামলায় মুকুল রায়েরও নাম উল্লেখ করা হয়েছে এই চিঠিতে। ২০১৪ সাল থেকে তল্লাশি বলুন আর গ্রেফতারি, সবই হয়েছে বিরোধী দলের নেতাদের উপর। তা সে লালুপ্রসাদ যাদব (Rashtriya Janata Dal) হন কিংবা সঞ্জয় রাউত (Shiv Sena)। আজম খান (Samajwadi Party) হন অথবা নবাব মালিক। অনিল দেশমুখ (NCP) বা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বিরোধীদের আরও অভিযোগ, অনেক সময়ই দেখা গিয়েছে, তল্লাশি, আটক কিংবা গ্রেফতারির ঘটনা কাকতালীয়ভাবে ভোটের দিনক্ষণের সঙ্গে মিলে গিয়েছে। যা থেকে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে, এসবই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।