ওয়াশিংটন: পোকামাকড়ের মস্তিষ্ক (Insect’s Brain) ভিতর থেকে ঠিক কেমন দেখতে? তাদের স্নায়ুতন্ত্রই (Nervous System) বা কেমন দেখতে লাগে? এবিষয়ে এতদিন অনুমান (Presumption) ছিল, সেই মতো একটা ধারণা (Concept) করে নেওয়া হতো। কিন্তু আর নয়, বিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞরা (Scientists and Experts) পোকার মাথার ভিতরের বিশদ তথ্যবিশিষ্ট কমপ্লিট ম্যাপ (Detailed Complete Map) তৈরি করেছেন। তাতে সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছে, পোকার মাথার ভিতরে থাকা প্রতিটি নিউরনের ছবি, তাও আবার বিস্তারে। প্রতিটি নিউরন (Neuron) একে অপরের সঙ্গে কিভাবে যুক্ত, তাও বিশদ মানচিত্রে তুলে ধরা হয়েছে। গবেষকরা (Researchers) যে পোকার মস্তিষ্কের সম্পূর্ণ চিত্র তৈরি করেছেন, সেটি হলো ফ্রুট ফ্লাই লার্ভা (Fruit Fly Larva)।
ব্রিটেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং জার্মানি (UK, US, and Germany), এই তিন দেশের বিশেষজ্ঞদের একটি টিম (Team) এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এই নিয়ে গবেষণা চালিয়ে আসছিলেন। ফ্রুট ফ্লাই লার্ভার সম্পূর্ণ মানচিত্র তৈরি, সেই গবেষণারই ফলাফল (Result of the Research)। ওই কীটের মস্তিষ্কের জটিল চিত্র একটি একটি করে তৈরি করা হয়েছে ওই মানচিত্রে, প্রতিটি নিউরন কিভাবে একসঙ্গে যুক্ত রয়েছে, সেটিও সেখানে লেখা রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, পোকামাকড়ের মস্তিষ্কের জটিল মানচিত্র তৈরিতে এই সফলতা চিন্তার প্রক্রিয়াকে (Thought Mechanism) বোঝার ক্ষেত্রে অনেক কাছাকাছি পৌঁছে দিয়েছে বিজ্ঞানীদের। এটি নিউরোসায়েন্সে (neuroscience) অন্যতম উল্লেখনীয় মাইলফলক (Milestone)।
আরও পড়ুন: Pakistan | নির্দেশ থাকলেও বিলাসবহুল গাড়ি ফেরত দিচ্ছেন না পাক ক্যাবিনেট সদস্যরা
একটি বিবৃতিতে জনস হপকিন্স (Johns Hopkins)-এর বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার (biomedical engineer) জোশুয়া টি ভোগেলস্টেইন (Joshua T. Vogelstein) বলেছেন, “আমরা যদি বুঝতে চাই, আমরা কারা এবং আমরা কিভাবে ভাবনা-চিন্তা করি, তাহলে আমাদের ভাবনা-চিন্তা প্রক্রিয়া বুঝতে হবে। আর তা উপলব্ধি করার মূল চাবিকাঠি হলো, নিউরন কিভাবে একে অপরের সঙ্গে যুক্ত থাকে, তা জানা।”
মস্তিষ্কের মানচিত্র (Brain Map) তৈরি নিয়ে কয়েক দশক ধরে গবেষণা প্রক্রিয়া (Research Process) চলছে। এটি অত্যন্ত কঠিন কাজ, কারণ এর জন্য মস্তিষ্ককে শত শত কিংবা হাজার হাজার পৃথক টিস্যুর নমুনাতে (Tissue Sample) টুকরো টুকরো করা প্রয়োজন। তারপর সমস্ত অংশগুলিকে পুনর্গঠন করতে হয়, যা অত্যন্ত শ্রমসাধ্য প্রক্রিয়া। এরজন্য ইলেক্ট্রন মাইক্রোস্কোপের (Electron Microscope) সাহায্য নিয়ে এক এক করে সবকিছু চিত্রিত করতে হয়।
জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটির (Johns Hopkins University) নেতৃত্বে, তিনটি ভিন্ন দেশের গবেষকরা, একটি পোকার মস্তিষ্কের প্রথম বিশদ নিউরাল ডায়াগ্রাম (Detailed Neural Diagram) তৈরি করেছেন, যা ভবিষ্যতের মস্তিষ্কের গবেষণাকে (brain research) এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করতে পারে এবং এর গঠন শেখার নতুন উপায়ের বিকাশ ঘটাতেও কাজে লাগবে।
গবেষণাটি ড্রসোফিলা মেলানোগ্যাস্টার লার্ভার (Drosophila Melanogaster Larva) উপর চালানো হয়েছিল। উল্লেখ্যযোগ্য বিষয় হলো, মানুষের (Humans) মৌলিক জীববিজ্ঞানের (Fundamental Biology) সঙ্গে এর অনেক মিল রয়েছে, জিনগত ভিত্তিতেও (Genetic Foundation) তুলনামূলক মিল রয়েছে। এই কীটের সমৃদ্ধ শিক্ষা (Rich Learning) এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের আচরণ (Decision-Making Behaviors) রয়েছে।
গবেষকরা ৩,০১৬টি নিউরন এবং তাদের মধ্যেকার প্রতিটি সংযোগের ম্যাপ করেছেন, এইভাবে প্রায় ৫,৪৮,০০০ সংযোগোর তথ্য ম্যাপিংয়ে উঠে এসেছে। ভোগেলস্টেইন আরও বলেছেন, “৫০ বছর ধরে এই নিয়ে কাজ চলছে এবং এটি প্রথম মস্তিষ্কের সংযোগ বা কানেক্টোম (Connectome)। এটা বালির মধ্যে প্রথম পতাকা বসানোর সমান, জানান দেওয়া যে আমরাও করতে পারি। এখনও পর্যন্ত এতটাই কাজ হয়েছে।”