Abhishek Banerjee | ভার্চুয়াল বৈঠকে তৃণমূল কর্মীদের কড়া বার্তা অভিষেকের

কলকাতা: সামনেই পঞ্চায়েত নির্বাচন (Panchayat Election 2023)। সেই উপলক্ষে সোমবার সাংগঠনিক বৈঠকে বসেছিলেন তৃণমূল নেতা ও সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee, TMC Leader and MP)। ভার্চুয়াল বৈঠকে (Virtual Meeting) তৃণমূল কর্মীদের উদ্দেশে অভিষেকের কড়া বার্তা, “গা জোয়ারি করে ভোট করলে চলবে না, ভোটে লড়তে হবে।” এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে রাজ্যের বিরোধীদের দলের নেতাদের মনোনয়ন জমা দিতে যাতে বাধা দেওয়া হয়, সেই নির্দেশও দিয়েছেন অভিষেক। তৃণমূল নেতা-কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশে সুষ্ঠ নির্বাচনের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।  

বাংলায় পঞ্চায়েত নির্বাচন দিকে সময় যত এগোচ্ছে, ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রসঙ্গ ততই প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে রাজ্য রাজনীতিতে। রাজ্য জুড়ে বিরোধী দলগুলি (Oppositions) সেই সময় ব্যাপক হিংসা ও সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলেছিল। তার ফলাফল ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে (General Election 2024) ভুগতে হয়েছিল শাসক দলকে (Ruling Party)। বিজেপি (BJP) অনেক বেশি আসন দখল করেছিল। এবার যাতে তা না হয়, সেদিকে নজর দিচ্ছেন তৃণমূল (TMC)। ২০২৪-এ দেশে সাধারণ নির্বাচন (General Election 2024) রয়েছে। তার আগে কোনওভাবেই ঝুঁকি নিতে রাজি নয় টিএমসি।

আরও পড়ুন: Calcutta High Court | রামনবমীর মিছিল ঘিরে হিংসা, এনআইএ ছাড়া তদন্ত সম্ভব নয়, মত বিচারপতির   

জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকে অভিষেক স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, “বিধায়ক বা সাংসদদের যেমন অগ্নিপরীক্ষা দিয়ে জিতে আসতে হয়। পঞ্চায়েতেও আপনাদের তাই করতে হবে। গা-জোয়ারি করে ও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে আসব, এমনটা হবে না৷ কেউ যদি ভাবেন, নিজের জায়গা ঠিক করতে দলের সর্বনাশ করবেন, তা মানা হবে না৷ ১৮’র জন্য ১৯ সালে দল আসন কম পেয়েছিল, এবার তা বরদাস্ত করা হবে না। দরকার হলে ১০০ শতাংশ আসনে লড়াই হবে। রাজ্য থেকে নেতৃত্ব পাঠিয়ে নমিনেশন করাব বিরোধীদের৷”

পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রার্থী করা প্রসঙ্গে প্রার্থী অভিষেক বলেছেন, “আপনারা আপনাদের রেকমেন্ডেশন দলকে পাঠান। সবার সঙ্গে আলোচনা করে নাম পাঠান। এমন কিছু নাম এসেছে, যাঁদের বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভ আছে, ৫০ শতাংশই দুর্নীতিগ্রস্ত। কোনও রকম মৌরসীপাট্টা চলবে না৷ এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে দল তাঁদের প্রার্থী করবে না।” জেলা তৃণমূল নেতৃত্বদের প্রতি তাঁর হুঁশিয়ারি, “আপনাদের আবারও বলে দিচ্ছি, প্রার্থী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee, Chief Minister of West Bengal) ঠিক করবেন৷ আপনাদের থেকে প্রাপ্ত তালিকা আমরা নেত্রীর কাছে পাঠিয়ে দেব। করে খাওয়ার জায়গা পঞ্চায়েত নয়৷” 

জেলার ব্লক সভাপতিদের (Block Presidents) উদ্দেশে অভিষেকের বার্তা, বিধায়কদের (MLAs) সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন। প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে তিনি জানতে চান, “আপনারা বুথ কর্মীদের খোঁজ রাখেন না কেন? তাঁদের আপনারা কী ভাবছেন? অফিসে বসে হোয়াটসঅ্যাপে (WhatsApp) দল চলবে নাকি? পরের ভোটে জিতবেন কী করে? মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ান। সভাপতি হলে, ইগো নিয়ে বসে থাকলে চলবে না বলেও তিনি পরামর্শ দিয়েছেন। যে পদাধিকারী ইগো নিয়ে বসে থাকবেন, ছোটখাটো সমস্যার সমাধান করবেন না, তাঁরা দল ছেড়ে চলে যান৷” 

দলের বিধায়কদের উদ্দেশে অভিষেকের বার্তা, “বিধায়করা ভাববেন না, আপনার নির্বাচনী এলাকা আপনাদের পৈতৃক সম্পত্তি। মানুষ না চাইলে, ভগবানও জেতাতে পারবেন না।” তিনি এপ্রসঙ্গে আরও বলেন, “অনেকে বিধায়ক কাজ করেননি৷ উদয়ন গুহ ও রবীন্দ্রনাথ ঘোষ, আপনাদের এলাকায় কেউ যেতে পারবে না কেন?” পাশাপাশি দলের অঞ্চল সভাপতিদেরও একহাত নিয়েছেন তিনি। অভিষেক জানতে চান, “জলপাইগুড়ির দু’টি অঞ্চলে ব্লক সভাপতির সঙ্গে অঞ্চল সভাপতির ঝামেলা কেন? কেন দিদির সুরক্ষা কবচ কর্মসূচী করেননি? দু’দিন সময় দিলাম। কাজ না হলে পদ থেকে সরিয়ে দেব। পরশু দুপুর ১২টার মধ্যে জেলা কমিটি পূর্ণাঙ্গ যেন তৈরি হয়। ১৭ তারিখের মধ্যে ব্লক কমিটি যেন পূর্ণাঙ্গ তৈরি হয়৷ ১৭ তারিখ অবধি সময় বেঁধে দিলাম। আগামী ২৪ তারিখের মধ্যে অঞ্চল কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে হবে৷ একতরফা যদি কেউ কমিটি রিলিজ করে, তাহলে তা বাতিল করে দেবো। আপনারা দলের স্বার্থে কাজ করুন।

অভিষেকের বক্তব্য, রাজ্যের শাসক দল এখনও পর্যন্ত, ৪০ শতাংশ মানুষের কাছে পৌঁছতে পেরেছে, আরও ৬০ শতাংশ মানুষের কাছে যেতে হবে। তাঁর সাফ কথা, “মানুষের জন্য কাজ করুন। দিদির সুরক্ষা কবচ নিয়ে মানুষের কাছে যান। রাজ্যের মানুষকে বোঝাতে হবে, ‘তৃণমূল কংগ্রেসকে ভোট দিলে, দল আপনাদের জন্য লড়াই করবে দিল্লিতে’।”

কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বাংলার সঙ্গে বঞ্চনা করার অভিযোগ নিয়ে তৃণমূল বারবার সরব হয়েছে। আগামী দিনে এই নিযে ফের ঝাঁপাতে চলেছে ঘাসফুল শিবির। অভিষেক বলেছেন, “আপনারা সকলেই জানেন কেন্দ্রের বঞ্চনা চলছে৷ ইদের পর ২৪ তারিখ থেকে ২৫ মে অবধি স্বাক্ষর গ্রহণ চলবে। সকলেই নিজের হাতে চিঠি লিখবেন প্রধানমন্ত্রী ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রীকে৷ প্রত্যেক বুথ থেকে, প্রত্যেক অঞ্চল থেকে এই চিঠি লিখবেন৷ সেই চিঠি জেলা সভাপতিকে পাঠাবেন৷ বাংলা একমাত্র রাজ্য, যার সঙ্গে বঞ্চনা করা হচ্ছে। মানুষের কাছে গিয়ে বোঝান, বিজেপি হেরে গিয়ে টাকা আটকে রেখেছে৷ এক থেকে দেড় কোটি চিঠি চাই৷ ২ লক্ষ লোকের জমায়েত করব৷ দিল্লিতে গিয়ে ধরনায় বসব।”

ইদের পর অভিষেক মালদা, মুর্শিদাবাদ ও উত্তর দিনাজপুরে যাবেন। তার আগে দলীয় দলের জেলা নেতৃত্বের প্রতি তাঁর বার্তা, “মানুষকে বলুন দিদি লক্ষ্মীর ভাণ্ডার দিচ্ছে, আর মোদি কেড়ে নিচ্ছে৷ মোদি আধার ও প্যান লিঙ্ক করার নামেও টাকা নিয়ে যাচ্ছে।”