কলকাতা: শিবপুর (Shibpur), রিষড়া ও ডালখোলা্র হিংসার ঘটনা নিয়ে তদন্তে রাজি বলে আদালতে জানিয়ে দিল এনআইএ (NIA)। সোমবার (Monday) এনআইএর আইনজীবী কলকাতা হাইকোর্টে (Calcutta High Court) জানান, তারা তদন্ত করতে প্রস্তুত। রামনবমীর (Ram Navami) মিছিল ঘিরে হিংসার ঘটনায় এনআইএ তদন্ত চেয়ে হাইকোর্টে মামলা করেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। এদিন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি টি এস শিভঘ্ননম এবং বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ পর্যবেক্ষণে বলেছে, এই হিংসার তদন্তে কেন্দ্রীয় সংস্থাকে প্রয়োজন। এদিন শুনানি শেষ হলেও রায়দান স্থগিত থাকে।
এদিনও শুনানি পর্বে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি বলেন,ব্যাপক অশান্তি হয়েছে রাম নবমীকে কেন্দ্র করে। পুলিশ জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে যা ব্যবহার করেছে সেটা দেখে মনে হচ্ছে, অবস্থা খুব খারাপ। বোমাবাজি, আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হওয়া এবং অশান্তির ঘটনা সাধারণ মানুষকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। অ্যাসিডের বোতল, বাঁশ, ইঁট, পাথর পাওইয়া গিয়েছে বিভিন্ন জায়গায়।
আরও পড়ুন: C V Ananda Bose | সবাইকে তাক লাগিয়ে একই দিনে দু’বার কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শন রাজ্যপালের
প্রধান বিচারপতি বলেন, পুলিশের রিপোর্তে বারবার লেখা হয়েছে মারাত্মক অস্ত্র, মারাত্মক অস্ত্র, মারাত্মক অস্ত্র। কিন্তু কী সেই মারাত্মক অস্ত্র, রিপোর্টে তার উল্লেখ নেই। ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া অত্যন্ত গুরত্বপূর্ণ বিষয়।পাশাপাশি ছাদ থেকে পাথর ছোড়ার অভিযোগ রয়েছে। অবশ্য ১০ মিনিটের মধ্যে পাথর ছাদে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। বোঝাই যাচ্ছে, তাহলে সেগুলো আগে থেকেই মজুত করা ছিল।
আদালতের আরও প্রশ্ন, ইসলামপুরের পুলিশ কমিশনার তাঁর রিপোর্টে জানাচ্ছেন, পুলিশ বিক্ষুব্ধ জনতাকে সরাতে কী কী পদক্ষেপ করেছে। বেঞ্চ বলে, পরিস্থিতি নিশ্চয়ই খুব অশান্ত ছিল। না হলে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে এত কাঁদানে গ্যাস, স্টান্ট গ্রেনেড ইত্যাদি ব্যবহার করতে হত না। রিপোর্টেই বোঝা যাচ্ছে, ব্যাপক অশান্তি হয়েছে।
অ্যাডভোকেট জেনারেল এস এন মুখ্যোপাধ্যায় বলেন, হকি স্টিক, তলোয়ার, আগ্নেয়াস্ত্র দেখা গিয়েছে। হুগলির গ্রামীণ অঞ্চলের একটি শোভাযাত্রা রুট সংক্রান্ত পুলিশের নির্দেশিকা অমান্য করেছিল। বাকি কোথাও কোনও অসুবিধা হয়নি। তিন কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী চেয়েছিলাম। তা পাওয়া গিয়েছে। থানা ভিত্তিক রিপোর্ট এসেছে। ইসলামপুরের গন্ডগোলে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। পুলিশ সুপার সমেত অনেক পুলিশকর্মী আহত হন। মামলা দায়ের হয়েছে, তারপরই গ্রেফতার করা হয়েছে।
অ্যাডিশনাল সলিসিটর জেনারেল জানান, রামনবমী দিন অনেক বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।এটার পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্র নিজেও স্বতঃপ্রণোদিত তদন্ত করতে পারে। আদালত অনুমতি দিলে এনআইএ তদন্ত করতে রাজি।তিনি আরও বলেন, অনেক ক্ষেত্রে ঘটনার দু-তিন সপ্তাহ পর তদন্তভার পেলে অনেকটা দেরি হয়ে যায়।এতে তথ্য প্রমাণ নষ্ট হওয়ার সম্ভবনা থেকে যায়। হাওড়ার আট জায়গায় ইন্টারনেট বন্ধ ছিল, কিন্তু মাত্র তিন কোম্পানি বাহিনী চাওয়া হয়েছে। এতেই বোঝা যায় রাজ্য কী তদন্ত করছে।
এনআইএ এবং সিবিআইয়ের আইনজীবী বিল্বদল ভট্টাচার্য বলেন, আমরা তদন্তে প্রস্তুত।ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি বলেন, শিবপুরের ঘটনায় হাওড়া পুলিশ কমিশনারের রিপোর্ট অসম্পূর্ণ। এই হিংসার তদন্ত করা রাজ্যের পক্ষে সম্ভব নয়। কে বা কারা এই অশান্তিতে উস্কানি দিয়েছে বা লাভবান হয়েছে তা জানা রাজ্য পুলিশের পক্ষে সম্ভব নয়। কেন্দ্রীয় সংস্থার প্রয়োজন। ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, বছরের পর বছর একই ঘটনা ঘটছে। সমস্যাটা কোথায়? পুলিশের অক্ষমতা?পুলিশের ব্যর্থতা? ফোর্সের অভাব?