বেঙ্গালুরু এফ সি–২ এটিকে মোহনবাগান–১
(জাভি হার্নান্ডেজ, রয় কৃষ্ণ) (দিমিত্রি পেত্রাতোস)
কদিন আগে সুনীল ছেত্রী বলছিলেন, কলকাতা তাঁকে কখনও খালি হাতে ফেরায়নি। ২০০৩ সালে মোহনবাগানের জার্সিতে ভারতীয় ফুটবলে যাত্রা শুরু তাঁর। তার পর উনিশ বছরের বেশি সময় ধরে তিনি এদেশের ফুটবলের অন্যতম প্রধান মুখ। গত বছর অধরা ডুরন্ড কাপটাও জিতে নিয়ে গেছেন কলকাতার জামাই। রবিবাসরীয় সন্ধ্যায় সল্ট লেক স্টেডিয়ামে এটিকে মোহনবাগানের বিরুদ্ধে সুনীল খেললেন সংযোজিত সময়ের মিনিট কয়েক। তবে ডাগ আউটে বসে খুবই আনন্দ করে দেখলেন তাঁর টিমের জোড়া গোল, যা নিয়ে এল কাঙ্খিত জয়। গত ছটা মোলাকাতে কখনও এটিকে মোহনবাগানকে হারাতে পারেননি সুনীলরা। সেই বিচারে এই জয় তাদের কাছে স্পেশাল। আরও স্পেশাল এই জন্য যে এই জয় তাদের ঢুকিয়ে দিল ছয় নম্বরে। বাকি তিনটে ম্যাচে জিততে পারলে তাদের প্লে অফ-এ যাওয়া আটকাবে না। আর মোহনবাগান ? লিগ টেবলে তারা চারেরই রয়ে গেল। বাকি চারটে ম্যাচে বিস্ময়কর পদস্খলন না হলে প্লে অফ-এ তাদের যাওয়া সমস্যা হবে না।
মোহনবাগানের লাইন আপে দুজন ছিলেন না। হুগো বুমো এবং আশিক কুরুনিয়ন। কার্ড সমস্যায় তারা মাঠে না নেমে গ্যালারিতে বসেই খেলা দেখলেন। কোচ ঝুয়ান ফেরান্দো যঢ টিম নামিয়েছিলেন তাতে কোনও চমক ছিল না। বুমোর জায়গায় ফেদরিকো গালেগো এবং আশিকের জায়গায় লিস্টন কোলাসো নামলেন। মোহনবাগান খেলল ৪-২-৩-১ ছকে। সামনে শুধু দিমিত্রি পেত্রাতোস। তাঁর পিছনে মনবীর, গালেগো এবং লিস্টন। দুই ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার গ্লেন মার্টিন্স এবং কার্ল ম্যাকহিউ। এই টিম প্রথম ৪৫ মিনিট বেশ দাপিয়ে খেলল। গোলের মুখ তেমন অবশ্য খুলতে পারল না। যা শট হয়েছে তাতে গুরপ্রীত সান্ধুর মতো দেশের এক নম্বর গোলকিপারকে বধ করা যায় না। আর বেঙ্গালুরুর কোচ মাইক হেসন চারজনের বদলে তিনজন বিদেশি নিয়ে শুরু করলেন। তিন ব্যাকের ডিফেন্সে অ্যালান কোস্তা, মাঝ মাঠে গেমমেকার জাভি হার্নান্ডেজ এবং সামনে রয় কৃষ্ণ। টিমের ক্যাপ্টেন সুনীল ছেত্রীকে তিনি নামাননি। বিরতির আগেই তাঁর টিম এগিয়ে যেতে পারত যদি সামনে শুধু বিশাল কাইথকে পেয়ে তাঁকে অপ্রস্তুত করতে পারতেন শিবশক্তি নারায়ণন। এই মালয়ালি তরুণ এই লিগে চারটে গোল করেছেন। লিগের শুরুতে তিনি নামতেন শেষ কুড়ি মিনিটের জন্য। এখন প্রথম একাদশের প্লেয়ার। এদিনও গোলের জন্য সারাক্ষণ ছোঁক ছোঁক করে গেলেন। কিন্তু বেশ কয়েকটি সুযোগ পেলেও গোলে বল রাখতে পারেননি।
বিরতির পর কিন্তু একচেটিয়া দাপট দেখাল বেঙ্গালুরু। মাঝ মাঠে জাভির নেতৃত্বে তারা একটার পর একটা আক্রমণ তুলে আনল। রাইট হাফ প্রবীর দাস, লেফট হাফ রোশন এবং জাভির পাশে সুরেশ জান কয়লা করে দিল মোহনবাগানের। ব্রেন্ডন হামিল দুর্দান্ত না খেললে অনেক আগেই গোল খেয়ে যায় মোহনবাগান। সেই গোল তারা খেল ৭৮ মিনিটে। বাঁ দিক থেকে রোশনের সেন্টার বক্সের মধ্যে পড়ার আগেই জাভি বাঁ পায়ের ভলিতে গোলে মারলেন। বল একটা ড্রপ খেয়ে গোলে ঢুকে গেল। কিছু করার ছিল না কাইথের। এরকম একটা গোল দেখার জন্য বহু মাইল হেঁটে আসা যায়। গোলের গন্ধে মাইক হেসন এর পরে শিবশক্তিকে তুলে নিয়ে নামালেন তাঁর চতুর্থ বিদেশি দিয়েগো পেরেজকে। সামনে তখন দুই বিদেশি স্ট্রাইকার রয় কৃষ্ণ এবং দিয়েগো পেরেজ। এবং গোলের জন্য হারও মরিয়া বেঙ্গালুরু। এবং তারা দ্বিতীয় গোলটা পেয়েও গেল। ডান দিকে সুরেশের সেন্টার ঠিক মতো ফিস্ট করতে পারলেন না বিশাল। বল তাঁর হাতে লেগে গোলের জন্য ওৎ পেতে থাকা রয় কৃষ্ণের সামনে পড়ল। আলতো পুশে রয় গোল করলেন তাঁর পুরনো দলের বিরুদ্ধে। এবং তাদের মাঠেই। এই বেঙ্গালুরু দলে রয় কৃষ্ণ, সন্দেশ ঝিঙ্গন, প্রবীর দাসরা তো বাগানের প্রাক্তনী। জুয়ান ফেরান্দো তাদের দল থেকে বিদায় করেছেন। বছর শেষ হওয়ার আগেই কৃষ্ণরা তার বদলা ভালমতোই নিলেন।
৯১ মিনিটে ২-০ হয়ে যাওয়ার পর ম্যাচে আর কিছু থাকে না। দিমিত্রির গোলটা তাই খানিকটা সান্ত্বনা পুরস্কারের মতো। বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া তাঁর শট ডিফেন্ডার অ্যালান কোস্তার মাথায় লেগে গোলে ঢুকে যায়। গুরপ্রীতের কিছু করার ছিল না। তাঁর সামনে সন্দেশ ঝিঙ্গন যা খেলেছেন তাতে বেঙ্গালুরুর গোল খাওয়ার কথা নয়। তবু সব সময় তো ফুটবল অঙ্ক কষে চলে না। দুর্দান্ত গোল করার পর জাভি হার্নান্ডেজকে ছাড়া ম্যাচের সেরা অন্য কাউকে বাছা সম্ভব ছিল না। এই অঙ্কটা কিন্তু ঠিকই মিলে গেল।