গুয়াহাটি: বাল্যবিবাহ (Child Marriage) রুখতে অসম (Assam) সরকার সম্প্রতি কড়া পদক্ষেপ নিয়েছে। ঘরের মেয়েদের অল্পবয়সে বিয়ে দেওয়ার অভিযোগে, গত ১৫ দিনে ২০০০ জনকে গ্রেফতার করেছে অসম পুলিশ (Assam ploice)। এদিকে, স্বামী ও বাবাকে মুক্তির দাবিতে রবিবার পথে নেমেছেন রাজ্যের মহিলা ও নাবালিকারা। এদিন অসমের বিভিন্ন জায়গায় পুলিশ ফাঁড়ি ঘেরাও করে প্রতিবাদ দেখান নারী, মহিলা ও অল্পবয়সি মেয়েরা। এদিকে বাল্যবিবাহকে কেন্দ্র করে ব্যাপক পুলিশী ধরপাকড়ের ঘটনায় ইতিমধ্যে এক যুবতী তার বাবা-মাকে গ্রেফতার হওয়া থেকে বাঁচাতে আত্মঘাতী হয়েছেন। প্রতিবাদে নামা মহিলাদের বক্তব্য, তাঁদের বাবা ও স্বামীকে পুলিশ গ্রেফতার করলে, তাঁরাও আত্মহননের পথ বেছে নেবেন। প্রতিবাদ (Protest) বিক্ষোভ তুলতে পুলিশ মহিলাদের ওপর উপর লাঠিও চার্জ করেছে, যা নিয়ে অসম সরকারের সমালোচনা করেছে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ মহল। প্রতিবাদে সামিল হওয়া ৫৫ বছরের নিরোদা দোলে নামে এক মহিলা একটি সর্বভারতীয় সংবাদ সংস্থাকে জানান, বেছে বেছে শুধু ছেলেদের গ্রেফতার করা হচ্ছে কেন? এখন আমাদের সংসার কিভাবে চলবে?
মোনোওয়ারা খাতুন নামের এক মহিলা জানিয়েছেন, “আমার বউমার বয়স যখন ১৭ ছিল, তখন বিয়ে হয়েছিল। এখন তার বয়স ১৯ এবং সে অন্তঃসত্ত্বা। আমার ছেলেকে জেলে ভরলে বউমার দেখাশোনা কে করবে?”
উল্লেখ্য, সম্প্রতি একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, গোটা দেশের মধ্যে অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় অসমে বাল্যবিবাহের সংখ্যা অনেক বেশি। রাজ্যে প্রায় ৩১ শতাংশ মেয়েকে প্রাপ্তবয়ষ্ক হয়ে ওঠার আগেই বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়। তথ্য বলছে, অসমে ১৪ বছর বয়সে মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয় এবং ১৮ বছর হওয়ার আগেই সন্তানের জন্ম দেয় মেয়েরা। এর ফলে অসমে (Assam) মা ও নবজাতকের মৃত্যুর হার অনেক বেশি।
এই তথ্য প্রকাশ্যে আসার পরই অসমের মুখ্যমন্ত্রী (Assam Chief Minister) হিমন্ত বিশ্বশর্মা রাজ্যে বাল্যবিবাহ (Child Marriage) রুখতে কড়া পদক্ষেপ নিয়েছেন। রাজ্য পুলিশকে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেছেন, ব্যালবিবাহ বন্ধ করার জন্য পুলিশকে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অনুসরণ করার করতে হবে।
প্রসঙ্গত, রাজ্যে বাল্যবিবাহের সঙ্গে যুক্ত ৮ হাজার জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে, এর মধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে ২০০০ জনকে।
আরও পড়ুন : Sikkim Strike: ফের স্বাভাবিক ছন্দে ফিরছে সিকিম
কেন্দ্রে এই মুহূর্তে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন সরকার রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মোদি নিজেই বেটি পড়াও বেটি বাঁচাওয়ের স্লোগান দেন। অসম সেই বিজেপিরই সরকার রয়েছে। তা সত্ত্বেও গোটা দেশের নিরিখে অসম বাল্যবিহারের সূচকে শীর্ষে। বিরোধীরা বলছেন, হঠাৎ করে সমীক্ষা রিপোর্ট সামনে আসতেই মুখ্যমন্ত্রী বন্দোবস্ত নিয়েছেন। কেন এমনটা? হায়দরাবাদের সাংসদ ও এআইএমআইএম প্রধান আসাদউদ্দিন ওয়েইসি অসম সরকারের সমালোচনা করে বলেছেন, বিগত ৬ বছর ধরে অসমে বিজেপি রাজত্ব করছে। তারপরেও তারা বাল্যবিবাহ বন্ধ করতে পারেনি। এটা তাদের ব্যর্থতা। পাশাপাশি তিনি এই প্রশ্নও তুলেছেন – যে সব নাবালিকার ইতিমধ্যেই বিয়ে হয়ে গিয়েছে, সরকার তাদের জন্য কী ব্যবস্থা নেবে?
যদিও রবিবারর ঘটনার পরেও অসমের মুখ্যমন্ত্রীর তাঁর জায়গায় অনড়। তাঁর সাফ কথা, ১৪ বছরের ঊর্ধ্বে নাবালিকার বিয়ের সঙ্গে যুক্ত থাকার অপরাধে গ্রেফতার হলে জামিন মিললেও মিলতে পারে। তবে ১৪ বছরের নিচে নাবালিকার বিয়ের সঙ্গে যুক্ত কেউ গ্রেফতার হলে, জামিন মিলবে না। অসমে তিনি আর কোনও বাল্যবিবাহ হতে দেবেন না এবং ২০২৬ পর্যন্ত এই অভিযান চলবে।