ইমামি ইস্ট বেঙ্গল–১ মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট–০
ভিভিআইপি টিকিট বন্টন নিয়ে ডুরান্ড কমিটির সঙ্গে মনোমালিন্য হওয়ায় ইস্ট বেঙ্গল কর্তারা টিকিটও নেননি, সল্ট লেক স্টেডিয়ামেও যাননি। এটা দেখে মোহনবাগান সচিব দেবাশিস দত্ত বলেছিলেন, ইস্ট বেঙ্গল তো হারবে। তাই ভয়ে মাঠে যাবে না। শুধু মোহন সচিবই নন, শনিবারের ডুরান্ড ডার্বিতে ইস্ট বেঙ্গলকে পিছিয়ে রেখেছিলেন তাবড় বিশেষজ্ঞরা। এদের মধ্যে ছিলেন মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য, প্রশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়, শিশির ঘোষ কিংবা বাইচুং ভুটিয়ারা। এরা সবাই ময়দানের কিংবদন্তী। প্রচর ডার্বি খেলেছেন। জিতেছেন প্রচুর ম্যাচ। কিন্তু একটা ব্যাপার ওঁরা ভুলে গিয়েছিলেন খেলাটা হয় মাঠে। লেখার টেবিলে নয়। আর অতীতে বহু বার দেখা গেছে ডার্বিতে আন্ডারডগ টিম ফেভারিটকে আপসেট করে দিয়েছে। শনিবার ছিল সে রকমই একটা দিন। হট ফেভারিট মোহনবাগানকে দাপিয়ে খেলে হারিয়ে দিল ইস্ট বেঙ্গল। এবারের মোহনবাগান সত্যিই সুপার জায়ান্ট। ফাটিয়ে টিম করেছেন সঞ্জীব গোয়েঙ্কা। যা প্লেয়ার তাতে অনায়াসে দুটো টিম করা যায়। এতটাই যে গতবারের আই এল চ্যাম্পিয়ন টিমের হিরো দিমিত্রি পেত্রাতোস এবং অস্ট্রেলিয়ান বিশ্ব কাপার জেসন কামিংসকে নামাতে হল ৫৫ মিনিটে। তাতে অবশ্য হার এড়াতে পারলেন না জুয়ান ফেরান্দো। সংখ্যার বিচারে টানা আটটি ডার্বি হারের পর নয় নম্বর ডার্বিতে জিতে শাপমুক্তি হল ইস্ট বেঙ্গলের। দিনের বিচারে সাড়ে চার বছর পরে। শেষ জয় ছিল ২০১৯ সালের ২৭ জানুয়ারি আই লিগে।
ইস্ট বেঙ্গলের নতুন কোচ কার্লোস কুয়াদ্রেত সবে দায়িত্ব নিয়েছেন। টিমটা এখনও সেভাবে দানা বাঁধেনি। গত বারের প্লেয়ারদের মধ্যে শুধু ডিফেন্ডার চুংনুঙ্গা, নাওরম মহেশ সিং, শৌভিক চক্রবর্তীরা আছেন। বাকি নয়জনই নতুন। চার বিদেশি এই প্রথম ডার্বি খেললেন। খুব যে আহামরি খেললেন তা নয়। তবে প্রশংসা করতে হবে সেন্টার ব্যাক জর্ডন এলসে-র। এই অজি ডিফেন্ডার নড়তে দেননি হুগো বুমো, সাদিকু কিংবা তাঁর স্বদেশীয় দিমিত্রি কিংবা জেসন কামিংসকে। তাঁর পাশে সজাগ এবং সতর্ক ছিলেন চুংনুঙ্গা। তবে মোহনবাগান আক্রমণ যে সেভাবে ফণা তুলতে পারল না এর জন্য সাবাস বলতে হয় দুই সাইড ব্যাক হরমোহনজ্যোত খাবড়া এবং মন্দার রাও দেশাইকে। সেই ২০০৯ সালে গোয়া থেকে খাবড়া এসেছিলেন ইস্ট বেঙ্গলে। তাঁকে এনেছিলেন সেবারের কোচ সুভাষ ভৌমিক। তার পর চলে গেছে চোদ্দ বছর। খাবড়া ইস্ট বেঙ্গল ছেড়ে আই এস এল-এ চলে গিয়েছিলেন। তার পর আবার এ বছর নিজের দলে। এদিন তাঁর হাতে ছিল অধিনায়কের আর্ম ব্যান্ড। খেললেনও ভাল। লিস্টনকে একেবারে বোতল বন্দী করে ফেললেন। বাঁ দিকে লিস্টনের চমৎকার সেন্টারগুলো এদিন করতেই দেননি খাবড়া। ডান দিকে মনবীরকে নড়তে দেননি গোয়ান মন্দার রাও দেশাই। ডানা দুটো ঝাপ্টাতে পারল না বাগান। মাঝখানের সাদিকু তাই লাট খাওয়া ঘুড়ির মতো ঘুরে বেড়ালেন। তাঁদের দিকে সাহায্যের পা এগিয়ে দিতে দেখা গেল না অনিরুদ্ধ থাপা কিংবা গ্লেন মার্টিন্সকে। মাঝে ছিলেন হুগো বুমো। তিনিও তো নড়তে পারলেন না। মোহনবাগানের গোল আসবে কী করে ?
গোল না করলে ম্যাচ জেতা যায় না। তাই নন্দ কুমার গোল করে ম্যাচের নায়ক। ওড়িশার এই ছেলেটা এই মরসুমেই প্রথম এসেছেন ইস্ট বেঙ্গলে। প্রথম ডার্বিতেই গোল করে লাল হলুদ জনতাকে আনন্দ দিলেন নন্দ কুমার। ৬০ মিনিটের মাথায় আনোয়ার আলির একটা ক্লিয়ারেন্স ধরে সল ক্রেসপো বল বাড়ালেন ডান দিকে। উইং ধরে তখন ছুটছেন নন্দ। তাঁর সামনে অনিরুদ্ধ থাপা। নন্দ বলটা ধরে অনিরুদ্ধকে একটা ড্রিবল করলেন। এবার বক্সের মধ্যে ঢুকে বাঁ পায়ে একটা উঁচু শট। বল বিশাল কাইথকে এড়িয়ে দ্বিতীয় পোস্টের কোণ দিয়ে গোলে ঢুকে গেল। এ রকম একটা গোল দেখতেই তো জনতা মাঠে যান। এর পর মোহনবাগান যতই চেষ্টা করুক লাল হলুদ ডিফেন্সকে টলাতে পারেনি। আগেই বলেছি জর্ডন এলসে এবং চুংনুঙ্গা তাঁদের ডিফেন্সকে নিচ্ছ্রিদ্র করে রেখেছিলেন। এঁদের পিছনে ছিলেন প্রভুসুখন গিল। কেরালা ব্লাস্টার্সের এই গোলকিপারটাকে অনেক টাকা দিয়ে নিয়ে এসেছে ইস্ট বেঙ্গল। গত বছর গোলকিপারের ব্যর্থতায় প্রচুর গোল খেতে হয়েছে ইস্ট বেঙ্গলকে। প্রথম ডার্বিতে প্রভুসুখনকে তেন সমস্যায় ফেলতে পারেনি মোহনবাগান। তবে তাঁর দিকে যা বল গেছে প্রভু নিশ্চিন্তে ধরেছেন।
অতএব মরসুমের শুরুতেই শাপমুক্তি হয়ে গেল ইস্ট বেঙ্গলের। তবে ডুরান্ড জিততে পারলে এই জয়টার গুরুত্ব থাকবে। ডুরান্ড ঝয় এখনও অনেক দূর। মনে হচ্ছে, এবারের ইস্ট বেঙ্গল অনেক দূর যাবে। তাদের কোচ কুয়াদ্রেত যেভাবে নতুন টিম নিয়ে ডার্বি মাৎ করলেন তাতে এই কোচের উপর ভরসা রাখা যায়।