কলকাতা: ঘড়ির কাঁটা বলছে প্রেম দিবসের লগ্ন তখনও শুরু হয়নি। কিন্তু সোনারপুরের ‘এইচআইভি পজিটিভ’ যুগল দেখালেন প্রেমের অগ্নিপরীক্ষা। রঙিন আলোয়, অতিথি সমাগমে, শঙ্খধ্বনি, উলুধ্বনি, শুরু হল বৈদিক মন্ত্র পাঠ। বিয়ের লগ্ন পেরিয়ে যাওয়ার আগেই, ‘এইচআইভি পজিটিভ’ যুগলের বিয়ের দিলেন ‘শুভমস্তু’র নারী পুরোহিতরা। বাইরে থেকে আর পাঁচটা সাধারণ বিয়েবাড়ির মতোই দেখতে লাগলেও, বাস্তবে তা বেশ খানিকটা আলাদা বা বলা চলে বিশেষ। জীবন লড়াইয়ের মাঝেই গাঁটছড়া বাঁধলেন দুটি মনের মানুষ। ভালোবাসা দিবসের প্রাক মুহূর্তে সমাজকে ভালোবাসার বেনজির দৃশ্য উপহার দিলেন এইচআইভিতে আক্রান্তরা।
দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার সোনারপুরের গোবিন্দপুরে ‘আনন্দ ঘর’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন এইচআইভি পজিটিভ শিশুদের নিয়ে। যে সমস্ত পিতা-মাতা এইচআইভিতে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তাদের বাচ্চাদেরকে এই হোমে রেখে বড় করা হয়। সেরকমভাবেই এই হোমে উপস্থিত হয়েছিল মেদিনীপুরের এইচআইভি পজিটিভ বিয়ের কনে। ছোটবেলা থেকেই বাবা-মাকে হারিয়ে এই হোম থেকেই পড়াশোনা করে সে। ‘আনন্দঘর’ হোম তাকে শৈশব থেকে কৈশোরে এবং যৌবনে পা রাখতে সাহায্য করেছে। বর্তমানে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে সে ‘ক্যাফে পজিটিভ’ নামে একটি কফি শপে কর্মরতা। কিন্তু প্রতিমাসে তাকে মেডিকেল কলেজে যেতে হয় অ্যান্টি রেট্রোভাইরাল ভাইরাল থেরাপি চিকিৎসা নিতে। সেখানেই আলাপ হয় উত্তর ২৪ পরগনার সন্দেশখালির যুবকের সাথে। তিনিও এইচআইভি পজিটিভ। ছোটবেলায় বিড়ালের কামড়ের ইনজেকশন নিতে গিয়ে সিরিঞ্জ থেকে আক্রান্ত হন এইচআইভি পজিটিভে। তাঁদের প্রথম দেখাতেই মন দেওয়া নেওয়া। ঈশ্বর হয়তো চেয়েছিলেন তাদের এই সম্পর্কের পরিণতি পাক। আর সেই সম্পর্ক গড়ালো বিয়েতে। রবিবার সন্ধ্যায় সেই শুভক্ষণ হলো সম্পন্ন।
আরও পড়ুনDelhi Incident: ফের শ্রদ্ধা-কাণ্ডের ছায়া দিল্লিতে, ফ্রিজ থেকে উদ্ধার তরুণীর দেহ
স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার পক্ষে মৃণাল বিশ্বাস বলেন, সঠিক চিকিৎসা পদ্ধতি পেলে দুজন এইচআইভি পজিটিভ পিতামাতার থেকেও সুস্থ সন্তান পাওয়া সম্ভব। আমরা চাই সমাজের প্রত্যেকটা মানুষ এগিয়ে এসে এইচআইভি পজিটিভ শিশুদের দায়িত্ব গ্রহণ করুক। তার কারণ যে শিশুরা এইচআইভি পজিটিভ হয়েছে তারা তাদের জন্য হয়নি তারা শুধুমাত্র এই রোগ কে বহন করে চলেছে কিছু মানুষের ভুলের জন্য।