ভারত–১ মায়নামার–০
(অনিরুদ্ধ থাপা)
ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচে ভারত হারিয়ে দিল মায়ানমারকে। বুধবার ইম্ফলের খুলাম লাম্পোক স্টেডিয়ামে ভারতের হয়ে ম্যাচের ৪৬ মিনিটে একমাত্র গোলটি করেন মিডফিল্ডার অনিরুদ্ধ থাপা। ম্যাচে ভারত গোল করার অনেক সুযোগ পেয়েছিল। কিন্তু সুনীল ছেত্রীরা গোল করার সহজ সুযোগগুলো নষ্ট করায় ভারত আর গোল করতে পারেনি। উল্টো দিকে মায়ানমার বেশ কয়েকবার গোল করার পরিস্থিতি তৈরি করেও গোল করতে পারেনি। ভারতের দীর্ঘকায় গোলকিপার অমরিন্দর সিং তাদের সামনে বাধার প্রাচীর হয়ে দাঁড়ান। টুর্নামেন্টের তৃতীয় দল হল কিরঘিস্থান। ভারতের সেই ম্যাচ ২৮ মার্চ। তার আগে মায়ানমার আর কিরঘিস্থান খেলবে ২৫ মার্চ।
ভারতীয় ফুটবলে বহ দিন ধরেই সাপ্লাই লাইন হল মণিপুর। সেই ১৯৮৯ সালে কিরণ খোঙ্গসাইকে দিয়ে শুরু। তার পর থেকে অন্তত ৭০জন মণিপুরী ফুটবলার দেশের জার্সি গায়ে খেলেছেন। কিন্তু এই রাজ্যে কখনও আন্তর্জাতিক ম্যাচ হয়নি। যদিও আই লিগের ম্যাচ হয়েছে। সন্তোষ ট্রফির ম্যাচ হয়েছে। এমনকি গত বছর ডুরান্ড কাপও হয়েছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক ম্যাচ এই প্রথম হল। এই জন্য মুখ্যমন্ত্রী বীরেন্দ্র সিংয়ের বড় ভূমিকা আছে। এদিন তিনি সারাক্ষণই সপার্ষদ বসেছিলেন ভি আই পি গ্যালারিতে। ৩৫ হাজারের স্টেডিয়াম ছিল কাণায় কাণায় পূর্ণ। তবে মাত্র চার দিন আগে আই এস এল শেষ হওয়ায় ভারতের কোচ ইগর স্টিমাক প্রথম একাদশে ফাইনালে খেলা দুই টিমের মধ্যে শুধু সুনীল ছেত্রীকে রেখেছিলেন। সুনীল ৯০ মিনিটই মাঠে ছিলেন। তাঁর সামনে গোল করার সুযোগও এসেছিল। কিন্তু তিনি সেগুলো কাজে লাগাতে পারেননি। বাকি যাঁরা টিমে ছিলেন সবই জাতীয় তারকা। গোলে অমরিন্দর। চার ব্যাক হলেন রাহুল বেকে, চিঙ্গলসানা, মেহতাব সিং এবং আকাশ মিশ্র। তিন মিডফিল্ডার হলেন অনিরুদ্ধ থাপা, জিকসন সিং এবং মহম্মদ ইয়াসির। ফরোয়ার্ডে সুনীলের দু পাশে ছাংতে এবং বিপিন সিং।
মায়নামার এক সময় এশিয়ার বড় শক্তি ছিল। তখন তাদের নাম ছিল বার্মা। ১৯৭১ সালে মারডেকা টুর্নামেন্টে তারা ভারতকে ৯-১ গোলে হারিয়েছিল। এখন তাদের সেই দিন নেই। ফিফা র্যাংকিংয়ে তারা এখন ১৫৯। ভারত ১০৬। তাই শুরু থেকেই নিজেদের মাঠে ভারত দাপিয়ে খেলতে শুরু করে। প্রথম দিকে ভারতের দাপটে মায়নামার একটু গুটিয়েই ছিল। কিন্তু মিনিট দশেক পর থেকে তারা ম্যাচে ফেরে। খাটো চেহারার ফুটবলাররা নিজেদের মধ্যে প্রচুর পাস খেলে এবং দৌড়ে ভারতকে পাল্টা টক্কর দিতে শুরু করে। দু পক্ষই গোলের সামনে চলে যাচ্ছিল বার বার। কিন্তু ভারতীয়রা যে রকম ছয় গজের মধ্যে ঢুকে গোল করার পরিস্থিতি তৈরি করেছিল, মায়ানমার তা পারেনি। তাদের দূর পাল্লার শটগুলি অমরিন্দরকে টলাতে পারেনি। ২০১৯-এর পর অমরিন্দর এই প্রথম দেশের জার্সি পরে নামলেন। ভালই খেললেন ওড়িশা এফ সি-র গোলকিপার। ভারতের আক্রমণে বাঁ দিক থেকে বিপিন সিং এবং ডান দিক থেকে ওভারল্যাপে যাওয়া রাহুল বেকে খুবই ভাল খেলেন। ভারতের গোলটি বিরতির ঠিক আগে। ডান দিক থেকে রাহুল ভেকের সেন্টার ক্লিয়ার করতে গিয়ে মায়ানমার ডিফেন্ডারের বুকে লেগে বল যায় অনিরুদ্ধ থাপার কাছে। খুব কাছাকাছি ছিলেন তিনি। চকিতেই শট নিয়ে গোল করেন।
বিরতির পর ভারতের আক্রমণ অব্যাহত ছিল। সুনীল ছেত্রী একবার বল গোলে ঠেলেনও। কিন্তু অফ সাইডের অজুহাতে তা বাতিল হয়। শেষ দিকে স্টিমাক বেশ কয়েকটা পরিবর্তন করেন। মাঠে আসেন মনবীর সিং, সুরেশ, নাওরম মহেশ সিং-রা। শেষ দিকে বঙ্গসন্তান ঋত্বিক দাসও মিনিট তিনেক আগে মাঠে নামেন। কিন্তু কিছু করতে পারেননি। এই নিয়ে স্টিমাকের কোচিংয়ে ভারত পর পর চারটে ম্যাচ জিতল।