আমেদাবাদ: চলতি বর্ডার-গাভাসকর ট্রফিতে (Border-Gavaskar Trophy) সবথেকে বেশি আলোচনার বিষয়বস্তু কী? ১০০ জনের মধ্যে ৯৯ জন বলে দেবেন— পিচ। হ্যাঁ, নাগপুরে (Nagpur) প্রথম টেস্টে ছিল র্যাঙ্ক টার্নার, দিল্লিতে (Delhi) দ্বিতীয় টেস্টে প্রায় সেরকমই। ইন্দোরে (Indore) তৃতীয় টেস্টের পিচ নিয়ে তো অন্যমাত্রার বিতর্ক হয়েছে। প্রথম দিন থেকে বল একহাত ঘুরেছে। আরও বিপজ্জনক ব্যাপার বাউন্স ছিল ভয়ঙ্কর অসমান, কোনও বল বুকে উঠে এসেছে তো কোনওটা গোড়ালিতে গিয়ে লেগেছে। প্রথম দু’ দিনে পড়েছে ৩০ উইকেট। প্রথম তিনটে টেস্টেই খেলা শেষ হয়ে গিয়েছে আড়াই থেকে তিন দিনের মধ্যে।
শুধু কি এই সিরিজ? সাম্প্রতিক অতীতেও ভারতের মাটিতে যত টেস্ট ম্যাচ হয়েছে, তাতে ঘূর্ণি পিচই বানিয়েছিল বিসিসিআই (BCCI)। ভদ্রস্থ স্কোর খাড়া করে অশ্বিন-জাদেজাদের (Ashwin-Jadeja) লেলিয়ে দাও, এই ছিল সহজ গেম-প্ল্যান, এবং তাতে যথেষ্ট সফল ভারতীয় দল। কিন্তু হঠাৎ করেই ভোলবদল হয়ে গিয়েছে আমেদাবাদে (Ahmedabad)। নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামের (Narendra Modi Stadium) পিচ একেবারেই ব্যাটিং সহায়ক। খেলা তিন দিনে গড়িয়েছে, এখনও বল আহামরি স্পিন করছে না। বিপজ্জনক বাউন্সও নেই। এত বছরের রণকৌশল হঠাৎ কেন বদলাল ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড? তাহলে কি ইন্দোর টেস্টে শোচনীয় হারে ভয় ধরেছে? নাকি, ইন্দোরের পিচকে আইসিসি (ICC) ‘খারাপ’ হিসেবে দাগিয়ে দেওয়ায় চাপে পড়েছে বিসিসিআই?
উত্তর: এর কোনওটাই না। ইন্দোর ম্যাচে হারের পর যথেষ্ট জোর দিয়ে অধিনায়ক রোহিত শর্মা (Rohit Sharma) বলেছিলেন, এ ধরনের পিচে খেলা টিম ম্যানেজমেন্টের মিলিত সিদ্ধান্ত। রোহিত বলেন, আমাদের শক্তি স্পিন, তাই আমরা এমন পিচে খেলতে চেয়েছি। প্রত্যেক দেশ নিজের পছন্দ অনুযায়ী পিচ বানায়, আমরাও বানিয়েছি। এতে অন্যায়ের কিছু নেই। তার মানে অস্ট্রেলিয়ার কাছে এক টেস্ট হেরে ভয় পাওয়ার যুক্তি ধোপে টিঁকছে না। টিঁকছে না আইসিসির ডিমেরিট পয়েন্ট নিয়ে বিসিসিআইয়ের চাপে পড়াও। এই মুহূর্তে ভারতীয় বোর্ড যা শক্তিশালী তাতে আইসিসি উল্টে ভারতের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকে। এ নিয়ে পাকিস্তান, বাংলাদেশকে একাধিকবার উষ্মা প্রকাশ করতেও দেখা গিয়েছে।
আরও পড়ুন: Border-Gavaskar Trophy | সেঞ্চুরির পথে শুভমান, ভারতের ইনিংস এগোচ্ছে তরতর করে
তাহলে আচমকা এমন ব্যাটিং পিচ বানানোর রহস্য কী?
সম্ভবত এক ঢিলে দুই পাখি মারতে চেয়েছে বিসিসিআই এবং ভারতীয় দল। কিংবা বলা চলে ‘সেফ গেম’ খেলতে চেয়েছে।
ইন্দোরে হারের পর এই সিরিজে ২-১ এগিয়ে ভারত। আমেদাবাদে হারলে সিরিজ ড্র হয়ে যাবে। ভারতের মাটিতে সেনার (সাউথ আফ্রিকা-ইংল্যান্ড-নিউজিল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া) দেশ সিরিজ ড্র করে গেলে ভয়ঙ্কর মুখ পুড়বে রোহিত-কোহলিদের। এর সঙ্গে রয়েছে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ (WTC) ফাইনালে ওঠার সমীকরণ। অস্ট্রেলিয়া আগেই পৌঁছে গিয়েছে। ভারতের উঠতে চাই একটা ড্র। ভারত যদি আমেদাবাদে হারে সেক্ষেত্রে অন্য গল্প। শ্রীলঙ্কা যদি নিউজিল্যান্ডকে ২-০ ফলে টেস্ট সিরিজ হারায় তবে তারাই ফাইনালে উঠবে। কিন্তু সেই সম্ভাবনার গোঁড়াতেই বিষ ঢেলে দিতে চায় ভারত।
মোদ্দা কথাটা হল, আমেদাবাদ টেস্ট ড্র হলে ভারতের সাপও মরবে লাঠিও ভাঙবে না। অর্থাৎ বর্ডার-গাভাসকর ট্রফিও জেতা হবে আবার টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালেও ওঠা হবে। চলতি টেস্টের যা গতিপ্রকৃতি, খেলা ড্রয়ের দিকেই এগোচ্ছে। প্রায় দু’ দিনে ৪৮০ করেছে অস্ট্রেলিয়া। ভারতও একই গতিতে এগোচ্ছে। দুই ইনিংস শেষ হতেই যদি চারদিন শেষ হয়ে যায় তাহলে ড্র ছাড়া আর উপায় থাকে না।