বুধবার দিনভর অদ্ভুত রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সাক্ষী থাকল শহর কলকাতা। শাসক থেকে শুরু করে একাধিক বিরোধী দল, একাধিক সংগঠনের মিটিং, মিছিল, ধরনা, সমাবেশ, অবস্থানের ককটেলে (Cocktail) সাধারণ মানুষের প্রায় নাভিশ্বাস ওঠার জোগাড় হয়েছিল এদিন। এক এক দলের এক এক রকম দাবি (Demand)। সেই দাবিতে সবাই রাস্তায়। স্মরণকালের মধ্যে এতগুলি রাজনৈতিক দলের কর্মকাণ্ড শহরের বুকে দেখা যায়নি। মঙ্গলবারই এ ব্যাপারে প্রশ্ন তুলেছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা (Justice Rajasekhar Mantha)। তিনি কলকাতার পুলিশ কমিশনারের উদ্দেশে জানতে চেয়েছিলেন, কেন পুলিশ একই জায়গায় একাধিক দল বা সংগঠনকে সমাবেশ করার অনুমতি দেয়। মিছিল, মিটিং, সমাবেশের জন্য বুধবার দিনভর জনজীবন ব্যাহত হল। যানজটে (Trafic Jam) জেরবার হতে হল হাজার হাজার মানুষকে।
রাজ্যের প্রতি কেন্দ্রের বঞ্চনার বিরুদ্ধে রেড রোডে বি আর আম্বেদকরের মূর্তির সামনে এদিন বেলা ১২টা থেকে ৩০ঘণ্টার জন্য ধরনায় বসেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Chief Minister Mamata Banerjee)। অদূরেই শহীদ মিনার ময়দান এলাকায় একই ইস্যুতে সমাবেশ ছিল তৃণমূল ছাত্র ও যুব সংগঠনের। সেই সমাবেশে মূল বক্তা ছিলেন শাসকদলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)। সেই সমাবেশের জন্য ছোট বড় একাধিক মিছিল আসে ময়দানে। বাস, লরি করেও বহু তৃণমূল সমর্থক আসেন। সেই মিছিলের জন্য ব্যাপক যানজট হয় শহরের বিভিন্ন এলাকায়। সংমাবেশে ভিড়ও ছিল চোখে পড়ার মতো।
আরও পড়ুন:Police Accused In Torture | চাকরি দেওয়ার নামে টাকা হাতানো ও মারধরে অভিযুক্ত একাধিক পুলিশ অফিসার
তৃণমূলের ছাত্র-যুব সমাবেশস্থলের গা ঘেঁযেই চলে বকেয়া ডিএর দাবিতে সরকারি কর্মীদের অবস্থান। দুই কর্মসূচিকে পৃথক করার জন্য মাঝে টিনের প্রাচীর তৈরি করেছিল পুলিশ।
প্রায় একই সময়ে নিয়োগ দুর্নীতির প্রতিবাদে এবং রাজ্যের বকেয়া মেটানোর দাবিতে শহরের বুকে মহামিছিল করে বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেস। সাগরদিঘি বিধানসভার উপনির্বাচনে জয়ের পর বাম-কংগ্রেসের বাঁধন আরও দৃঢ় হয়েছে। মৌলালির কাছে রামলীলা ময়দান থেকে বাম-কংগ্রেসের যৌথ মিছিল শুরু হয়। সেই দীর্ঘ মিছিল যায় এপিসি রোড, মল্লিকবাজার হয়ে পার্ক সার্কাসে। সেই মিছিলেও লোক সমাগম হয়েছিল বিস্তর। তারই মধ্যে ময়দানে গান্ধীমূর্তির পাদদেশে অবস্থান চালান চাকরিপ্রার্থীরা। কেন্দ্রের টাকা লুঠের প্রতিবাদে শ্যামবাজার পাঁচমাথায় ধরনায় বসে বিজেপি। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, রাজ্য বিজেপির সভাপতি শুভেন্দু অধিকারী-সহ দলের অনেক শীর্ষ নেতাই হাজির ছিলেন সেই ধরনায়। সেখানেও লোক জমায়েত হয়েছিল ভালোই।
এই বিভিন্ন কর্মসূচির ককটেলের জেরে এদিন দীর্ঘ সময় যান চলাচল কার্যত থমকে ছিল। মানুষের গন্তব্যে পৌঁছতে রীতিমতো বেগ পেতে হয়েছে। মঙ্গলবার কোনও কোনও রাজনৈতিক নেতা আশঙ্কা করেছিলেন, এদিন গোলমাল হতে পারে। গোলমাল না হওয়ায় স্বস্তি পেয়েছে পুলিশ। সামান্য গোলমাল হলে তার রেশ অনেক দূর পর্যন্ত যেত। সেরকম কিছু না ঘটায় পুলিশকে বাহবা দিতেই হয়। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতেই দেয়নি। তার থেকেও বড় কৃতিত্ব প্রাপ্য রাজনৈতিক দলগুলির, যারা এদিন দলে দলে পেথে নেমেছিলেন।