নয়াদিল্লি ও কলকাতা: তৃণমূলের (TMC) সঙ্গে রাজ্য কংগ্রসের (State Congress) বনিবনা না থাকলেও দলের শীর্ষ নেতৃত্ব (Congress High Command) রাজ্যের শাসকদলকে ভারত জোড়ো যাত্রার (Bharat Jodo Yatra) সমাপ্তিতে যোগ দেওয়ার জন্য চিঠি দিল। খোদ কংগ্রেস সভাপতি (Congress President) মল্লিকার্জুন খাড়্গে (Mallikarjun Kharge) ব্যক্তিগতভাবে তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(TMC Supremo-Mamata Banerjee)-সহ অনেক বিরোধী নেতা-নেত্রীকেই চিঠি দিয়ে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। তৃণমূল রাহুল গান্ধীর (Rahul Gandhi) ভারত জোড়ো যাত্রায় যোগ দেবে কি না, তা সরকারিভাবে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত জানা যায়নি। তবে দলের শীর্ষ সূত্রের খবর, তারা এই আমন্ত্রণ পেলেও যাত্রার সমাপ্তিতে শামিল হবে না। প্রসঙ্গত, আগামী ৩০ জানুয়ারি শ্রীনগরে(Srinagar) ভারত জোড়ো যাত্রার সমাপ্তি হবে।
এদিন দলের মুখপাত্র শান্তনু সেন(TMC spokesperson) জানিয়েছেন, এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Trinamool Congress national general secretary Abhishek Banerjee )। তবে শান্তনু এই যাত্রাকে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি। তিনি বলেন, কংগ্রেস আগে নিজেদের দলটাকে জোড়া লাগাক। কপিল সিব্বল (Kapil Sibal), গুলাম নবি আজাদের (Ghulam Nabi Azad) মতো শীর্ষ নেতারা (Senior leders) কেন কংগ্রেস ছাড়লেন, কেন মধ্যপ্রদেশ(Madhya Pradesh), গোয়ার (Goa) কংগ্রেস বিধায়করা বিজেপিতে(BJP) যোগ দিলেন, তার বিশ্লেষণ করুন কংগ্রেস নেতারা। নাম না করে রাহুলকে (Rahul Gandhi) খোঁচা দিয়ে তৃণমূল মুখপাত্র আরও বলেন, এতটা পথ হেঁটে কংগ্রেস নেতা অসুস্থ হয়ে যেন আবার বিদেশে না চলে যান, সেটা দেখা উচিত। তাঁর মতে, এটা অন্য একটা রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি। তা নিয়ে আমার কিছু বলার নেই।
আরও পড়ুন: Delhi AAP: কেজরিওয়ালের পার্টিকে ১৬৩ কোটি টাকা জরিমানা করল তাঁরই সরকার!
তবে দলের জাতীয় মুখপাত্র সুখেন্দু শেখর (TMC National spokesperson Sukhendu Shekhar Roy) রায় বলেন, শেষ পর্যন্ত কংগ্রেস যে রাস্তায় নেমেছে, তা তাদের পক্ষে ইতিবাচক বিষয়। এর আগে রাহুল গান্ধী সব তৃণমূল সাংসদকে চিঠি দিয়ে ভারত জোড়ো যাত্রায় শামিল হওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু তৃণমূলের কেউ তাতে যোগ দেননি। এনসিপি(NCP), উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনা(Uddhav Thakre-Shiv Sena) , ডিএমকের (DMK) মতো অনেক বিরোধী দলের নেতানেত্রী বিভিন্ন রাজ্যে রাহুলের যাত্রায় যোগ দিয়েছেন।
আবার বিএসপির মায়াবতী(Mayawati- BSP) , সমাজবাদী পার্টির অখিলেশ সিং যাদবরা (Akhilesh Singh Yadav- Samajbadi Party) যোগ দেননি। তবে তাঁরা যাত্রার সাফল্য কামনা করেন। তৃণমূল তাও করেনি। তৃণমূল সাংসদদের রাহুলের চিঠি দেওয়া নিয়ে মমতার দলের বক্তব্য ছিল, চিঠি আসা উচিত ছিল দলের সভাপতির কাছ থেকে। কারণ রাহুল সংসদীয় দলের নেতা কিংবা সভাপতি নন। এতেই তাদের গোঁসা হয়। এবার চিঠি দিয়েছেন কংগ্রেস সভাপতি। সিপিএম(CPM)-সহ বিভিন্ন বাম দল ছাড়াও আরজেডি(RJD), জেডিইউ(JDU) প্রভৃতি অনেক দলের নেতাকেই আমন্ত্রণ করেছেন তিনি। তবে কংগ্রেস যে সব দলকে বিজেপির বি টিম বলে আখ্যা দিয়ে থাকে, সেই আপ(AAP), জেডিএস(JDS), অকালি দলকে (Akali Dal) আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।
তৃণমূল জাতীয় স্তরে বিরোধী জোটের প্রধান হিসেবে কংগ্রেসকে মেনে নিতে রাজি নয়। তৃণমূলের দাবি, বিজেপি বিরোধী হিসেবে প্রধান শক্তি তারাই। সংসদের (Parliament) ভিতরেও বিভিন্ন সময়ে তৃণমূল কংগ্রেসের নেতৃত্ব মানতে চায়নি। তাই মল্লিকার্জুনের ডাকা বিরোধী দলগুলির সভায় তৃণমূল অধিকাংশ সময়ে যোগ দেয় না। সংসদের শীতকালীন অধিবেশনেও তা দেখা গিয়েছে। রাজ্য কংগ্রেসের সঙ্গে সম্পর্ক তলানিতে ঠেকলেও দলের সভাপতি হিসেবে মল্লিকার্জুন তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেত্রী মমতাকে চিঠি দিয়ে বার্তা দিতে চেয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে। রাজ্য কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, খোদ কংগ্রে্স সভাপতি আমন্ত্রণ করেছেন। আসবে কি না, সেটা তাদের ব্যাপার।
এদিকে ভারত জোড়ো যাত্রাকে ফের কটাক্ষ করেছেন রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য (BJP State spokesperson Shamik Bhattacharjee)। তিনি বলেন, যে দলটার জন্য ভারত টুকরো টুকরো হয়েছে, সেই কংগ্রেস ভারত জোড়োর ডাক দিয়েছে। এর চেয়ে বড় রসিকতা আর কী হতে পারে।