কলকাতা: প্রতিবছরের মতো এই বছরও আজ ছট পুজোর সূচনায় দইঘাট ও তক্তাঘাটে যাবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (CM Mamata Banerjee)। আজ, রবিবার এবং আগামিকাল সোমবার ভোরে ছটপুজো হবে। ছটপুজো উপলক্ষে কলকাতা পুরসভা (KMC), পুলিশ (Kolkata Police) বিরাট সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে। ঘাটে ঘাটে বসানো হয়েছে পর্যাপ্ত আলো। রাখা হয়েছে ঘাট পরিষ্কার করার জন্য প্রচুর পুরকর্মী। শহরের দুই ফুসফুস রবীন্দ্র সরোবর ও সুভাষ সরোবরে ঢোকায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। দুই জায়গাতেই মোতায়েন করা ব্যাপক পুলিশ।
গতবছরও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছটপুজো উপলক্ষে গঙ্গার ঘাটে গিয়েছিলেন। সেখানে সংক্ষিপ্ত ভাষণে তিনি বলেছিলেন, আগে ছটপুজো উপলক্ষে রাজ্যে একদিন ছুটি থাকত। পরে তিনি জানতে পারেন ছট পুজো আসলে দুদিনের। তাই গতবছর থেকে দুই দিনের ছুটি ঘোষণা করে রাজ্য। মুখ্যমন্ত্রী ওই অনুষ্ঠানে বলেন, মহিলারা তো তিনদিন আগে ছটপুজো শুরু করে দেন। যেমন আমি। আমি শুধু চা খেয়েছি। আর কিছু খাইনি। কারণ কাল থেকে আমিও ছট পুজার ব্রত রেখেছি। মমতা বলেন, আমি সব ব্রত পালন করি। দুর্গাপুজো যেমন করি, কালীপুজোয় করি। রমজান মাসেও আসি। বড়দিনের প্রার্থনাতেও যাই।
আরও পড়ুন: South Korea Stampede: দক্ষিণ কোরিয়ায় ‘হ্যালোউইন’ উৎসবে পদপিষ্ট হয়ে দেড় শতাধিক মানুষের মৃত্যু
সংস্কৃত শব্দ ছটের অর্থ হল ষষ্ঠ। দেবী ষষ্ঠীর আরাধানা। চার দিনের এই পুজো আসলে সূর্যষষ্ঠী পালন। অনেকে একে বলে প্রতিহারষষ্ঠী। সুদূর অতীত থেকে এই রীতি পালিত হয়। ঋগ্বেদেও সূর্য পুজো ও তাঁর স্ত্রী উষাদেবীর পুজোর প্রচলন ছিল। কথিত আছে, সূর্যদেব ও ছটদেবী ভাই ও বোন। সেই কারণে ছট পুজোয় সূর্যের আরাধনা অত্যন্ত গুরুত্ব পায়।
আবার পৌরাণিক কাহিনি অনুযায়ী ব্রহ্মার মানসপুত্রী দেবসেনার উৎপত্তি হয়েছিল সৃষ্টির মূল প্রবৃত্তির ষষ্ঠ অংশ থেকে। তিনি দেবী ষষ্ঠী। আর, তাঁর স্বামী মহাদেবের পুত্র কার্তিকের ছয়টি মুখ ছিল। তাই তাঁকে বলা হয় ষড়ানন। কখনও আবার বলা হয় দেবসেনাপতি। আবার কার্তিক দেবতাদেরও সেনাপতি ছিলেন বলে কথিত আছে। তাই কার্তিক সবদিক থেকেই দেবসেনাপতি। ছট তাই শুধু অবাঙালিদের পুজো নয়। বাংলাতেও কার্তিক আরাধনার পাশাপাশি দেবী ষষ্ঠীর আরাধনাও প্রচলিত। বাংলায় সূর্যষষ্ঠীকে বা ছটপুজোর ষষ্ঠীকে বলা হয় নাড়ীষষ্ঠী। অবাঙালিরা দেবী ষষ্ঠীকে বলেন ‘ছটি মাইয়া’।
ছটপুজো বা সূর্য আরাধনার রীতি ঋগ্বেদ পরবর্তী সময়েও ভারতে প্রচলিত ছিল। রামায়ণ অনুযায়ী, শ্রীরামচন্দ্র ছিলেন সূর্যবংশীয়। তিনি অযোধ্যার সিংহাসনে বসার আগে ছটপুজোর তিথিতেই সরযূ নদীতে স্নান করে সূর্যের উদ্দেশ্যে অর্ঘ্যদান করেছিলেন। আবার মহাভারতের মতে, পাণ্ডবরা বনবাসে প্রবল অন্নকষ্টে কাটাচ্ছিলেন। সেই সময় রাজপুরোহিত ধৌম্যের পরামর্শে যুধিষ্ঠির চার দিনের সূর্য আরাধনা করেছিলেন। সূর্যদেব সন্তুষ্ট হয়ে তাঁদের দিব্য পাত্র দিয়েছিলেন। দ্রৌপদীর খাওয়া শেষ না-হওয়া পর্যন্ত সেই পাত্রের খাবার ফুরিয়ে যেত না। রামায়ণ অনুযায়ী মহর্ষি মুদগল সীতাকে ছটব্রত সম্পর্কে জানিয়েছিলেন। তারপর সীতা ছয় দিন পর্যন্ত করেছিলেন সূর্য আরাধনা। শুধু তাই নয়, মহাভারত অনুযায়ী পাশা খেলায় পাণ্ডবরা পরাজিত হওয়ার পর দ্রৌপদী ছট ব্রত পালন করেছিলেন। তারপরই পাণ্ডবরা রাজ্য ফিরে পেয়েছিল।