Thursday, June 26, 2025
Homeচতুর্থ স্তম্ভFourth Pillar | সংবিধানের বদলে মনু সংহিতা চায় মোদি–শাহ, আরএসএস–বিজেপি  

Fourth Pillar | সংবিধানের বদলে মনু সংহিতা চায় মোদি–শাহ, আরএসএস–বিজেপি  

Follow Us :

স্বাধীনতার ইতিহাসে আরএসএস ছিল না, এই সংগঠন স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ নেয়নি। এই ভাবধারার রাজনৈতিক সংগঠন হিন্দু মহাসভা গান্ধী-হত্যার সঙ্গে সরাসরি জড়িত, এই সংগঠন দেশের সংবিধানকে মেনে নেয়নি, দেশের জাতীয় পতাকাকেও মেনে নেয়নি। কিন্তু তাদের সর্বাত্মক বিরোধিতার পরেও দেশ স্বাধীন হয়েছে, আমাদের নিজেদের সংবিধান তৈরি হয়েছে, ত্রিবর্ণ পতাকা হয়েছে আমাদের জাতীয় পতাকা। স্বাধীনতার সেই প্রথম দিন থেকেই আরএসএস, হিন্দু মহাসভা, যার নেতারা পরে জনসঙ্ঘ তৈরি করেন এবং শেষে সেই নেতারাই তৈরি করেন বিজেপি। ওঁরা সেই শুরুর দিন থেকেই এক হিন্দুরাষ্ট্র চান, শুরুর থেকেই ভাগওয়া ঝান্ডা আর মনু সংহিতাই তাঁদের লক্ষ্য। আজ সেই লক্ষ্যের পথেই তাঁরা হাঁটছেন। এতদিন যা ছিল ইন্ডিয়ান পেনাল কোড, তা এখন ভারতের ন্যায় সংহিতা। আমরা যারা গণতন্ত্রের কথা বলি, বাক স্বাধীনতার কথা বলি তাঁরা সিডিশন ল নিয়ে, রাজদ্রোহ আইন নিয়ে সরব ছিলাম, যে কোনও বিরোধিতাকেই রাজদ্রোহ বলে চিহ্নিত করার চেষ্টা হচ্ছে। ইদানিং সরকার বিরোধিতার মনেই হয়ে দাঁড়াচ্ছিল দেশদ্রোহিতা, এবং সেই ধারায় গ্রেফতার করা হলে বছরের পর বছর বিচারাধীন হয়ে থাকা এবং শেষমেশ ৩ বছর থেকে যাবজ্জীবন জেলের সাজা। এবার এই নতুন ভারত সংহিতাতে এই আইনের বদল আনা হল। হ্যাঁ, এটা এখন আর রাজদ্রোহ নয়, এটা এখন দেশদ্রোহ, মানে আপনাকে গ্রেফতার করা হলেই লেখা হবে আপনি দেশদ্রোহের অপরাধে গ্রেফতার হয়েছেন। বহু রায় আছে যেখানে সুপ্রিম কোর্টও বলেছে যে কেবল নিছক বিরোধিতা বা কোনও নিষিদ্ধ রাজনৈতিক সংগঠনকে সমর্থন করার মানেই রাজদ্রোহ, এমনটা নয়। সত্যিই এমন কোনও পরিকল্পনা যা দেশের বিরুদ্ধে অস্ত্র নিয়ে ষড়যন্ত্রে নামা ইত্যাদিকেই সিডিশন বা রাজদ্রোহ হিসেবে মানা হবে। পঞ্জাবে কিছু খলিস্তান পন্থীদের সমর্থনে এক বক্তৃতাসভা থেকে কিছু মানুষকে গ্রেফতার করা হয়। সেই মামলাতে রায় দিতে গিয়ে সুপ্রিম কোর্টের বিচারকরা বলেছিলেন, এই মানুষজনের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহের অভিযোগ আনা যায় না, এঁরা প্রকাশ্যেই কিছু কথা বলছিলেন যা আপত্তিজনক হলেও কোনও ষড়যন্ত্র নয়, এমনকী এটা তাঁদের ফ্রিডম অফ স্পিচ, কথা বলার অধিকারও বটে। 

কিন্তু এবার নতুন আইনে কী বলা হচ্ছে? বলা বা লেখা বা কোনও চিহ্ন বহন করা বা ইউটিউব বা সোশ্যাল মিডিয়াতেও যদি দেশের বিরুদ্ধে কিছু বলা হয় তাহলে তা দেশদ্রোহ বলেই সাব্যস্ত হবে। শাস্তি বাড়িয়ে কম করে সাত বছর থেকে যাবজ্জীবন জেল। তার মানে আমাদের প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বা বিজেপির বহু নেতারা যাঁদেরকে দেশদ্রোহী বলেন, যে সমস্ত বিরোধিতাকে দেশদ্রোহ বলে চিহ্নিত করেন, তাহলে সেটাই দেশদ্রোহ, এবং তার শাস্তি জেলে পচে মরা। ধরুন আপনি বললেন, আমাদের ন্যায্য মূল্যে রেশন দিতে হবে না হলে আমরা হরতাল ডাকব, স্তব্ধ করে দেব রাস্তাঘাট, ট্রেন বাস ট্যাক্সি কিছুই চলবে না, ব্যাঙ্ক সরকারি অফিস চালাতে দেব না। এসব বলার জন্য আপনাকে নতুন ন্যায় সংহিতা অনুযায়ী দেশদ্রোহের অভিযোগে গ্রেফতার করা হবে। আপনি বললেন, দিল্লির সরকার আমাদের ১০০ দিনের কাজের টাকা দিচ্ছে না, আমরা দিল্লি যাব, মন্ত্রীর দফতর ঘেরাও করব, দিল্লি অবরোধ করব, আপনাকে দিল্লির জেলে পাঠানো হবে, অভিযোগ দেশদ্রোহিতা, রাষ্ট্রদ্রোহিতা। এই হচ্ছে নতুন আইন, এসব স্বৈরাচারী আইন ইত্যাদি ইন্দিরা গান্ধী এনেছিলেন, তার আগে হিটলার এনেছিল, মুসোলিনি এনেছিল, ইতিহাসে তারা কেউ টেকেনি। বিজেপি সরকার আনছে, তারা মনে করছে এই আইন দিয়েই শাসন করা যাবে, বিরোধিতা ঠেকিয়ে দেওয়া যাবে, কিন্তু ইতিহাস তাকে সমর্থন করে না। কিন্তু ওই ইন্দিরা গান্ধীর সময়েই সুপ্রিম কোর্ট এক ঐতিহসিক রায় দেয়। কেশবানন্দ ভারতী বনাম রাষ্ট্রের মামলায় কেশবানন্দ ভারতী এক মঠের প্রধান, তাঁর জমি, মানে মঠের জমি নিয়ে নেওয়ার বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন। কেরল সরকার তাদের ল্যান্ড রিফর্মস অ্যাক্ট অনুযায়ী মঠের জমি অধিগ্রহণ করেছিল, সেই মামলায় কেশবানন্দ ভারতী হেরে যায় বটে কিন্তু ওই ১৩ জনের বিচারকমণ্ডলী এবং তাঁদের প্রধান জাস্টিস সিকরি রায় দেন। 

আরও পড়ুন: Fourth Pillar | অনাস্থা প্রস্তাবের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বললেন রাশি রাশি মিথ্যে 

তাঁদের রায়ে ওই সময়ে দেশের বেসিক স্ট্রাকচার অফ দ্য কনস্টিটিউশন, সংবিধানের মূল কাঠামো নিয়ে খুব গুরুত্বপূর্ণ কথা বলা হয়েছিল যা পরবর্তীতে দেশের সংবিধানের মূল কাঠামো সম্পর্কিত ধারণার রূপরেখা হয়ে ওঠে। তাতে বলা হয়েছিল, সংবিধানের মূল কাঠামো হল গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা, ধর্ম নিরপেক্ষতা, মৌলিক অধিকার ইত্যাদি হল আমাদের দেশের সংবিধানের মূল কাঠামো, তাকে পরিবর্তন করা যাবে না। বিজেপির কিছু উচ্চিংড়ে নেতাকর্মীরা অবশ্য বহুবার বহু জায়গায় এই বেসিক স্ট্রাকচার, সংবিধানের ঘোষণাপত্র ইত্যাদি পাল্টে দেওয়ার কথা বলেছে, কিন্তু মোদি–শাহ নিজের মুখে সেসব কথা বলেননি। কিন্তু বিজেপির ওই ছোট মেজ, সেজ নেতারা তাহলে এসব কথা বলছেন কী করে? শুনুন আমাদের স্টুডিওতেই এসে এক বিজেপি নেতা কী বলেছিলেন। (বাইট) এঁরা এসব বলছেন কারণ এটাই বিজেপির দর্শন, এটাই বিজেপি চায়, ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্র, ফ্রিডম অফ স্পিচ, ফ্রিডম অফ রিলিজিয়ন ইত্যাদি নিয়ে তাঁদের আপত্তি আছে বইকী। কিন্তু তাঁরা ধীরে ধীরে সেই পথে যেতে চান। তার একটা শুরুয়াত হয়ে গেল ক’দিন আগেই, গণতন্ত্রের পীঠস্থানে বসেই বলা হল ওসব বেসিক স্ট্রাকচার ইত্যাদি বলে কিছুই নেই, সংবিধান আছে, সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকলে তার খোলনলচে বদলে দেওয়া যায়। গভর্নমেন্ট অফ ন্যাশয়াল ক্যাপিটাল টেরিটরি বিল নিয়ে আলোচনার সময়ে জাস্টিস রঞ্জন গগৈ এই কথা বললেন। 

আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে যে এই রঞ্জন গগৈ আমাদের দেশের প্রধান বিচারপতি ছিলেন এবং অবসর নেওয়ার এক মাসের মধ্যেই তিনি রাজ্যসভার মনোনীত সদস্য হন, তো সেই তিনি গত তিন বছরে একটা বাক্য কেন, একটা শব্দও উচ্চারণ করেননি। এরমধ্যে বহু আইন হয়েছে, আইনের আলোচনা হয়েছে, তিনি একটা শব্দও খরচ করেননি, কিন্তু এই দিল্লি সরকারের নতুন আইন নিয়ে বলতে উঠলেন এবং অজস্র কথার মধ্যে খুব জোর দিয়েই তিনি বললেন যে ওই সব সংবিধানের মূল ভিত্তি ইত্যাদি বলে কিছুই হয় না। তিনি বললেন, রাজ্যসভার বিজেপি সদস্যরা টেবিল চাপড়ে তা সমর্থন করলেন, মাননীয় উপরাষ্ট্রপতি ধনখড়ের মুখ উদ্ভাসিত, কারণ তিনিই বেশ কিছুদিন ধরেই চেষ্টা করছিলেন এই কথাটা বলতে। রঞ্জন গগৈয়ের পাশে বসেছিলেন আরেকজন মনোনীত সদস্য পিটি ঊষা, তাঁর মুখেও তখন চওড়া হাসি। আচ্ছা জাস্টিস রঞ্জন গগৈ হঠাৎ করে এই কথা বললেন? না, সেটা ভাবার কোনও কারণ নেই, অত্যন্ত ভেবেচিন্তে তিনি তিন বছর পরে মুখ খুলেছেন। এই বিতর্ক আগে উচ্চিংড়ের দল তুলতো, মাঠে ঘাটে টিভির পর্দায়, এবার তোলা হল সংসদে। এরপরে যে সংবিধানের প্রতি বিজেপির কোনও দায় নেই, যে স্বাধীনতা সংগ্রামে তাঁদের ইতিহাস বিশ্বাসঘাতকতার, যে রাষ্ট্রীয় পতাকা তাঁরা মেনে নেননি তার সবটাই তাঁরা বদলাবেন, সংবিধান থেকে ধর্ম নিরপেক্ষতা তুলে দেওয়াটা আরএসএস–বিজেপির গ্র্যান্ড প্ল্যানের ছোট্ট একটা অংশ মাত্র। মাত্র ক’দিন আগেই এই রঞ্জন গগৈ কী কী বলেছিলেন? চিফ জাস্টিস অফ ইন্ডিয়ার দফতরকে রাইট টু ইনফরমেশন অ্যাক্ট-এর দায়রায় আনতে চাওয়া হয়েছিল, এই রঞ্জন গগৈ জানিয়েছিলেন এটা করা যায় না কারণ এর ফলে সংবিধানের মূল কাঠামো বিপন্ন হবে। ২০১৯-এ ট্রাইবুনাল রিস্ট্রাকচার করবে প্রশাসন, মানে এগজিকিউটিভ। এই বিতর্ক ওঠার পরেও রঞ্জন গগৈ জানান এটা করা যায় না কারণ এর ফলে সংবিধানের মূল কাঠামো ভেঙে পড়বে। মানে উনি বার বার মানছেন যে সংবিধানের একটা মূল কাঠামো আছে। আরও বড় মামলা, অযোধ্যা মামলার রায় দিতে গিয়ে চিফ জাস্টিস অফ ইন্ডিয়া রঞ্জন গগৈ বলছেন, ধর্ম নিরপেক্ষতা হল সংবিধানের মূল কাঠামো, তারই ভিত্তিতে ১৯৯১-এ ধর্মস্থানের চরিত্র না পাল্টানোর আইন পাশ করা হয়েছে। একটু বুঝিয়ে বলি, বাবরি মসজিদ, অযোধ্যা বিতর্ক চলাকালীন নরসিমহা রাওয়ের সময়ে এক আইন পাশ করা হয়েছিল, তাতে বলা হয়েছিল অযোধ্যায় রাম মন্দির বা বাবরি মসজিদ বাদে ১৫ অক্টোবর ১৯৪৭-এ দেশের কোনও ধর্মস্থানের যা চরিত্র ছিল, মানে যারা যেখানে উপাসনা করত বা যাদের দখলে ছিল, তা আর বদলানো যাবে না। অযোধ্যা রাম মন্দির রায় দিতে গিয়ে জাস্টিস গগৈয়ের নেতৃত্বে বিচারকেরা বলেছিলেন, ওই আইন দেশের সংবিধানের মূল কাঠামো ধর্ম নিরপেক্ষতাকে বজায় রাখার জন্যই করা হয়েছে। তাহলে আজ জাস্টিস রঞ্জন গগৈ তাঁর মত পাল্টালেন কেন? কারণ বিজেপি বুঝেছে আবার নতুন করে ধর্ম জিগির তুলতে হবে, আবার ধর্মের ভিত্তিতে নতুন উন্মাদনা তৈরি করতে হবে, সংখ্যালঘুদের ভিতর আবার নতুন করে ভয় জাগাতে হবে, তাই তাঁরা মাঠে নামছেন মথুরা নিয়ে, কাশী জ্ঞানবাপী মসজিদ নিয়ে। ১৯৯১-এর আইন তাঁদের বাতিল করতেই হবে, তাঁরা সংবিধান থেকেই ধর্ম নিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ইত্যাদি শব্দগুলো সরিয়ে দিতে চান, সেই খেলায় একটু হলেও এগিয়ে গেল আরএসএস–বিজেপি, সংসদেই বলে দেওয়া হল, সংবিধানের মূল কাঠামো বলে কিছুই হয় না।    

 

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
Shubhanshu Shukla | মহাকাশে মাহেন্দ্রক্ষণ, স্পেস স্টেশনে পৌঁছলেন ভারতীয় মহাকাশচারী শুভাংশু শুক্লা
00:00
Video thumbnail
Digha | Jagannath Temple | রথের আগের দিন দিঘার জগন্নাথ মন্দিরে কী অবস্থা? দেখুন দিঘা থেকে Live
00:00
Video thumbnail
Rajnath Singh | সাংহাই কো-অপারেশন বৈঠকে মতান্তর, ঘোষণাপত্র স্বাক্ষরে নারাজ রাজনাথ সিং
00:00
Video thumbnail
Suvendu Adhikari | নাড্ডাকে ভুল তথ্য দিচ্ছেন শুভেন্দু, এবার শুভেন্দুর বিরুদ্ধেই অভিযোগ বিজেপি নেতার
01:31
Video thumbnail
Mamata Banerjee | NRC চালুর চেষ্টা চলছে? প্রশ্ন মুখ্যমন্ত্রীর
01:05
Video thumbnail
Mamata Banerjee | নির্বাচন কমিশন আমাকে দুটো চিঠি পাঠিয়েছে, বি/স্ফো/রক মমতা, আর কী কী বললেন?
01:09
Video thumbnail
Mamata Banerjee | বাংলায় কথা বললে বাংলাদেশী? ফের ক্ষু/ব্ধ মুখ্যমন্ত্রী, কী বললেন শুনুন
01:41
Video thumbnail
Donald Trump | ট্রাম্পের মিথ্যে ফাঁস করে দিল মার্কিন গোয়েন্দা রিপোর্ট
04:22
Video thumbnail
Israel | ইজরায়েলজুড়ে ধ্বংসস্তূপ, নেতানিয়াহুর সামনে ক্ষো/ভে-কান্নায় ভেঙে পড়ছেন ইজরায়েলের নাগরিকরা
04:13
Video thumbnail
Netanyahu | Trump | নেতানিয়াহুকে কেন গা/লি দিলেন ট্রাম্প? কীভাবে গোটা দুনিয়া চমকে দিলেন খামেনি?
03:48

Deprecated: Automatic conversion of false to array is deprecated in /var/www/ktv/wp-content/themes/techinfer-child/functions.php on line 39