কলকাতা: ৭ বছরের শিশুকন্যাকে (Child) খুনের ঘটনায় পুলিশ (Police) এবং ক্ষুব্ধ স্থানীয় বাসিন্দাদের খণ্ডযুদ্ধে অগ্নিগর্ভ হয় ওঠে তিলজলা (Tiljala)।সোমবার সকাল থেকে রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় কলকাতার রাজপথ। নৃশংস খুনের ঘটনায় এবার তৎপর হল জাতীয় শিশু সুরক্ষা কমিশন(National Child Rights Commission)।রাজ্যের দুই আধিকারিককে ইতিমধ্যেই নোটিসও (Notice) পাঠিয়েছে জাতীয় শিশু সুরক্ষা কমিশন। রাজ্য পুলিশের ডিজি ও মুখ্যসচিবকে এই ঘটনা নিয়ে নোটিস পাঠানো হয়েছে। ঘটনাটি খতিয়ে দেখতে কমিশন রাজ্যে একটি দল পাঠানোর কথা ভাবছে বলেও জানা গিয়েছে।
ইতিমধ্যেই পুলিশের ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে রাজ্যের কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করার আর্জি জানিয়েছে বিজেপি। সাংসদ সৌমিত্র খাঁ এবিষয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে চিঠি দিয়েছেন। সাংসদের আবেদন, অবিলম্বে রাষ্ট্রপতির নিরাপত্তায় কলকাতাজুড়ে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়ন করা হোক। সৌমিত্র চিঠিতে কলকাতা পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলেছেন। বালিগঞ্জ, তিলজলা-সহ দক্ষিণ কলকাতার বিভিন্ন এলাকা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সৌমিত্র। তাঁর অভিযোগ, ১০ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে উত্তেজনা ছড়িয়েছে কলকাতার বিভিন্ন প্রান্তে। পাঁচ ঘণ্টার বেশি সময় সংশ্লিষ্ট এলাকায় রেলপথ, সড়কপথ অবরুদ্ধে। সংসদে বাজেট অধিবেশন চলছে। সোমবার তিলজলায় উত্তেজনার ঘটনা নিয়ে মঙ্গলবার সংসদেও সরব হতে চলেছে বিজেপি। সূত্রের খবর, তিলজলার বিষয় নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে জানাবেন বিজেপি সাংসদরা।
আরও পড়ুন:Tiljala Incident | থমথমে তিলজলা, ধিকিধিকি জ্বলছে ক্রোধের আগুন
তিলজলায় শিশুকন্যা হত্যাকাণ্ড ঘিরে রবিবার রাত থেকে সোমবার বিকেল অবধি তুলকালাম চলে বিস্তীর্ণ অংশে। রবিবার রাতেই তিলজলা থানা ঘেরাও করেন ওই নাবালিকার প্রতিবেশীরা। সোমবার তার আঁচ পড়ে তিলজলা, বন্ডেল রোড, পার্কসার্কাস ও পিকনিক গার্ডেনে। বিক্ষোভকারীরা একাধিক দলে বিভক্ত হয়ে দিকে দিকে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। ভাঙচুর চালানো হয় পুলিশের গাড়িতে। পুলিশকে লক্ষ করে ইটবৃষ্টি করেন বিক্ষোভকারীরা। তিলজলা উড়ালপুলে বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচল। উন্মত্ত জনতা পরপর একাধিক বাইকে আগুন লাগিয়ে দেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনতে শুরু হয় ব্যাপক ধরপাকড় এবং লাঠিচার্জ। কাঁদানে গ্যাসের শেলও ফাটানো হয় পুলিশের তরফে। পথ অবরোধের পাশাপাশি রেল অবরোধ করা হয়। যার জেরে স্তব্ধ হয়ে যায় শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখায় ট্রেন চলাচল। সপ্তাহের প্রথম দিনে রাস্তায় বেরিয়ে নাকাল হতে সাধারণ মানুষকে।
পুলিশ সূত্রে দাবি, নাবালিকাকে খুনের কথা জেরায় স্বীকার করেছেন অভিযুক্ত অলক সাউ। জেরায় সে জানিয়েছে, ২০২০ সালে বিয়ে হয়েছে তবে, তার কোনও সন্তান নেই। বর্তমানে তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী বিহার রয়েছেন। এর আগে বেশ কয়েকবার স্ত্রীর গর্ভপাত হয়। কলকাতার এক তান্ত্রিক তাকে বলেছিল, নবরাত্রিতে সাত থেকে আট বছরের কণও নাবালিকাকে বলি দিলে তার স্ত্রী সন্তানের জন্ম দিতে পারবে। সেইমতো তান্ত্রিকের পরামর্শ মেনেই প্রতিবেশীর ৭ বছরের শিশুকন্যাকে অপহরণ করে খুনের করে। পুলিশ জানিয়েছে, প্রথমে মাথায় হাতুড়ি দিয়ে মেরে অজ্ঞান করে ধৃত। এরপর মৃত্যু নিশ্চিত করতে পাটের দড়ি দিয়ে গলায় ফাঁস দেয়। রাতে তান্ত্রিকের কাছে দেহ নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল।
উল্লেখ্য, তিলজলা থানা এলাকার ২১ নম্বর শ্রীধর রায় রোডে একটি বিল্ডিংয়ের ফ্ল্যাটে মা, বাবা, ভাইয়ের সঙ্গে থাকত ৪ বছরের নাবালিকাটি। পরিবারটি বিহারের বাসিন্দা। এদিন সকালে ময়লা ফেলতে রাস্তায় বেরিয়েছিল নাবালিকাটি। তারপর তার আর হদিশ মেলেনি। বহু খোঁজাখুঁজির পরেও নাবালিকাটির কেউ কোনও খবর দিতে পারেনি। এরপর নাবালিকাটির পরিবার তিলজলা থানায় অভিযোগ দায়ের করে। তারপর রাত ১০টা নাগাদ তিলজলা থানার পুলিশের তল্লাশি অভিযানে ওই বিল্ডিংয়েরই প্রতিবেশী অলোক কুমারের ফ্ল্যাটে রান্নাঘরে গ্যাস সিলিন্ডারের পাশ থেকে হাত, পা, মুখ বাঁধা অবস্থায় নাবালিকার দেহ উদ্ধার করে। পুলিশ আরও আগে তল্লাশি শুরু করলে নাবালিকাটিকে বাঁচানো যেতে বলে দাবি মৃতের পরিবার সহ প্রতিবেশীদের। পুলিশের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ তুলে রবিবার রাতেই তিলজলা থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান তাঁরা। গভীর রাত পর্যন্ত চলে এই গোলমাল। এরপরই নাবালিকার খুনে অভিযুক্ত প্রতিবেশীকে আটক করে পুলিশ।