নয়াদিল্লি: প্রিয় বান্ধবীকে রাত দুপুরে হোয়াটস অ্যাপে প্রেমের প্রস্তাব পাঠাবেন? অফিস থেকে ফেরার পথে কী আনতে হবে, স্বামীকে ফোনে বলবেন? বরাত দেওয়া মালের পরিবর্তন করবেন টেক্সট মেসেজ করে? বিদেশে পরবাসী বন্ধুকে ফেসবুকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাবেন? করুন, নিশ্চিন্তে করুন। কিন্তু, সবই থাকতে চলেছে রাষ্ট্রের নজরজালে। রাষ্ট্রযন্ত্রের ছাঁকনিতে এবার থেকে কিছুই আর অজ্ঞাত নাও থাকতে পারে। বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রে এভাবেই বিপন্ন হওয়ার পথে নাগরিক স্বাধীনতা। অধিকারের হাতেপায়ে ঔপনিবেশিক বেড়ি পরানোর সব রকমের তোড়জোড় শুরু হয়েছে দেশে।
নতুন টেলিকমিউনিকশনস আইনের (Draft New Telecommunications law) খসড়া রূপায়ণে আলোচনা খুব শীঘ্রই শুরু হতে চলেছে। নয়া আইনে যোগাযোগের সর্বক্ষেত্রে সরকারের কঠোর নজরদারির ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। প্রতিটি মেসেজ, ফোনের কথা, তা সে হোয়াটস অ্যাপ, সিগন্যাল, ফেসবুক, টুইটার, জুম, গুগল মিট, টুইটার স্পেসেস, ক্লাবহাউস, হ্যাম রেডিও যেখানেই হোক, সরকারের করায়ত্ত হতে চলেছে।
আরও পড়ুন: Modi-Mamata Meeting: ডিসেম্বরে দিল্লিতে মমতা, মোদির সঙ্গে কি বৈঠক হবে? জল্পনা
প্রস্তাবিত নয়া আইনে ওটিটি (OTT) পরিষেবায় লাইসেন্স প্রথার আনা হচ্ছে। নেটফ্লিক্স (Netflix) কিংবা অ্যামাজন প্রাইমের (Amazon Prime) মতো ওটিটি প্ল্যাটফর্মের জন্য লাইসেন্স চালু হবে। শুধু তাই নয়, খোদ স্বাধীন সংস্থা টেলিকম রেগুলেটরকেও (TRAI) ঠুঁটো করে দেওয়া হতে পারে। খসড়া ভারতীয় টেলিকমিউনিকেশন বিলে কেন্দ্রীয় যোগাযোগ মন্ত্রকের (Union Ministry of Communications) তরফে সরকারের হাতে এই সমস্ত ক্ষমতা ন্যস্ত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
ডিপার্টমেন্ট অফ টেলিকমিউনিকেশনসের (DoT) সূত্র অনুযায়ী, খসড়া বিলটি বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ যোগাযোগ ব্যবস্থার দিকে তাকিয়ে করা হয়েছে। বিশেষত এই ক্ষেত্রে বিনিয়োগের লক্ষ্যেও বিলে ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। খসড়া বিলের আরও লক্ষ্য হল, ভবিষ্যতে নতুন যা আসবে, তা গ্রহণ করা। উপগ্রহ নির্ভর যোগাযোগ ব্যবস্থা, ইন্টারনেট নির্ভর যোগাযোগ, বিমান ও সমুদ্রপথের যোগাযোগ ব্যবস্থার উপর জোর দেওয়া হয়েছে বিলে।
শুধু তাই নয় ১৩৭ বছরের পুরনো ব্রিটিশ আমলের ভারতীয় টেলিগ্রাফ আইনের অনেক কিছুই এই বিলে রাখা হয়েছে। যার ফলে সরকারের হাতে ঔপনিবেশিক রাজের মতো ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। ফলে গ্রাহকের গোপনীয়তা বলে প্রায় আর কিছু থাকবে না এই নয়া বিলে। এছাড়াও ঘটা করে তৈরি করা টেলিকম রেগুলেটরি অথরিটি অফ ইন্ডিয়ার মতো তথাকথিত স্বশাসিত সংস্থাকেও অকেজো করার পরিকল্পনা রয়েছে এই বিলে। লাইসেন্স দেওয়া বা ভবিষ্যৎ কর্মপদ্ধতি নিরূপণে তাদের আর কোনও ক্ষমতা থাকবে না। বিশেষজ্ঞদের মতে, সংসদে এই বিল আনার আগে সরকার পুঙ্খানুপুঙ্খ চুলচেরা বিশ্লেষণ করাবে।
নাগরিক বা গ্রাহকদের গোপনীয়তা বলে আর কিছু অবশিষ্ট থাকছে না এই নয়া বিলে। যেমন, হোয়াটস অ্যাপ কিংবা এই ধরনের প্ল্যাটফর্মে পাঠানো কোনও মেসেজ, ভয়েস মেসেজ কিংবা ছবি সরকারকে সরবরাহ করতে বাধ্য থাকবে কোম্পানিগুলি। ফলে এন্ড টু এন্ড এনক্রিপশনের আর কোনও অস্তিত্ব থাকবে না। সরকার মনে করলে যে কোনও বার্তাই সংগ্রহ করতে পারবে এই আইনে।