লাহোর: একদিকে চীনের দেওয়া ঋণের বোঝা (Chinese Debt), অপরদিকে দেশের আইন-শৃঙ্খলার (Law and Order) অস্থিতিশীল পরিস্থিতি (Instability), এই দুইয়ের মাঝে ভারতের প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান এখন দেউলিয়া (Bankruptcy) হওয়ার পথে। সে দেশের বেশিরভাগ সরকারি দফতরে (Government Department) এখন কানাকড়িই নেই সংশ্লিষ্ট দফতরের কাজকর্ম সুস্থিরভাবে চালানোর মতো। পাকিস্তানের রেলের অবস্থাও একই রকম। অর্থাভাবে ভুগছে গোটা রেল পরিষেবা (Pakistan Rail Service)।
সে দেশের সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত রিপোর্ট বলছে, পাকিস্তান রেলওয়েজ (Pakistan Railways)-এর অবস্থা এতোটাই করুণ যে হাতে মাত্র তিনদিনের জ্বালানি (Fuel) পড়ে রয়েছে। ভাঁড়ারে থাকা তেল পুনরায় পূরণ (Restock of Oil) না করা হলে গোটা দেশজুড়ে স্তব্ধ হয়ে পড়বে রেল পরিষেবা।
আরও পড়ুন: Rahul Gandhi: রাহুলের ‘অশ্বমেধের ঘোড়া’ ঢুকল যোগীরাজ্যে, জনতার পায়ের ধুলোয় আঁধার আকাশ
পাকিস্তানে গত সোমবারের প্রকাশিত রিপোর্ট বলছে, পাক রেলমন্ত্রী খোয়াজা সাদ রাফিক (Railway Minister Khawaja Saad Rafiq)-এর কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন সে দেশের রেলমন্ত্রকের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক। কী বলেছেন তিনি? অর্থাভাবে ধুঁকছে গোটা রেলপরিষেবা। ভাঁড়ারে যে তেল ছিল রেল পরিষেবা গোটা দেশজুড়ে সচল রাখার মতো, তাও নিঃশেষ হয়ে এসেছে। সূত্রের খবর, হাতে একদিনের মতো তেল মজুত থাকায় পাকিস্তানে মালবাহী ট্রেন (Freight Train) চলাচল সীমিত করে দিতে হয়েছে, বিশেষ করে করাচি ও লাহোরের (Karachi and Lahore) মধ্যে। অর্থাভাবের কারণে মজুদ তেলের পরিমাণ পুনরায় পূরণ করতে না পারার কারণে রেলগাড়ি (Rolling Stock), রেল ইঞ্জিন (Locomotives) এবং রেল পরিকাঠামো (Infrastructure) সহ রেলের বহু সম্পদ অকেজো অবস্থায় ফেলে রাখতে হচ্ছে।
পাকিস্তানের রেল পরিষেবার এই হাল হওয়ার অন্যতম কারণ হল সে দেশের বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরাবস্থা। পাকিস্তানের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও অন্যান্য অংশীদারেরা এক অপরের সঙ্গে বিতর্কে ব্যস্ত। দেশের বর্তমান অচলাবস্থা এবং অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে রেল পরিষেবা যেভাবে ধুঁকছে, সেদিকে নজর দেওয়াস সময় কারওরই নেই। গত রবিবার চলতি বছরের প্রথম দিনই এক সিনিয়র আধিকারিক এবিষয়ে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, যদি এই রকমভাবে দেশের সরকার রেল দফতরকে (Rail Department) উপেক্ষা করে চলে, তাহলে শীঘ্রই পাকিস্তানে গোটা রেল পরিষেবা ভেঙে পড়বে।
পাকিস্তানের রেল দফতরের এতটাই করুণ যে গত একবছরে দফতর ও রেল পরিষেবায় নিযুক্ত যে কর্মী ও আধিকারিকরা অবসর নিয়েছেন, তাঁদের গ্র্যাচুয়িটি বাবদ ২৫ বিলিয়ন পাকিস্তানি টাকা বকেয়া পড়ে রয়েছে। এখানেই শেষ নয়, সক্রিয় কর্মীদের বেতন (Salary) ও অবসরপ্রাপ্তদের পেনশন (Pension) দিতেও দেরি হচ্ছে। মাসের পয়লা তারিখের বদলে ১৫-২০ দিন পর কর্মীরা বকেয়া বেতন ও পেনশন পাচ্ছেন। ডিসেম্বরে মাসে বেতন না পাওয়ায়, সে দেশের ট্রেন চালকরা বিক্ষোভের (Protest) পথে হাঁটতে বাধ্য হয়েছেন এবং গোটা দেশজুড়ে ধর্মঘট (Strike) ডেকেছেন।
আরও পড়ুন: Share Market Updates: বছরের শুরুতে উত্থান শেয়ার বাজারে, ৬১ হাজার ছুঁল সেনসেক্স
এক রেল আধিকারিকের বক্তব্য, ২০১৭-১৮ অর্থবর্ষে অর্থনৈতিক অবস্থা অনেক ভালো ছিল। এর আগে প্রতি বছর মালবাহী রাজস্ব আদায় হত ২০ বিলিয়ন পাকিস্তানি টাকা। এখন সেই আয় কমে ১৬ বিলিয়ন পাকিস্তানি টাকায় দাঁড়িয়েছে। আফগানিস্তান থেকে কয়লা আমদানির পরিমাণও কমেছে। চীন থেকে রেলের নতুন কোচ আসার পরও তা ফেলে রাখতে হচ্ছে। যাত্রীবাহী ট্রেনের আয়ও ২৫ বিলিয়ন থেকে কমে এসেছে ২০ বিলিয়নে। আর তার সবচেয়ে বড় কারণ হল সিন্ধ ও বালোচিস্তানে বন্যার কারণে রেল চলাচল ব্যাহত হয়েছে। সেই কারণে আয় কমেছে পাকিস্তানের রেল মন্ত্রকের।
সে দেশের সমালোচক মহলের বক্তব্য, চীনের কাছে দেনার দায়ে ডুবে আছে পাকিস্তান। দেশে অর্থনৈতিক সঙ্কট কাটাতে হলে সরকারকে আয় বাড়াতে হবে। তার জন্য অন্যতম ভরসা রেল। আর রেল থেকে আয় করতে হলে দরকার বেসরকারি বিনিয়োগ। বিগত কয়েক বছর সেটাই হচ্ছে না। সেই কারণ রেল অর্থাভাবে ধুঁকছে।