নয়াদিল্লি: আগামী ২৪ ও ২৫ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি Narendra Modi, Prime Minister of India) দু’দিনের সফরে দেশের রাজধানী নয়াদিল্লির বাইরে পা রাখছেন। ২৪ এপ্রিল জাতীয় পঞ্চায়েতি রাজ দিবস (National Panchayati Raj Day), মূলত সেই উপলক্ষেই মোদিজির এই সফর। এর সঙ্গে রয়েছে আরও অনেক কর্মসূচি। পঞ্চায়েতি রাজ মন্ত্রক (Ministry of Panchayati Raj) ১৭-২১ এপ্রিল পঞ্চায়েতি পুরস্কার সপ্তাহ (National Panchayat Awards Week ) ঘোষণা করেছিল, সেই অনুযায়ী তা পালিত হয়েছে। এবার ২৪ তারিখ পঞ্চায়েতি রাজ দিবস পালিত হবে। আজাদি কা অমৃত মহোৎসব ২.০ (Azadi Ka Amrit Mahotsav – AKAM 2.0)-এর অঙ্গ হিসেবে তথাকথিত এই পঞ্চায়েতি রাজ দিবস পালন করার কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।
২ দিনের সফর, কিন্তু সফরসূচি বেশ লম্বা। নয়াদিল্লি থেকে প্রধানমন্ত্রী প্রথমে যাবেন মধ্যপ্রদেশ (Madhya Pradesh), তারপর রওনা দেবেন কেরলের (Kerala) উদ্দেশ্যে। মাঝে সাময়িক বিরতি, তারপর রওনা হবেন কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল দমনে (Union Territory of Daman)। আর এই নিয়ে এখন আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে বিভিন্ন মহলে। ৩৬ ঘণ্টার সফরে মোট ৫,৩০০ কিলোমিটার যাত্রা করবেন দেশের প্রধানমন্ত্রী। দেশের আম আদমির মতো সড়ক বা রেল পথে নয়, সফরের পুরো পথটাই অতিক্রম হবে আকাশপথে।
আরও পড়ুন: Rahul Gandhi | সাংসদ বাংলো ছেড়ে দিলেন রাহুল গান্ধী, চাবি ফেরত দেওয়া হল না
২৪ এপ্রিল সকালবেলা দিল্লি (Delhi) থেকে খাজুরাহো (Khajuraho) যাবেন মোদিজি, দূরত্ব ৫০০ কিমি। সেখান থেকে তিনি যাবেন রেওয়া (Rewa) যাবেন জাতীয় পঞ্চায়েতি রাজ দিবস কার্যক্রমে যোগ দিতে, দূরত্ব ২৮০ কিমি। এরপর, আবার তিনি ওই ২৮০ কিমি পথ অতিক্রম করে খাজুরাহোতে ফেরত আসবেন। খাজুরাহো থেকে রওনা দেবেন কোচির (Kochi) উদ্দেশ্যে। আকাশ পথে এই দূরত্বর ১৭০০ কিমি। সেখানে তিনি যুবম কনক্লেভে (Yuvam Conclave) অংশগ্রহণ করবেন। পরদিন সকাল অর্থাৎ ২৫ তারিখ প্রধানমন্ত্রী যাবেন কোচি থেকে যাবেন তিরুবনন্তপুরম (Thiruvananthapuram), দূরত্ব ১৯০ কিমি। সেখানে মোদিজি পতাকা উড়িয়ে বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের সূচনা করবেন, এছাড়াও আরও অনেক প্রকল্পের শিলান্যাস করবেন। সেখান থেকে তিনি সুরাট (Surat) হয়ে পৌঁছবেন সিলভাসা (Silvassa), দূরত্বর ১৫৭০ কিমি। সেখানে তাঁর কর্মসূচি রয়েছে, নমো মেডিক্যাল কলেজ (NAMO Medical College) পরিদর্শন এবং বিভিন্ন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ও উৎসর্গ করা। সেখান থেকে মোদিজি রওনা দেবেন দমনের উদ্দেশ্যে, দেবকা সিফ্রন্টের (Devka Seafront) উদ্বোধন হবে তাঁর হাতে। তার সেখান থেকে আবার ফিরে আসবেন সুরাটে। ১১০ কিমি রাস্তা। সুরাট থেকে তিনি আবার দেশের রাজধানীতে ফেরত আসবেন, দূরত্ব ৯৪০ কিমি।
যাঁরা পরিসংখ্যান পছন্দ করেন, তাঁদের জন্য বলা, ভারতের উত্তর থেকে দক্ষিণের যেতে অতিক্রম করতে হয় ৩,২০০ কিমি রাস্তা। সেখানে মোদিজি যাওয়া-আসা করবেন, ফলে সফরের পথ প্রায় দ্বিগুণ হচ্ছে। তাও আবার ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে সম্পূর্ণ হবে। কিন্তু বিষয় হলো, সফরের পুরো পথটাই তিনি আকাশপথে যাত্রা করবেন। এর জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ হতে চলেছে। গত মাসেরই কথা, ১২ তারিখ কর্নাটকে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে তিনি আইআইটি-ধারওয়াড়ের (IIT-Dharwad) নতুন ক্যাম্পাসের উদ্বোধন করেছিলেন তিনি। সেখানে অনুষ্ঠানেও যোগ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী।
মোদিজির ওই একটি সফরে সেরাজ্যের বাসবরাজ বোম্মাই সরকার ৯.৪৯ কোটি টাকা খরচ করেছিল। কর্নাটকে আগামী মাসে বিধানসভা নির্বাচন রয়েছে। আর মধ্যপ্রদেশের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে চলতি বছরের শেষের দিকে নভেম্বরে। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞমহলের বক্তব্য, স্বাভাবিকভাবেই কর্নাটকে মোদিজি গিয়েছিলেন নির্বাচনী প্রচার সারতে। তাঁর মধ্যপ্রদেশ সফরও সেই একই উদ্দেশ্যে হতে চলেছে। এই দুই রাজ্যেই ভারতীয় জনতা পার্টি ক্ষমতায় রয়েছে।
২০১৪ সালে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে বসেছেন মোদিজি। তারপর থেকে তিনি প্রতি বছর নিয়ম করে বিদেশ সফর ও দেশের অভ্যন্তরে অগণিত সফর করেছেন। যা নিয়ে হামেশাই সমালোচনা হয় বিরোধী ও সমালোচক মহলে। সোশ্যাল মিডিয়াতেও এনিয়ে মিমের বন্যা বয়ে যায়। কারণ, প্রধানমন্ত্রীর সফরে বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ হয়। আগামী ২৪-২৫ এপ্রিল যে ঠাসা-সফরসূচি রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর, সময় বাঁচাতে পুরোটাই আকাশপথে ভ্রমণ করবেন তিনি। স্বাভাবিকভাবেই এরজন্য প্রচুর পরিমাণ অর্থ খরচ হতে চলেছে বিমান ও হেলিকপ্টারের জ্বালানি এনং অনুষ্ঠান আয়োজন, নিরাপত্তা ও অন্যান্য বন্দোবস্ত সহ। প্রধানমন্ত্রীর সফরের জন্য পুরো খরচটাই হবে সরকারি কোষাগার থেকে, অর্থাৎ দেশের জনগণের দেওয়া করের টাকায়।