মুম্বই: ঈশ্বর নন, ব্রাহ্মণরাই জাতপাত তৈরি করেছে। কট্টর হিন্দুত্বের ধ্বজাধারী রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ প্রধান মোহন ভাগবতের (RSS Chief Mohan Bhagwat) মুখে এ ধরনের মন্তব্যে চমকে উঠল গোটা দেশ। তিনি আরও বলেন, আমাদের সৃষ্টিকর্তার চোখে আমরা সকলেই সমান। সেখানে কোনও জাতপাতের বিভেদ নেই। এই বিভেদ তৈরি করেছে ব্রাহ্মণ্যতন্ত্র। যা ভুল ছিল।
রবিদাসের (Saint Shiromani Rohidas) কথা উল্লেখ করে ভাগবত বলেন, তিনি বলেছিলেন, তোমার চারদিকে যা ঘটছে, তা নজরে রাখো। কিন্তু কোনও অবস্থাতেই নিজের ধর্ম ত্যাগ করবে না। যদিও ঈশ্বরের অস্তিত্ব প্রচারের পৃথক পৃথক ভাষা আছে, ভিন্ন ভিন্ন প্রকার আছে, কিন্তু সকলেরই মর্মার্থ এক। অন্যের ধর্মবিশ্বাসকে আঘাত না করে নিজের ধর্ম পালন করে যাও।
আরও পড়ুন: Tripura Assembly Election 2023: আজ ত্রিপুরা যাচ্ছেন মমতা-অভিষেক, ঝড় তুলবেন প্রচারে
কট্টর হিন্দুত্ববাদী আরএসএস প্রধানের মুখে এ ধরনের সর্বধর্ম সমন্বয়ের কথা শুনে বহু মানুষেরই চোখ কপালে উঠেছে। অনেকেরই ধারণা, রবিদাসের অনুগামী লক্ষ লক্ষ হিন্দু দলিত ভোটারদের কাছে টানতেই মোহন ভাগবতের ভোটমুখী এই ভাষণ। ত্রিপুরা, মেঘালয়, নাগাল্যান্ডের ভোটের পর থেকে আগামী বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত ৯ রাজ্যে বিধানসভা ভোট রয়েছে। যেখানে কয়েক লক্ষ রবিদাস অনুগামী ভোটার রয়েছেন। সেই ভোটারদের প্রভাবিত করতেই ভাগবতের বিবেক জাগরণ ঘটেছে। উচ্চবর্ণ হিন্দুদের সংগঠনের হঠাৎ করে দলিত-চামার শ্রেণির মানুষকে পাশে টেনে বসানোর চেষ্টাকে অনেকেই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে করছেন।
আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত রবিবার মুম্বইয়ের রবীন্দ্র নাট্য মন্দিরে আয়োজিত সন্ত শিরোমণি রবিদাসের ৬৪৭-তম জন্মদিবস (647th Birth Anniversary of Saint Shiromani Rohidas) উপলক্ষে ভাষণ দিচ্ছিলেন। সেই সময়ই তিনি ব্রাহ্মণ্যতন্ত্রের বিরুদ্ধে এবং জাতপাতের বিভেদ সৃষ্টিকারীদের নিয়ে মন্তব্য করেন। ভাগবত বলেন, আমরা যখন একটা জীবন পেয়েছি, তখন সমাজের প্রতি কর্তব্যপরায়ণ হওয়া আমাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। যখন কোনও কাজ সমাজের পক্ষে মঙ্গলকর, তাহলে কী করে তা বড় বা ছোট কাজ হয়?
একথা বোঝাতে গিয়ে বলেন, আমাদের সৃষ্টিকর্তা সকলকে সমান করে বানিয়েছেন। তাঁর চোখে আমরা সকলেই সমান। সেখানে কোনও জাত নেই, উচ্চনীচ নেই। এই বিভাজন তৈরি করেছে ব্রাহ্মণরা। যা অত্যন্ত ভুল হয়েছে। তিনি আরও বলেন, বিবেক এবং চেতনা দুটোই দুটোই এক, কেবলমাত্র মতামত বিভিন্ন।
সন্ত রবিদাসের স্থান তুলসীদাস, কবির এবং সুরদাসের অনেক ঊর্ধ্বে। একথা বলে ভাগবত জানান, সেই কারণেই তাঁকে সন্ত শিরোমণি বলা হয়। শাস্ত্রে তিনি ব্রাহ্মণদের পরাভূত করতে পারেননি। কিন্তু, দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষের হৃদয় জয় করেছিলেন। তাঁদের ঈশ্বরবিশ্বাসী করে তুলেছিলেন। রবিদাসের কথা উদ্ধৃত করে ভাগবত বলেন, তিনি বলে গিয়েছেন, ধর্ম কারও পেট ভরানোর সামগ্রী নয়। কর্ম করে যাও। তোমার ধর্ম অনুযায়ী কর্ম করো। সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করো। সমাজের কল্যাণে কাজ করো। আর তাকেই বলে ধর্ম। তাঁর এই আদর্শ ও বাণীতে উদ্বদ্ধ হয়ে আজ দেশের অসংখ্য মানুষ রবিদাসের পদানুগামী হয়েছেন, বলেন ভাগবত।