বিজেপিতে যোগদানের মঞ্চ থেকেই শুভেন্দু অধিকারী আওয়াজ তুলেছিলেন, ‘‘তোলাবাজ ভাইপো হঠাও!’’ তার পরই একাধিক জনসভা থেকে পাল্টা জবাব দিয়েছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু, সোমবার মেয়ো রোডে ছাত্রযুবর সভামঞ্চ থেকে জবাবি হামলার ঝাঁঝ কয়েক গুণ বাড়লেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। শুভেন্দুকে তোলাবাজ, গদ্দার, ঘুষখোর, দু’নম্বরি, মীরজাফর, বিশ্বাসঘাতকের মতো শব্দবাণে বিদ্ধ করলেন ডায়মন্ডহারবারের সাংসদ। একই সঙ্গে, রাজ্যের বিরোধী দলনেতাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে অভিষেক বলেন, ক্ষমতা থাকলে শুভেন্দু মামলা করে দেখাক। আমি ওকে ছেড়ে দেব না। শুভেন্দুর পাশাপাশি অভিষেকের নিশানা থেকে বাদ পড়েননি বিজেপির সুকান্ত মজুমদার-দিলীপ ঘোষও। রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদারকেও গদ্দার-ঘুষখোর বলে আক্রমণ করেন অভিষেক।
আগেও একাধিকবার শুভেন্দুকে নিশানা করেছেন অভিষেক। সারদা কর্তা সুদীপ্ত সেনের চিঠিতে হাতিয়ার করেও শুভেন্দুকে নিশানা করেছেন একাধিকবার। এ দিনের সভা থেকে অভিষেক বলেন, আমার নাম মুখে আনতে ভয় পাচ্ছে ওরা। আমি নাম করে বলছি। পারলে আমার নামে আদালতে যাক। ইডি-সিবিআইয়ের মতো কেন্দ্রীয় সংস্থাকে দিয়ে তৃণমূলকে ভয় দেখানোর চেষ্টা চলছে। রাজনৈতিক ভাবে মোকাবিলা করতে না পেরে, কেন্দ্রীয় সংস্থা দিয়ে ভয় দেখানো হচ্ছে। আমি অন্য ধাঁচের। আমাকে ভয় দেখিয়ে কোনও লাভ হবে না।
সারদার পাশাপাশি নারদা স্টিং অপারেশনেও শুভেন্দুর হাত পেতে টাকা নেওয়ার ঘটনার কথা উল্লেখ করে এই তৃণমূল সাংসদ বলেন, “নারদায় লক্ষ লক্ষ টাকা টিভির পর্দায় তুমি ঘুষ খেয়েছ। আর ভাইপো তোলাবাজ? আরে শোনো, তোমাদের তো সাহস নেই নাম নিয়ে কথা বলার। আমি নাম নিয়ে বলছি, আমি বলছি দিলীপ ঘোষ গুন্ডা। যা করার করবে। আমি বলছি, অমিত শাহ বহিরাগত, আপনাদের যা করার করুন। আমি ভাববাচ্যে কথা বলি না। নাম নিয়ে কথা বলি। ক্ষমতা থাকলে মামলা করে আমাকে জেলে ঢোকাবে।’’ তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘৫০টা ক্যামেরার সমানে কথা বলছি, ঘুষখোর শুভেন্দু অধিকারী। আমার বিরুদ্ধে মামলা করো। সুদীপ্ত সেন ৬ কোটি টাকা দিয়েছে। নারদায় টাকা খেয়েছে। আর তারপর তোলাবাজ ভাইপো। আমার বিরুদ্ধে নথি হাতে যেদিন থাকবে সরাসরি আমি যুক্ত, জনতার দরবারে দাঁড়িয়ে প্রমাণ করুক।’’
একই সঙ্গে এ দিনের সভা থেকে সন্দেহ প্রকাশ করে বলেন, একুশের সমাবেশের পর দিনই পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে ইডি গিয়েছিল। আজকের এত বড় সমাবেশ। খুব শীঘ্রই কোনও না কোনও তৃণমূল নেতার বাড়িতে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা যেতে পারে। এর পরই শুভেন্দুকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বলেন, ‘‘সুদীপ্ত সেনের থেকে শুভেন্দু ৬ কোটি টাকা নিয়েছে। এই তো প্রমাণ দিচ্ছি। আমার বিরুদ্ধে এমন প্রমাণ দিতে পারলে আমি মৃত্যুবরণ করব। চ্যালেঞ্জ করছি। আছে ক্ষমতা? হবে লড়াই? কথায় কথায় বলেন লড়াইয়ের ময়দানে দেখা হবে। এই তো লড়াইয়ের ময়দান। জনতার দরবারে দাঁড়িয়ে তোকে চ্যালেঞ্জ করছি।’’ অভিষেকের কথায়, ‘‘সুদীপ্ত লিখেছেন আমি যেদিন ফেরার হয়েছিলাম, তার আগের দিন রাতে আমার অফিসে এসে পয়সা নিয়েছিল শুভেন্দু। আর আজকে পদ্মফুলের গুণগান গাওয়া হচ্ছে, সিবিআই ধরবে বলে?’’ তাঁর দাবি, ‘‘আমি প্রমাণ দিয়েছি। সরাসরি অভিযুক্ত করেছি। প্রমাণ দাও, আমি সরাসরি যুক্ত, আমি ফাঁসির দড়িতে ঝুলে মৃত্যুবরণ করব।’’