কলকাতা: মালদহের গাজোলে এক সভায় (Rally in Gazole, Malda ) মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Chief Minister Mamata Banerjee) মতুয়া ধর্মগুরু হরিচাঁদ ঠাকুর এবং গুরুচাঁদ ঠাকুরের নাম বিকৃত ভাবে উচ্চারণ করেছেন বলে বিজেপি হইচই শুরু করে দিয়েছে। অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর দাবি তুলেছেন, এর জন্য মুখ্যমন্ত্রীকে ক্ষমা চাইতে হবে। কিছু বহিরাগত বাংলা চ্যানেল মুখ্যমন্ত্রীর এই উচ্চারণ নিয়ে দিনভর নানা টক শো করে চলেছে। ভাবখানা এমন যেন, মুখ্যমন্ত্রী বিরাট অপরাধ করে ফেলেছেন। কেই কেউ এই বিষয়ে নানা বিভাজন সৃষ্টিরও চেষ্টা করছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যে বছর তিনেক আগে ঠাকুরনগরের এক সভায় হরিচাঁদ বলতে গিয়ে হরিশ্চন্দ্র বলে ফেলেছিলেন, তা নিয়ে তখন কেউ কিছু বলেনি। তখন কোনও চ্যানেলে টক শো-ও হয়নি। তাঁর ক্ষমা চাওয়ারও জোরালো দাবি ওঠেনি।
দিন চারেক আগে মুখ্যমন্ত্রী বোলপুর থেকে মালদহের গাজোলে গিয়েছিলেন এক সরকারি পরিষেবা প্রদান অনুষ্ঠানে। সেখানে ভাষণ দিতে গিয়ে তিনি হরিচাঁদ, গুরুচাঁদের নাম ভুল বলে ফেলেন। মালদহে প্রচুর মতুয়া সম্প্রদায়ের লোকের বাস। তৃণমূল সরকার মতুয়া সম্প্রদায়ের জন্য কী কী কাজ করেছে, তার বিস্তারিত বিবরণ দেন মুখ্যমন্ত্রী। হরিচাঁদ, গুরুচাঁদের নামে যে বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে, তার কথাও বলেন তিনি। তখনই তাঁদের নাম ভুল বলেন মমতা।
আরও পড়ুন: Meghalaya Assembly Election 2023: মেঘালয়ে তালিকা প্রকাশ, এবার ৬০ আসনেই প্রার্থী দিচ্ছে বিজেপি
তারপরই আসরে নেমে পড়ে বিজেপি। তাদের মদতে বিভিন্ন জেলায় মতুয়ারা মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষমা চাওয়ার দাবিতে রাস্তায় নামেন। কোথাও কোথাও অবরোধও হয়। শুক্রবারই কালনার পাণ্ডুয়া মোড়ে পথ অবরোধ করেন মতুয়ারা।
মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি এবং কেন্দ্রীয় জাহাজ প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর রীতিমতো সাংবাদিক বৈঠক ডেকে মুখ্যমন্ত্রীর সমালোচনা করেন। তাঁর অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রী ইচ্ছাকৃত ভাবে হরিচাঁদ, গুরুচাঁদের নাম বিকৃত করেছেন। তাঁদের এবং মতুয়া সম্প্রদায়কে অপমান করার জন্যই এ কাজ করা হয়েছে। তা নিয়ে কিছু বহিরাগত চ্যানেল বিতর্ক সভা. টক শো-র আয়োজন করে গেল গেল রব তুলে দিয়েছে।
বছর কয়েক আগে মতুয়াদের ঠাকুরনগরে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি হরিচাঁদের নাম বলতে গিয়ে হরিশ্চন্দ্র বলে ফেলেন। তখন কিন্তু কেউ তা নিয়ে মাথা ঘামায়নি। তৃণমূল প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমা চাইতে হবে বলে দাবি করেনি। কেউ পথ অবরোধ করেনি। চ্যানেলে তা নিয়ে টক শো হয়নি।
কথা বলতে গিয়ে অনেক সময় মানুষ অনেক ভুল বলে ফেলেন। বিশেষ করে নামের ক্ষেত্রে ভুল প্রায়ই হয়। তা যে ইচ্ছাকৃত নয়, তা সবাই জানে, বোঝে। রাজনৈতিক নেতা কিংবা মন্ত্রীরাও তার ব্যতিক্রম নন। কিন্তু তার জন্য ক্ষমা চাইতে হবে, এ কেমন যুক্তি। তা হলে প্রধানমন্ত্রীকেও তো ক্ষমা চাইতে হয়।
কেউ কেউ এই বিষয়টি নিয়ে ঘোলা জলে মাছ ধরতে নেমে পড়েছে। প্রচার চলছে, মতুয়াদের অপমান করা হয়েছে। তারা সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষ বলে এ সব করা হচ্ছে। কলকাতা টিভি এই ধরনের বিভাজনের বিরুদ্ধে। কলকাতা টিভি বাঙালিয়ানাকেই আগে মর্যাদা দেয়। মতুয়ারা সেই বাঙালিরই অংশ। এ ভাবে তাদের আলাদা করা যাবে না।