কলকাতা: মঙ্গলবার রাতে রাজভবনে বসে শুভেন্দু অধিকারীকে মাখনের ছুরি দিয়ে আক্রমণ শানালেন রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস (C V Ananda Bose)। বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari) এদিন বিকেলে রাজ্যপালের ভূমিকা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। রাজ্যের পরিস্থিতি নিয়ে রাতে একটি সাংবাদিক সম্মেলন করেন রাজ্যপাল। সেখানে একক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সমালোচনা আমার পছন্দ। সমালোচনা মানুষকে সংশোধন করতে পারে। শুভেন্দু অধিকারী যা বলেছেন, তা আমি মনে রাখব। ওনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। রাজ্যজুড়ে রাজনৈতিক তরজায় যেখানে একে অপরকে কুকথা এমনকী অশ্রাব্য গালিগালাজ পর্যন্ত চলছে, সেখানে রাজ্যপালের এই ‘গান্ধীগিরি’ নিঃসন্দেহে অন্য সকলের কাছে শিক্ষণীয়।
প্রসঙ্গত, এদিন রাজ্যপালের ভূমিকায় ফের ক্ষোভপ্রকাশ করেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর। হাওড়া এবং রিষড়ায় অশান্তির ঘটনায় রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের ভূমিকায় অসন্তোষ প্রকাশ করে মঙ্গলবার তাঁকে কিছু করে দেখানোর চ্যালেঞ্জ ছোড়েন শুভেন্দু।
আরও পড়ুন: Mamata-Amit Shah | মমতা-রাজ্যে ‘অশান্তি’র রিপোর্ট তলব অমিত শাহের মন্ত্রকের
তিনি বলেন, রাজ্যপাল সাংবিধানিক প্রধানের মতো কাজ করুন। সাধারণ মানুষের স্বার্থে তিনি কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে এই সংঘর্ষ নিয়ে কড়া রিপোর্ট পাঠান। রাজ্যের সাম্প্রতিক সংঘর্ষের ঘটনা এবং আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতির অবনতি ৩৫৫ ধারা জারি করার মতো অবস্থা সৃষ্টি করেছে বলে এদিন দাবি করেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা।
রামনবমীর মিছিল ঘিরে বেশ কিছুদিন ধরে অশান্তির বাতাবরণ সৃষ্টি হয়েছে শিবপুর, রিষড়া এবং ডালখোলা। শুভেন্দুর মতে, এই পরিস্থিতিতে রাজ্যপালের ভূমিকা আরও কড়া হওয়া উচিত। এই প্রসঙ্গে তিনি প্রাক্তন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় এবং গোপাল কৃষ্ণ গান্ধীর সঙ্গে বর্তমান রাজ্যপালের তুলনাও করেন। শুভেন্দু বলেন, আমার তিন দশকের রাজনৈতিক জীবনে অনেক রাজ্যপালকে দেখেছি। এই ধরনের পরিবেশে গোপালকৃষ্ণ গান্ধী, জগদীপ ধনখড়ের ভূমিকা স্মরণ করতে চাই। বর্তমান রাজ্যপালের কাছ থেকে এখনও পর্যন্ত গান্ধী এবং ধনখড়ের ভূমিকা ব্যক্তিগত ভাবে দেখতে পাইনি। আগেও বলেছিলাম, আজও এই মন্তব্যে আমি অনড়।
এদিকে রাজ্যপাল এদিনই উত্তরবঙ্গ সফর কাটছাঁট করে কলকাতায় ফিরে রিষড়ায় চলে যান। সেখানে রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার কথা বলেন তিনি। রাজ্যপাল বলেন, রাজ্য অশান্তি চায় না। বেআইনিভাবে অস্ত্র নিয়ে যারা ঘুরবেন, সংঘর্ষ ঘটাবেন, তাদের চিহ্নিত করে কড়া পদক্ষেপ নিক রাজ্য সরকার। এরপরেই রাজ্যপালের ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন শুভেন্দু।
রাজনৈতিক মহলের একাংশের মত, রাজ্যপাল রাজ্য সরকারের সঙ্গে সমন্বয় রেখে কাজ করতে চাওয়াতেই বেজায় চটেছেন বিরোধী দলনেতা। এদিনই বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার রাজভবনে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করেন। তিনি রাজ্যপালকেও রাজ্যে ৩৫৫ ধারা জারি করার দাবি জানানোর কথা বলে আসেন। রাজভবন থেকে বেরিয়ে সুকান্ত বলেন, রাজ্যের পরিস্থিতি খুব খারাপ। ৩৫৫ ধারা জারি করা ছাড়া উপায় নেই।