Thursday, June 12, 2025
Homeচতুর্থ স্তম্ভFourth Pillar | কিস কিস কা কিসসা, সংসদে রাহুল গান্ধী

Fourth Pillar | কিস কিস কা কিসসা, সংসদে রাহুল গান্ধী

Follow Us :

যে কোনও মৌলবাদের প্রেম, ভালোবাসা, সম্পর্ক, যৌনতা নিয়ে হাজারো সমস্যা থাকে। ইশক মুহব্বত নিয়ে হাজারো শায়রি আছে বটে উর্দু, ফারসি, আরবিতে কিন্তু ইসলামিক মৌলবাদে সে সব হারাম। হিন্দু মৌলবাদও একইরকম, তাদেরও যৌনতা নিয়ে, সম্পর্ক নিয়ে হাজারো ট্যাবু, জানিস, উনি বউকে মা বলে পুজো করতেন বলতে বলতে বিহ্বল হয়ে পড়েন অনেকেই, ভ্যালেন্টাইন্স ডে তে লাঠি হাতে ঘুরে বেড়ায় বজরং দল, বিবাহিত স্ত্রীকে স্বীকৃতিই দেন না তাঁদের সর্বোচ্চ নেতা। আসলে মৌলবাদ এক ধরনের মানসিক অসুখ, যেখানে ঘৃণার চাষ হয়,  মৌলবাদীদের কাছে সবচেয়ে বড় ধার্মিক তো তিনিই যাঁর মনে আছে সর্বোচ্চ ঘৃণা। ঘৃণা অন্য ধর্মের মানুষের জন্য, ঘৃণা যুক্তিবাদের বিরুদ্ধে, ঘৃণা সামান্যতম বিরোধিতা করেন এমন মানুষদের জন্য। সেই তাঁরাই সংসদে রে রে করে নেমে পড়েছেন, রাহুল গান্ধী কেন ফ্লায়িং কিস ছুড়েছেন। রাহুল গান্ধী একবার নয় তিন চারবার যাদের দেশদ্রোহী বললেন, চিৎকার করেই বললেন মণিপুরে ভারত মাকে খুন করা হয়েছে, তা নিয়ে স্মৃতি ইরানি অ্যান্ড কোম্পানির কোনও আপত্তি নেই, আপত্তি ফ্লাইং কিস নিয়ে। আমাদের কলকাতার চিড়িয়াখানাতে এলে স্মৃতি ইরানি রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দেবেন কারণ উন্মুক্ত খাঁচার সামনে গেলেই রানি, আমাদের শিম্পাঞ্জি ওই উড়ন্ত চুমু ছুড়ে দেবেই। আর বজরং দল থেকে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, স্মৃতি ইরানি থেকে আদিত্য যোগীর সমস্যা ভালোবাসা নিয়ে, প্রেম নিয়ে, যৌনতা নিয়ে। এগুলোর কোনওটাকেই ওঁরা স্বাভাবিক বলে মনেই করতে পারেন না। রাহুল গান্ধী বক্তৃতার সময়েই বলেছিলেন বক্তৃতা শেষ করেই উনি চলে যাবেন রাজস্থানে, যাওয়ার আগে বিরোধী বেঞ্চের দিকে ফ্লায়িং কিস ছুড়ে দিয়ে গেছেন? ছবি থেকে তা যে খুব পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে তাও নয়, কিন্তু সেই ফ্লায়িং কিস-এর ভারে স্মৃতি ইরানি ক্ষুব্ধ, উনি বিচার চেয়েছেন স্পিকারের কাছে। ফ্ল্যাইং কিস নাকি বিরোধী দলের মহিলা এমপিদের দিকেই ছোড়া হয়েছে, এমনটাই তাঁর অভিযোগ। যদিও এই চুমু ইত্যাদিতে অনেক বেশি সড়গড় হেমা মালিনী বলেছেন, কই, আমি তো সেরকম কিছু দেখিনি! যৌনতার অবদমনে অবশ্য এরকম হ্যালুসিনেশন হয়ে থাকে, আমি বলছি না, মনোবিদেরা বলেন। 

এই স্মৃতি ইরানির দল সমলিঙ্গ বিবাহের কেবল বিরুদ্ধে নয়, তাঁদের ধারণা এটা একটা অসুখ, এঁরা সে কথা বহুবার বলেছেন। এই স্মৃতি ইরানির দল খাজুরাহো মন্দির, তার ভাস্কর্যকে ট্যুরিজম প্রোমোশন থেকে বাদ দিয়েছে, কারণ তা নাকি বিকৃত যৌনতার কথা বলে। আসলে এটা বিজেপি নয়, তাদের ওরিজিন আরএসএস-এর ধারণা। এরজন্যই প্রচারকরা বিয়ে-শাদি করেন না, করে ফেললেও বিবাহিত এটাই চেপে যাওয়ার চেষ্টা করেন। যাঁরা সমধর্মের প্রেম ভালোবাসাকেই সমর্থন করেন না, তাঁরা ইন্টার কাস্ট, ইন্টার রিলিজিয়ন প্রেম ভালোবাসা নিয়ে কী ভাববেন তা তো ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন নেই, বলেই দিয়েছেন, তা হল লাভ জিহাদ। দেশের বিজ্ঞানীরা অন্তরীক্ষে মহাকাশযান পাঠাচ্ছেন, আর্টিফিসিয়াল ইন্টলিজেন্স হয়ে উঠছে নিত্য ব্যবহারের জিনিস আর এই মধ্যযুগীয় চিন্তাধারাকে বয়ে নিয়ে চলা মানুষজন নাকি দেশকে উন্নয়নের পথে নিয়ে যাবে। ৫ ট্রিলিয়ন ইকোনমিতেও যদি মানুষের মগজে এত বিষ থাকে, তাহলে ক্ষ্যামা দিন, চাই না অমন ফাইভ ট্রিলিয়ন ইকোনমি। ইতি প্রথম সর্গ সমাপ্ত, স্মৃতি ইরানি অ্যান্ড কোম্পানির কিস কা কিসসা নিয়ে আর শব্দ খরচ না করে চলুন রাহুল গান্ধী এবং আমাদের মোটা ভাই অমিত শাহ কী বললেন তা নিয়ে ক’টা কথা বলা যাক। রাহুল কাল ঝোড়ো ইনিংস খেললেন। ঠিক পলিটিশিয়ান নয়। ইদানিং যে অন্য রাহুলকে দেখছিলাম আমরা সেই রাহুলকেই দেখা গেল সংসদ ভবনে। হতেই পারত অন্যরকম, সংসদে না ঢুকতে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন আপনারা, দেখুন ফিরে এসেছি, এরকম একটা অ্যাটিটিউড থাকতেই পারত কিন্তু ছিল না। বরং অনেক কম্পোজড, ফোকাসড রাহুল গান্ধীকে দেখলাম আমরা। 

আরও পড়ুন: Fourth Pillar | মণিপুর নিয়ে একটা শব্দও খরচ করবেন নরেন্দ্র মোদি? 

রুমি দিয়ে শুরু করলেন, মস্তিষ্ক নয়, মন থেকে কথা বলা শুরু করলেন। উনি জানেন মণিপুরের সেই বর্বরতার ছবি ছড়িয়ে গেছে সর্বত্র, কাজেই সেই স্মৃতিকেই ঘা দিলেন, পুত্রহারা জননীর কথা বললেন, গুলিতে মৃত ছেলের দেহ আগলে সারারাত কাটানো মায়ের কথা বললেন, এবং বিজেপির তূণীরের অন্যতম অস্ত্র জঙ্গি জাতীয়তাবাদকে ফালাফালা করে দিলেন। একবার নয়, অন্তত তিন চারবার সরকারি বেঞ্চের দিকে তাকিয়ে বললেন আপনারা দেশদ্রোহী, বললেন মণিপুরে ভারতমাতাকে হত্যা করা হয়েছে, এখানে আমার মা বসে আছেন, ওখানে আমার আরেক মাকে হত্যা করা হয়েছে। হ্যাঁ, অনেকদিন ধরে দেশের প্রত্যেক বিরোধী দলকে, তাদের নেতাদেরকে, সামান্যতম বিজেপি বিরোধী যারা তাদেরকেও বিজেপি দেশদ্রোহী বলে, টুকরে টুকরে গ্যাং বলে, এটাই ছিল দস্তুর, বিরোধিতা করলেই আপনি দেশদ্রোহী, পাকিস্তানে যান। অনেকদিন পরে গণতন্ত্রের সর্বোচ্চ পীঠস্থানে ওই আরএসএস–বিজেপিকে একজন চিৎকার করে দেশদ্রোহী বললেন, একবার নয়, বার বার। ভারতমাতা, শব্দটার গ্লোবাল টেন্ডার নিয়ে বসেছিল বিজেপি বজরং দল বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। অনেকদিন পরে তাদেরকে একজন সংসদে দাঁড়িয়েই বললেন আপনারা মণিপুরে ভারতমাতাকে খুন করেছেন। হ্যাঁ, ভারতমাতা, হিন্দু, গেরুয়া, মন্দির ইত্যাদি থেকে আরএসএস-বিজেপির একচেটিয়া আধিপত্যকে ভাঙতেই হবে, রাহুল গান্ধী সেই কাজটা করছেন। কেবল তাই নয়, রামায়ণের উল্লেখও করলেন, বললেন রাবণকে রাম হত্যা করেননি, করেছে রাবণের অহঙ্কার। রাবণের আত্মঘাতী অহঙ্কারের জন্যই রাবণের পতন হয়েছিল, উনি কাকে রাবণ বললেন তাও স্পষ্ট, একেই বলে মেরে খেলা। মোদিজি আবেগের খেলাতেই বিরোধীদের হারান, এবার বিরোধীরাও সেই আবেগকেই হাতিয়ার করে নিতে চান। খেলা জমে গিয়েছে। এবার চলুন মোটা ভাই অমিত শাহের বক্তৃতায়। 

আগের থেকে হিন্দিতে অনেক বেশি দড়, অনেক বেশি কনফিডেন্ট অমিত শাহ এখন ভালো বক্তা। তাঁর বক্তৃতার সময়ে কেউ খুব একটা বাধা দেয় না, সেটা ওঁর বক্তৃতার জন্য না ওঁর হাতে ইডি-সিবিআই আছে সেই জন্য, তা আমার জানা নেই। কারণ উনি বলতে উঠেই ভূগোল গুলিয়ে ফেললেন, মহারাষ্ট্রের বিদর্ভ এলাকার সঙ্গে গুলিয়ে ফেললেন উত্তরপ্রদেশ মধ্যপ্রদেশের বুন্দেলখণ্ডের সম্পর্কে, দেশ আর দেশের ভূগোল নিয়ে এরকম অজ্ঞানতা দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর, কেউ আঙুল তুলে শুধরে দিলেন না। রাহুল গান্ধী গিয়েছিলেন বিদর্ভ এলাকাতে সেখানে এক মহিলা কলাবতী তাঁকে এখনও ইলেকট্রিসিটি কানেকশন না পাওয়ার অভিযোগ করেন, রাহুল বসে সেটা শোনেন। সেই ঘটনা ভুলে আজ দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বললেন বুন্দেলখণ্ডে রাহুল গান্ধী। হ্যাঁ, রাহুল গান্ধী বললেন, রাহুল বাবা বলা বন্ধ করেছেন, রাহুল গান্ধী নাকি কলাবতীর ঘরে খেয়েছিলেন, তারপর তার কথা ভুলেই গিয়েছেন, সেই কলাবতীর পাকা ঘর, শৌচালয় আর গ্যাস দিয়েছে মোদিজির সরকার। আজ সকালে সেই কলাবতীর বয়ান এসে গেছে, তিনি সাফ জানিয়েছেন ৩০ লক্ষ টাকা সাহায্য করেছেন রাহুল গান্ধী, ঘর হয়েছে, আলো এসেছে রাহুলের দৌলতে। দু’কান কাটা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সংসদে দাঁড়িয়ে ডাঁহা মিথ্যে বলে গেলেন। এটাই বিজেপি, এটাই আরএসএস। এটাই তাদের হোয়াটসঅ্যাপ ইউনিভার্সিটি। কিন্তু আমাদের মনে পড়ে গেল এই বাংলাতে এসে বাঙালির ঘরে রুটি দিয়ে আলুপোস্ত খাওয়ার সেই ছবি। হা হা হেসেছিলাম, রুটি দিয়ে আলুপোস্ত দেখে, তা হোক, কিন্তু এখন সেই পরিবারের নামও কি মনে আছে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর? তারপর তিনি জানালেন, মোদিজি কত চিন্তিত মণিপুর নিয়ে, তাঁর এই চিন্তার কথা তো দেশ জানে না, তাহলে অমিত শাহ কীভাবে জানলেন? জানলেন কারণ মোদিজি একদিন ভোররাত ৪টেয় আর একদিন ভোর ছ’টায় অমিত শাহকে ঘুম ভাঙিয়ে মণিপুর নিয়ে আলোচনা করেছেন। কী আশ্চর্য, একদিনও দিনের বেলায় সম্ভব হল না? আলোচনার জন্য ফাইল দরকার, আমলাদের দরকার, তাঁদের কাছে তথ্য আছে, মণিপুরের দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক দরকার। মণিপুরে একটা সরকারি অফিসে আগুন জ্বলেছে এমন তো নয়, দু’ তিন জন মারা গেছে এমন তো নয়। দেড়শো মানুষ মারা গিয়েছে, নারীদের গণধর্ষিতা হতে হয়েছে, উনি একদিন ভোর চারটেয় একদিন ছ’টায় ফোন করেছেন। তাহলে তো হয়েই গেল, বিরাট কাজ করেছেন, তো এই দুটো ফোনে শান্তি ফিরেছে? অপরাধীদের চিহ্নিত করা গেছে? এখনও আগুন জ্বলছে, ৬০ হাজার মানুষ গৃহহারা। গুজরাত নির্বাচনের আগে মোরবিতে পুল ভেঙে পড়ল, ১৩৫ জন মারা গেলেন, মোদিজি কি রাত দুটোয় ফোন করেছিলেন? না তো, উনি গিয়েছিলেন, কারণ ভোট ছিল সামনে। ওড়িশার বাহানাগাতে দুর্ঘটনা, উনি কি ফোন করেছিলেন? না, নিজে গিয়েছিলেন। মণিপুরে যাচ্ছেন না কেন? ছোটা মোটা ভাই কিছু বললেন তা নিয়ে? একটা কথাও বলেননি। তবে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিজেই জানিয়ে দিয়েছেন যে দেশের প্রধানমন্ত্রী ভোর চারটে আর ভোর ছ’টায় ফোন করে মণিপুর নিয়ে আলোচনা করেছেন। যিনি নির্বাচনের সময় মাথায় রকমফের টুপি পরে মণিপুরেই পাঁচ বার ভাষণ দিতে যান, তিনি এতবড় এক ঘটনার পরে কী করেছিলেন? ওই যে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, উনি সাকুল্যে দুটো ফোন করেছিলেন। এবং অনাস্থা ভোটের গোটাটা জুড়ে ছিল ইন্ডিয়া জোট নিয়ে বিজেপি সদস্যদের সমালোচনা, তীব্র সমালোচনা। মাও সে তুং বলেছিলেন, শত্রুরা সমালোচনা করলে বোঝা যায়, আপনি ঠিক রাস্তায় রয়েছেন। হ্যাঁ, ইন্ডিয়া সঠিক পথেই হাঁটছে।        

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
TMC | Election | ২৬-এর আগে ফের বিরাট জয় তৃণমূলের, বিরোধীরা কোথায়?
00:00
Video thumbnail
Mamata Banerjee | Nabanna | রথযাত্রা নিয়ে আজ নবান্নে বৈঠক করবেন মমতা, কী কী বিষয়ে আলোচনার সম্ভাবনা?
00:00
Video thumbnail
Mamata Banerjee | বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রীর ভাষণ, প্রকাশ হতে পারে ভাষণের সংকলন
00:00
Video thumbnail
Weather Update | সক্রিয় হচ্ছে মৌসুমী বায়ু, ফের ভাসবে কোন কোন জেলা? দেখুন বিগ আপডেট
00:00
Video thumbnail
Bhangar | TMC | ভাঙড়ে নওশাদ-শওকত চ্যালেঞ্জ পাল্টা চ্যালেঞ্জ, কাশেমের যোগদানে TMC-র স্ট্র্যাটেজি কী?
00:00
Video thumbnail
Volodymyr Zelenskyy | হার আসন্ন, যে কোনও মুহূর্তে দেশ ছাড়বেন জেলনস্কি, দেখুন স্পেশাল রিপোর্ট
00:00
Video thumbnail
NATO | তৃতীয় বিশ্বযু/দ্ধ শুরু হবে কী নিয়ে? জেনে নিন স্পেশাল রিপোর্টে
00:00
Video thumbnail
Weather Update | কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ধেয়ে আসছে প্রবল ঝড়, লন্ডভন্ড হবে কোন কোন জেলা?
00:00
Video thumbnail
TMC | Election | ২৬-এর আগে ফের বিরাট জয় তৃণমূলের, বিরোধীরা কোথায়?
02:56
Video thumbnail
Ariyan Khan | আরিয়ান খান গ্রে/ফতা/র হতেই নাম বলে দিল বড় নেতার
02:23:07