কলকাতা: কার্তিক মাসের অমাবস্যা তিথিতে পালিত হয় কালীপুজো (kalipuja 2023)। আর এর ঠিক আগের রাত হল ভূত চতুর্দশী (Bhut Chaturdashi)। গোটা ভারতেই এই দিনটি নানা উপাচারে পালন করেন হিন্দুরা। পূর্ব ভারতে একে ভূত চতুর্দশী বলা হলেও দক্ষিণ ভারতে একে বলে নরক চতুর্দশী। তবে, এই ভূত চতুর্দশী ঘিরে জড়িয়ে রয়েছে বেশ কয়েকটি নিয়মকানুন। এদিন দুপুরে চোদ্দ রকমের শাক খেতে হয় এবং সন্ধ্যায় ১৪টি প্রদীপ জ্বালাতে হয়। অনেকে বলে থাকেন ভূত চতুর্দশীর দিন পরলোকগত চৌদ্দ পুরুষের আত্মারা নিজ নিজ বাড়িতে নেমে আসেন। তাই তাদের আসা যাওয়ার পথকে আলোকিত করতেই নাকি এই দিন সন্ধ্যাবেলা প্রদীপ জ্বলানোর রীতি।
হিন্দু পুরাণে বলা আছে, এই তিথিতে সন্ধ্যা নামার পর পরই অশরীরী প্রেতাত্মারা বের হয়ে আসেন। তাদের হাত থেকে নিস্তার পেতে সন্ধ্যায় পর গৃহস্থের বাড়িতে ১৪টি প্রদীপ জ্বালানোর নিয়ম। তবে যে মতটি সর্বাধিক প্রচলিত সেটি হল, নরকাসুররূপী রাজা বলি তখন সাধনবলে শক্তি অর্জন করে স্বর্গ, মর্ত্য ও পাতাল জয় করে হত্যাযজ্ঞে মেতে উঠেছিল, এমনকি দেবতারাও রেহাই পাচ্ছিল না। এই অবস্থায় দানব রাজা বলির তাণ্ডব থামাতে দেবগুরু বৃহস্পতি ভগবান বিষ্ণুকে একটা উপায় করতে বললেন। তখন বামন রূপে ভগবান বিষ্ণু বলি রাজার কাছে এসে তিন পা জমি ভিক্ষা চাইলেন। দানবরাজ বলি প্রথমেই বুঝেছিলেন এই বামন আর কেউ নন, স্বয়ং বিষ্ণু। কিন্তু এরপর না বোঝার ভান করে তিনপদ জমি দানের চুক্তিতে রাজি হয়ে যান।
আরও পড়ুন: দীপাবলির বাজারে বাহারি চিনা আলোকে টেক্কা মাটির প্রদীপ
এরপর, ভগবান বিষ্ণু দুপা দিয়ে স্বর্গ ও মর্ত্য দখল করে নিলেন। আর, নাভি থেকে বেরিয়ে আসা তৃতীয় পা পাতালে না-দিয়ে বলির মাথায় দেন। আর, পাতাল শাসনের ভার বলির হাতে তুলে দেন। পাশাপাশি, তিনি আশীর্বাদ করেন, বলি এখন থেকে মর্ত্যেও পুজো পাবেন। সেই থেকে বলির পাতালই হল আবাস। এতো গেল, কিন্তু প্রশ্ন হল ভূত চতুর্দশীর সঙ্গে বলিরাজার সম্পর্ক কী? বলিরাজ জেনে বুঝেও দান করেছিলেন বলে, ভগবান বিষ্ণু রাজা বলির নরকাসুর রূপের পুজোর প্রবর্তন করেন।
নরকাসুররূপী রাজা বলি কালীপুজোর আগের দিন ভূত চতুর্দশীর তিথিতে অসংখ্য অনুচর-সহ ভূত, প্রেত নিয়ে মর্ত্যে নেমে আসেন পুজো নিতে। আর মানুষ পরলোক জগতের ভূত প্রেতকে দূরে রাখতে ১৪ শাক খেয়ে, ১৪ প্রদীপ জ্বালিয়ে এবং ১৪ ফোঁটা দিয়ে এই তিথিকে উদযাপন করে থাকে বহুকাল থেকেই। তবে, বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা অনুসারে, এই সময় ঋতু পরিবর্তনের জন্য শরীর খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে এবং ১৪ প্রদীপ জ্বালানো হয় কারণ এই সময় শ্যামাপোকার উপদ্রব হয়, তা থেকে মুক্তি পেতেই জ্বালানো হয় প্রদীপ।
দেখুন আরও অন্য খবর: