মুম্বই: নিজের হাতে গড়া জাতীয়তাবাদী কংগ্রেস পার্টির (এনসিপি) সভাপতির পদ থেকে সরে দাঁড়ালেন প্রবীণ রাজনীতিবিদ শরদ পাওয়ার। মঙ্গলবার নিজেই সাংবাদিকদের জানিয়েছে সে কথা পাওয়ার। তবে প্রবীণ মরাঠা রাজনীতিবিদের বদলে তাঁর জায়গায় কাকে বসানো হচ্ছে সেই নিয়ে আপাতত এনসিপির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনও ঘোষণা হয়নি। পওয়ার এনসিপির সভাপতির পদ ছাড়ার সিদ্ধান্তের ঘোষণায় শুধু মহারাষ্ট্র নয়, গোটা দেশেই রাজনৈতিক মহলে নানা চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছে। তিনি কি রাজনীতি থেকে সন্ন্যাস নিতে চান, না কি এর পিছনে অন্য কোনও ছক আছে তা নিয়েও চলছে বিভিন্ন জল্পনা। লোকসভা ভোটার মুখে যখন বিজেপি বিরোধী জোট নিয়ে বিস্তর আলোচনা চলছে, তখন পওয়ার এই সিদ্ধান্তে বিজেপি বিরোধী শিবিরও বিস্মিত।
মাসখানেক ধরেই শরদ পাওয়ারের এনসিপিতে নানা ডামাডোল চলছে। পাওয়ারের ভাইপো অজিত পাওয়ারের বিজেপির সঙ্গে জোট বেঁধে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী হবেন বলে রাজনৈতিক মহলে নানা চর্চা চলছিল। বলা হচ্ছিল এনসিপির বহু বিধায়ক অজিত-বিজেপির এই নতুন খেলার সঙ্গী হবেন। মাঝখানে বেশ কিছু দিন অজিতের খোঁজও মিলছিল না। পরে অবশ্য অজিতই সব জল্পনায় জল ঢেলে দিয়ে জানান, এসব কিছুই হচ্ছে না। শরদ পাওয়ারও জানিয়েছিলেন, ভাইপো এমন কোনও উদ্যোগ নিচ্ছেন না। তবে কাকা-ভাইপো এমন দাবি করলেও মহারাষ্ট্রের রাজনৈতিক মহলে এ নিয়ে এখনও জল্পনা অব্যাহত রয়েছে।
আরও পড়ুন: Tillu Tajpuriya | তিহার জেলে বন্দিদের সংঘর্ষে নিহত গ্যাংস্টার তিল্লু তাজপুরিয়া
এরই মধ্যে মঙ্গলবার শরদ পাওয়ার এনসিপির সভাপতির পদ ছাড়ার ঘোষণা করায় রাজনৈতিক মহলে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। এদিন আত্মজীবনী ‘লোক মাজে সঙ্গতি’র দ্বিতীয় সংস্করণের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেই পাওয়ার আচমকাই সভাপতি পদ ছেড়ে দিচ্ছেন বলে ঘোষণা করেন। তাতে উপস্থিত সকলেই অবাক হয়ে যান। মুহূর্তের মধ্যে আলোড়ন পড়ে মহারাষ্ট্রের সর্বত্র। পওয়ার জানান, অনেক দিন হল তিনি এনসিপির সভাপতির পদ আঁকড়ে রয়েছেন। এবার অন্য কেউ এই পদে বসুন। পাশাপাশি এই প্রবীণ রাজনীতিবিদ জানিয়ে দেন, তিনি রাজনীতি ছাড়ছেন না। তাঁর রাজ্যসভার সদস্যপদের মেয়াদ আরও তিন বছর রয়েছে। আগামী দিনে তিনি মানুষের সঙ্গে মানুষের হয়েই কাজ করে যেতে চান। পওয়ার এই আকস্মিক ঘোষণায় এনসিপির অন্দরেও নানা প্রশ্ন উঠেছে। তবে তিনি রাজনীতি ছাড়ছেন না বলে জানানোয় দলের নেতা-কর্মী -সমর্থকরা আশ্বস্ত হয়েছেন।
কংগ্রেস ছেড়ে এনসিপির প্রতিষ্ঠা করার পর থেকেই শরদ দলের সভাপতি পদে রয়েছেন। তাঁর কয়েক দশকের রাজনৈতিক জীবন ঘটনার ঘনঘটায় ভরা। চারবার তিনি মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রীর পদে বসেছেন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীও হয়েছেন একাধিকবার। ২০০৪ সালে সোনিয়া গান্ধীর বিদেশিনী বিতর্ককে কেন্দ্র করে শরদ কংগ্রেস ছাড়েন। এনসিপি প্রতিষ্ঠা করেন। শিবসেনার প্রতিষ্ঠাতা বালাসাহেব ঠাকরের সঙ্গে তাঁর বরাবরের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। পরে অবশ্য বালাসাহেবের মৃত্যুর পর তাল কেটে যায়। শিবসেনা বিজেপির নেতৃত্বধীন এনডিএর সঙ্গী হয়। শরদের উদ্যোগেই কংগ্রেস, এনসিপি এবং শিবসেনার মহাবিকাশ আঘারি জোট মহারাষ্ট্র সরকার গড়ে। গত বছর শিবসেনার ভাঙ্গনের ফলে জোট সরকারের পতন হয়। বিজেপি এবং শিবসেনার (একনাথ শিন্ডে গোষ্ঠী) সরকার গঠন হয়।