ইম্ফল: দেখামাত্রই গুলির নির্দেশ দিল মণিপুর প্রশাসন (Manipur Govt)। বৃহস্পতিবার রাজ্য সরকার এ ব্যাপারে নোটিসও জারি করেছে। ইতিমধ্যেই উত্তর-পূর্বের রাজ্যে ৫৫কলাম সেনা নামানো হয়েছে। রাজ্যের আট জেলায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। স্পর্শকাতর জায়গাগুলিতে পাঁচ দিনের জন্য ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মেইতি সম্প্রদায়ের তফসিলি জাতিভুক্ত করার দাবিতে বুধবার রাত থেকেই অগ্নিগর্ভ উত্তর-পূর্বের এই রাজ্যে।
বুধবার রাতেই আদিবাসীদের মিছিল ঘিরে শুরু হয় অশান্তি, বিক্ষোভ। বিক্ষোভের আগুন নেভাতে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে ব়্যাফ, সেনা, আধা সেনা ও অসম রাইফেলসের বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে মণিপুরের বিভিন্ন এলাকায়। রাজ্যের অশান্ত পরিবেশকে নিয়ণন্ত্রে আনতে ইতিমধ্যেই আট জেলায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। বন্ধ করে দেওয়া দিয়েছে ইন্টারনেট পরিষেবা। তারপরও ১৪ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে অশান্তি বজায় রয়েছে মণিপুরের একাধিক এলাকায়। এবার কোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি দেখলেই গুলি করার নির্দেশ জারি করল মণিপুর প্রশাসন।
মণিপুরের রাজ্যপাল সমস্ত জেলাশাসক, সাব ডিভিশনাল ম্যাজিস্ট্রেটদের চূড়ান্ত পরিস্থিতিতে দেখামাত্র গুলি চালানোর সরকারি নির্দেশে দিয়েছেন। মণিপুর রাজ্যপালের তরফ থেকে যে নির্দেশিকা দেওয়া হয়েছে, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, সাব-ডিভিশনাল অফিসার ও সমস্ত একজিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ও স্পেশাল এগজিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটদের নির্দেশ বলা হয়েছে, চরম কোনও পরিস্থিতে, যখন বোঝানো, সতর্ক করা ও কম ফোর্সে ব্যবহার কাজে আসবে না, তখন ভারতীয় আইন সিআরপিসি, ১৯৭৩-এর আওতায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ না করতে পারলে দেখা মাত্র গুলি করার নির্দেশ দেওয়া হল৷’
আরও পড়ুন:Mamata Banerjee | নিজেকে জীবন্ত লাশ বললেন মমতা, কিন্তু কেন
I am deeply concerned about the situation in Manipur. It is not the time for politics. Politics & elections can wait but our beautiful state Manipur has to be protected first. Thus I urge the Prime Minister & Home Minister to first take care of Manipur, restore peace there. I…
— Mamata Banerjee (@MamataOfficial) May 4, 2023
মণিপুরের ঘটনায় উদ্বেগপ্রকাশ করে টুইট করেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এটা রাজনীতি করার সময় নয়। রাজনীতি এবং নির্বাচন অপেক্ষা করতে পারে, কিন্তু এখন মণিপুরকে রক্ষা করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে মণিপুরকে দেখার আর্জি জানিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিকে উত্তর-পূর্বের রাজ্যের এই পরিস্থিতির বিষয়ে নজর রাখতে বৃহস্পতিবারই মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংয়ের সঙ্গে কথা বলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। এদিকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে মণিপুরে শান্তি স্থাপনের জন্য অনুরোধ করেছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীও।
মণিপুর প্রশাসন সূত্রে খবর, বুধবার রাতের দিকে নতুন করে উত্তেজনা ছড়ায় রাজধানী ইম্ফল, চূড়াচাঁদপুর এবং কাংপোকপিতে। এই বিক্ষোভের জেরে একাধিক বাড়িতে আগুনও ধরে যায়। বিষ্ণুপুর ও চুরাচন্দপুর জেলায় মোতায়েন থাকা ভারতীয় সেনা, আধা সেনার তরফে একটি বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দাদের সরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। প্রায় ৪ হাজার গ্রামবাসীকে সেনার অস্থায়ী আশ্রয় শিবিরে জায়গা দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, পাঁচ দিন মণিপুর (Manipur) জুড়ে ইন্টারনেট ও মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবা (Internet and Mobile Internet এervices) বন্ধ রাখা হয়েছে। বুধবার উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্য (North-Eastern State) মণিপুরের বিষ্ণুপুর (Bishnupur) এবং চূড়াচাঁদপুরে (Churachandpur) নতুন করে হিংসার ঘটনা (Violence Incident) ঘটেছে একাধিক স্থানে। তার জেরে কর্তৃপক্ষ (Authorities) এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এছাড়াও, রাজ্যে সংশ্লিষ্ট স্থানে কার্ফু (Curfew) জারি করা হয়েছে বলে খবর। স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে সংবাদমাধ্যমকে জানানো হয়েছে, চূড়াচাঁদপুর এবং বিষ্ণুপুর জেলায় ফৌজদারি কার্যবিধি কোড অর্থাৎ সিআরপিসি’র (Code of Criminal Procedure – CrPC) ১৪৪ ধারার অধীনে নিষেধাজ্ঞামূলক আদেশ জারি (Imposed Prohibitory Orders) করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। বিধি ও নিয়ম অনুসারে ১৪৪ ধারা জারি করা হলে, সংশ্লিষ্ট এলাকায় পাঁচ বা ততোধিক ব্যক্তি দল বেঁধে রাস্তায় বেরতে পারবেন না। এছাড়া, বৈধ লাইসেন্স ছাড়া লাঠি, পাথর, আগ্নেয়াস্ত্র ইত্যাদি যদি কারও কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়, তাহলে কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেবে আইন অনুযায়ী।
প্রসঙ্গত, মণিপুরের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে রাজ্যের বনাঞ্চল এবং জলাভূমির উপর জনজাতি মানুষদের অধিকার কেড়ে নেওয়ার অভিযোগে আন্দোলন চলছিলই। প্রশাসনের অনৈতিক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে মিছিলের ডাক দিয়েছিল রাজ্যের জনজাতি ছাত্র ইউনিয়ন। সম্প্রতি সে রাজ্যের মেইতেই সম্প্রদায় তাদের তফসিলি উপজাতিভুক্ত করার দাবি তুলেছে। গত ২৮ এপ্রিল মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংয়ের (Manipur Chief Minister N Biren Singh) একটি অনুষ্ঠানমঞ্চ ও উদ্বোধনস্থল আগুনে ছাই করে দেয় আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মিলিত ফোরাম (Tribal Leaders Forum)। বিজেপি (BJP) নেতৃত্বাধীন মণিপুর সরকারের আচরণের বিরুদ্ধে এই প্রতিবাদ বলে মনে করা হচ্ছে।