নয়াদিল্লি: কেন্দ্রের অঙ্গুলিহেলনে ভোট এলেই বিরোধী নেতাদের টার্গেট করে সিবিআই (CBI targets Opposition Party) ও ইডি (Enforcement Directorate)। বিরোধী নেতাদের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলিকে কাজে লাগানোর অভিযোগ নতুন কিছু নয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে চরণজিৎ সিং চন্নী– একাধিক বিরোধী নেতা মোদি সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেগেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (PM Modi) কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নস্যাৎ করে দেন। সংবাদ সংস্থা এএনআইকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মোদি দাবি করেন, ‘এই দুই সংস্থাই স্বাধীন ভাবে কাজ করে। তদন্ত প্রক্রিয়া চলাকালীন নির্বাচন যদি চলে আসে, ওই সংস্থাগুলির কী-ই করার আছে! এর মধ্যে সরকারের কোনও ভূমিকা নেই।’
নরেন্দ্র মোদি অস্বীকার করলেও সাম্প্রতিক সময়ের ঘটনাপ্রবাহে নজর রাখলেই বোঝা যায়, ভোট এলেই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলির তৎপরতা বাড়ে। সরাসরি বিরোধী নেতা বা বিরোধী নেতা ঘনিষ্ঠদের নিশানা করা হয়। সামনেই পঞ্জাবে বিধানসভা ভোট। তার ঠিক ১৬ দিন আগে, ৪ ফেব্রুয়ারি ইডি গ্রেফতার করে পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী চরণজিত্ সিং চন্নীর ভাইপো ভূপিন্দর সিংকে। তা-ও আবার ২০১৮ সালের পুরনো, বেআইনি খনি সংক্রান্ত এক মামলায়।
গত বছরের নভেম্বরে ইডি গ্রেফতার করেছিল পঞ্জাবের প্রাক্তন বিধায়ক, কংগ্রেস নেতা সুখপাল সিং খাইরাকে। ২০১৫ সালের মাদক পাচার মামলায় সুখপালকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। একই মামলায় গত সেপ্টেম্বরে আপ-এর জাতীয় সম্পাদক পঙ্কজ গুপ্তাকেও সমন পাঠানো হয়েছিল।
উত্তরপ্রদেশে নির্বাচনের ঠিক মাসখানেক আগে, ৩ জানুয়ারি সমাজবাদী পার্টির বিধায়ক, ব্যবসায়ী পুষ্পরাজ ওরফে পম্পি জৈনের সঙ্গে যোগ রয়েছে, এমন ৩০টি জায়গায় অভিযান চালানো হয়। তাঁর বিরুদ্ধে করফাঁকির অভিযোগ ওঠে। গত বছর তামিলনাড়ু নির্বাচনের ঠিক আগে-আগে, এপ্রিল মাসে ডিএমকে প্রধান এমকে স্টালিনের মেয়ের চেন্নাইয়ের বাড়িতে হানা দেয় আয়কর দফতরের আধিকারিকরা। আয়কররে এই অভিযান নিয়ে স্টালিনের অভিযোগ ছিল, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
একইরকম ভাবে পশ্চিমবঙ্গে গত বছরের ২ মে, নির্বাচনের ঠিক আগে, ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে সিবিআই সমন পাঠিয়েছিল রুজিরা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। কয়লা পাচার মামলায় জেরা করতেই মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রীকে সমন পাঠানো হয়েছিল।
পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনের মাঝপথেই এনআইএ ২০০৯ সালের একটি মামলায় গ্রেফতার করে ছত্রধর মাহাতোকে। লালগড়ের সন্ত্রাসবিরোধী জনসাধারণের কমিটির নেতা প্রাক্তন এই নেতা ভোটের সময় শাসকদলের হয়ে প্রচার করছিলেন। কেরলের ক্ষেত্রেও নির্বাচনের আগে আগে চাপ বাড়ানো হয়েছিল মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নের উপর। সোনা পাচার মামলার সূত্র ধরে বিজয়নের প্রাক্তন প্রধান সচিবের বিরুদ্ধে টেরর ফান্ডিংয়ের অভিযোগে এফআইআর করেছিল এনআইএ। নির্বাচনের তিন মাস আগে ইডি তাঁকে গ্রেফতারও করেছিল। অর্থপাচারের অন্য আর একটি মামলায় সিপিআইএমের কেরল রাজ্য সম্পাদকের ছেলেকেও গ্রেফতার করেছিলেন ইডির আধিকারিকরা।
আরও পড়ুন: Madan Mitra: দল শাস্তি দিলে মাথা পেতে নেব, ফেসবুক বিতর্কের পর বলছেন মদন
বিদেশি লেনদেন নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে গত বছরেরই মার্চে ইডি সমন পাঠিয়েছিল কেরল ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড বোর্ডের সিইও ও ডেপুটি সিইওকে। এই বোর্ডের আবার চেয়ারম্যান বিজয়ন। ২০২০ সালের জুলাইয়ে, রাজস্থানে অশোক গেহলতের সরকারকেও সমস্যায় পড়তে হয়। একদিকে তাঁর ডেপুটি সচিন পাইলটের বিদ্রোহ, অপর দিকে গেহলতের ভাই অগ্রসেনের বাড়িতে ইডির হানা। ওই বছরেরই সার সংক্রান্ত এই মামলাতেই ২২ জুলাই রাজস্থান, পশ্চিমবঙ্গ, গুজরাত ও দিল্লির ১৩টি জায়গায় একযোগে রেইড করেছিল ইডি। অগ্রসেন গেহলত তাঁর সংস্থা ‘অনুপম কৃষি’র বিরুদ্ধে এই মামলা এখনও চলছে।
২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের আগে বেআইনি ভাবে উত্তরপ্রদেশে বালি তোলা নিয়ে মামলা করে। উত্তরপ্রদেশের তৎকালীন খনি মন্ত্রীদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলে সিবিআই। ২০১২ থেকে ২০১৬ সালের ওই সময়টায় খনি দফতরের দায়িত্বে ছিলেন অখিলেশ যাদব ও গায়ত্রী প্রজাপতি। ২০১৬ সালে হাইকোর্টই এই মামলাটি সিবিআইয়ের হাতে তুলে দিয়েছিল।