দিল্লি: দিল্লির (Delhi) রোহিণী আদালতে (Rohini Court) রোমহর্ষক শুটআউটের ঘটনা কোনও হিন্দি সিনেমার চিত্রনাট্যকেও হার মানাবে৷ আইনজীবীর পোশাকে আদালতে ঢুকে জিতেন্দর মানকে গুলিতে ঝাঁঝরা করে দেয় অজ্ঞাতপরিচয় দুই দুষ্কৃতী৷ আর তার মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে গোটা দেশ জেনে যায় কুখ্যাত এক গ্যাংস্টারের নাম৷ জিতেন্দর গোগী (Jitender Gogi)৷ দিল্লির অপরাধ জগতে প্রবেশের কয়েক বছরের মধ্যে পুলিশের খাতায় মোস্ট ওয়ান্টেড গ্যাংস্টার হয়ে উঠেছিল সে৷ খুন, জখম, অপহরণ, তোলা আদায়, অস্ত্র পাচার, জমি দখল কোন কাজটা না গোগী বাকি রাখেনি৷ তাকে ধরার জন্য ১০ লক্ষ টাকা ইনামের ঘোষণা করেছিল পুলিশ৷ সেই গোগীকেই বিচারালয়ের ভেতর গুলি খেয়ে মরতে হল৷
আরও পড়ুন: কৃষি বিল ইস্যুতে মার্কিন মধ্যস্থতার আর্জি, বাইডেনের দ্বারস্থ হলেন টিকাইত
দিল্লি এলাকার এক সময়ের ত্রাস ছিল গোগী৷ অথচ পড়াশোনায় সে বরাবরই ভালো ছাত্র ছিল৷ পড়ত দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রদ্ধানন্দ কলেজে৷ ২০১০ সালে ওই কলেজের ছাত্র ইউনিয়নের নির্বাচনের একটি ঘটনা গোগীর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়৷ গোগীর বন্ধুরা যাতে ওই নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ায় সেজন্য তাদের পিটিয়েছিল টিল্লু গ্যাংয়ের ছেলেরা৷ সেই থেকে টিল্লু আর গোগীর শত্রুতা শুরু৷ অথচ টিল্লু গ্যাংয়ের মাথা সুনীলের সঙ্গে এক সময় দারুণ বন্ধুত্ব ছিল গোগীর৷ কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই ঘটনার পর সুনীলের চরম শত্রু হয়ে যায় সে৷ তৈরি হয় গোগী গ্যাং৷
বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরিয়ে টিল্লু আর গোগী গ্যাংয়ের সংঘর্ষ রাজপথে নেমে আসে৷ যা দিল্লি পুলিশের মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায়৷ পুলিশের একটা সূত্র জানিয়েছে, গত দশ বছরে দু’পক্ষের গুলির লড়াইয়ে দুই দলেরই ১০ সদস্য মারা গিয়েছে৷ দুই দল একে অপরের দিকে বন্দুক তাক করেই থাকত৷ ভাবখানা এমন ছিল যে দেখলেই গুলি করে মেরে দেবে৷
আরও পড়ুন: দীর্ঘদিন গা ঢাকা দিয়েও লাভ হল না, পুলিশের জালে শহরের কুখ্যাত গ্যাংস্টার সোনা পাপ্পু
অপরাধ জগতে প্রবেশের পর নাম-ডাক হয় গোগীর৷ ২০১৬ সালে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ৷ ততদিনে জিতেন্দর গোগী থেকে গ্যাংস্টার গোগী হয়ে উঠেছিল৷ জেলের ভেতরে বসেই বিভিন্ন নাশকতামূলক কাজের ছক কষত৷ তবে একদিন পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে পালিয়ে যায় সে৷ পালানোর সময় তার মাথার দাম ছিল ৪ লক্ষ টাকা৷ সময় যত বাড়তে থাকে গোগীর শক্তিও বাড়তে থাকে৷ ২০১৭ সালে খবরের শিরোনামে চলে এসেছিল সে৷ ওই বছর অক্টোবরে সে খুন হরিয়ানার জনপ্রিয় লোকশিল্পী হর্ষিতা দাহিয়াকে৷ পরের বছর বুরারির ব্যস্ত রাস্তায় বীরেন্দ্র মান নামে এক কুখ্যাত দুষ্কৃতীকে পর পর গুলি ছুড়ে খুন করেছিল গোগী৷ ওই ঘটনার কথা মনে করে দিল্লি পুলিশের এক অফিসার জানান, বীরেন্দ্রর বুকেই ২০টা বুলেট মেরেছিল গোগী৷ ওই সংঘর্ষের সময় পথচারীদের অনেকেই জখম হয়েছিলেন৷ ১৯টি খুন, তোলাবাজি, অপহরণ, ডাকাতি-সহ একাধিক অপরাধমূলক ঘটনায় নাম জড়িয়ে যায় জিতেন্দর৷