রাজ্যসভা ভোটে রাজস্থানে মুখ পুড়ল বিজেপির। কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা এবং মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলত ভেল্কি দেখালেন। তাঁর বাবা ম্যাজিশিয়ান ছিলেন। অশোকও ম্যাজিক জানেন। ভোটের দুদিন আগে তিনি নাকি উদয়পুরের হোটেলে রাখা নিজের দলের বিধায়কদের ম্যাজিক দেখিয়ে মনোরঞ্জন করেছিলেন। আর শুক্রবার রাজ্যসভার ভোটে তিনি সত্যিই ম্যাজিক দেখালেন। দলীয় বিধায়কদের ধরে রাখার কৃতিত্ব বলতে গেলে তাঁর একাই। অনেক চেষ্টা করেও বিজেপি কংগ্রেস বিধায়কদের ভাঙাতে পারেনি। সব মিলিয়ে হাল ভাঙা কংগ্রেসের পালে এই দুর্যোগের মধ্যেও তিনি খানিকটা হলেও হাওয়া জোগালেন।
সব মিলিয়ে দলে অশোকের গুরুত্ব আরও বাড়ল। দলের অনেকে এখন বলতেই পারেন, রাহুল গান্ধী রাজস্থানের ঘরোয়া দ্বন্দ্বে অশোক গেহলতের পাশে থেকে ভুল কিছু করেননি। সচিন পাইলট এখন কী করেন, সেটাই দেখার জন্য তাকিয়ে আছে রাজনৈতিক মহল।
ভোটের অনেক আগে থেকেই রাজস্থানের এই কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রী বলে আসছিলেন, আমাদের বিধায়কের এককাট্টা আছেন। বিজেপি দল ভাঙাতে পারবে না। তবু সাবধানের মার নেই। তাই তিনি কোনও ঝুঁকি নেননি। দলের বিধায়কদের রাজস্থান থেকে উদয়পুরের হোটেলে নিয়ে রেখেছিলেন। তাঁর চির প্রতিদ্বন্দ্বী দলের যুব নেতা সচিন পাইলটও অবশ্য দাবি করেছিলেন, তিনটি আসনেই কংগ্রেস প্রার্থীরা জিতবেন। সেই দাবিই মিলে গেল।
ক্রস ভোটিংয়ের আশা করেছিল বিজেপি। সেই ক্রস ভোটিং হল ঠিকই। তবে তা বিজেপির বিরুদ্ধে। দলেরই এক বিধায়ক কংগ্রেসের তৃতীয় প্রার্থীকে ভোট দিলেন। শুধু তাই নয়। ভারতীয় ট্রাইবাল দলের দুই বিধায়ক বিজেপির হুইপ উপেক্ষা করেই কংগ্রেস প্রার্থীকে ভোট দিলেন। বিজেপির আশা ছিল, ১৩ জন নির্দল বিধায়কের মধ্যে অন্তত নয়জনের ভোট তাদের দিকে আসবে। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। মাত্র চারজনের ভোট পেয়েছেন বিজেপি সমর্থিত নির্দল প্রার্থী সুভাষ চন্দ্র। তিনিও ভোটের আগে দাবি করেছিলেন, নির্দলদের ভোট তাঁর দিকেই যাবে। ভাঙন ধরবে কংগ্রেসও। কিন্তু সেসব কিছুই হয়নি।
আরও পড়ুন: Rajya Sabha Election: রাজস্থানে রাজ্যসভায় ৩টি আসনে জয়ী কংগ্রেস, বিজেপির ঝুলিতে ১টি
রাজস্থানের চারটি আসনের মধ্যে তিনটি আসনে অনায়াসে জিতে যান কংগ্রেসের রণদীপ সিং সুরজেওয়ালা, মুকুল ওয়াসনিক এবং প্রমোদ তিওয়ারি। চতুর্থ আসনে জিতেছেন বিজেপির ঘনশ্যাম তিওয়ারি। কংগ্রেসকে বেকায়দায় ফেলার জন্যই দল ভাঙানোর উপর ভরসা করে বিজেপি একটি বিশেষ বৈদ্যুতিন চ্যানেলের মালিক সুভাষ চন্দ্রকে নির্দল হিসেবে দাঁড় করিয়ে দেয়। তাঁর সঙ্গে বিজেপির ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কথা সবাই জানে। তিনি বিজেপির হয়েই আগে রাজ্যসভার সদস্য ছিলেন।
সূত্রের খবর, রাজস্থানে জেতার জন্য একজন প্রার্থীর দরকার ছিল ৪১ টি ভোট। ওই রাজ্যে বিজেপির বিধায়ক সংখ্যা ৭১। ঘনশ্যামের জেতার পরেও ৩০ টি ভোট বাড়তি ছিল বিজেপির। সেই ৩০ টি ভোট ধরে বাইরের আরও ১১ টি ভোট দরকার ছিল নির্দল প্রার্থীকে জেতানোর জন্য। কিন্তু সেই বাড়তি ভোট জোগাড় করতে পারেনি বিজেপি। ফলে তাদের চাল ব্যর্থ হয়ে যায়।
কংগ্রেসের দুই প্রার্থী জেতার পরে তাদের বাড়তি ভোট ছিল মাত্র ১৬ টি। তৃতীয় প্রার্থীর জন্য প্রয়োজন ছিল আরও ১৫ টি ভোট। অশোক গেহলত নিজের ক্যারিশমায় নির্দল ও বিজেপি ভাঙিয়ে কাজ হাসিল করে ফেলেন।
তবে রাজস্থানে বাজিমাত করতে পারলেও দক্ষিণী রাজ্য কর্ণাটকে সুবিধা করতে পারেনি কংগ্রেস। সেখানে জেডিএস এবং কংগ্রেসের বিরোধকে ব্যবহার করে কাজ হাসিল করেছে বিজেপি। কংগ্রেসের জয়রাম রমেশ ছাড়াও প্রার্থী ছিলেন মনসুর আলি খান। কংগ্রেসের এক সময়কার জোটসঙ্গী জেডিএস দ্বিতীয় আসনে প্রার্থী না দিতে অনুরোধ করেছিল কংগ্রেসকে। কিন্তু সেই অনুরোধ রাখেনি কংগ্রেস। জেডিএস প্রার্থী দিয়েছিল। এই দুই দলের গোলমালের ফয়দা লুটেছে বিজেপি। সেই সুযোগে বিজেপির তৃতীয় প্রার্থী জিতে যান। তার মধ্যে আবার জেডিএসের একজন কংগ্রেসকে ভোট দিয়েছেন। আর একজন ফাঁকা ব্যালট পেপার জমা দেন। সব মিলিয়ে এই দুই দল ঘেঁটে যায়।
আরও পড়ুন: Corona Updates: উদ্বেগ বাড়িয়ে রাজ্যে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা পার করল ১০০
মহারাষ্ট্র এবং হরিয়ানাতেও ভোট ছিল। ওই দুই রাজ্যের ভোটে বেনিয়ম নিয়ে বিভিন্ন দল নির্বাচন কমিশনে যায়। ফলে গণনা বন্ধ ছিল। মাঝরাতে গণনা শুরু হয়। তবে রাজনৈতিক মহলের কৌতূহল বেশি ছিল রাজস্থান এবং কর্ণাটক নিয়ে। চার রাজ্যের মত ১৬ টি আসনে ভোট হয় শুক্রবার।