মায়ের সঙ্গে গড়িয়াহাট গিয়ে পুজোর জামাকাপড় কেনা আর সেই মোড়কে মোড়া নতুন জামাকাপড়ের গন্ধ, আজও মনে পড়লে গায়ে কাঁটা দেয় উজ্জয়িনী মুখোপাধ্যায়ের। কাজের ব্যস্ততায় আর অনলাইনের যুগে এইভাবে পুজোর কেনাকাটা এখন অতীত। শৈশবে পুজোর এই রকম নানান টুকরো টুকরো স্মৃতি যেমন আছে তেমন আছে কৈশোরে পুজোর প্রেম, বন্ধুদের সঙ্গে দেদার আড্ডা, পুজোর হই হুল্লোড়ের স্মৃতি। আর এখন এই সবকিছুকে ছাপিয়ে গেছে লাইভ পারফর্ম্যান্স, পুজোর নতুন গান বাঁধার ব্যস্ততা। যত জনপ্রিয় হয়েছেন বেড়েছে শোয়ের সংখ্যা। ততই ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন উজ্জয়িনী মুখোপাধ্যায়।। পুজোর সময় প্রিয়জনদের সঙ্গে প্যান্ডেল হপিং তো দূরের কথা, রিহার্সাল, শো, পার্ফরম্যান্সের চাপে পুজোর এ কটা দিন কীভাবে যে কেটে যায় ঠাউর করতে পারেন না উজ্জয়িনী। ব্যস্ত শেডিউল থেকে খানিকটা সময় বার করে পুজোর আড্ডা দিলেন কলকাতা টিভি অনলাইনের সঙ্গে।
প্রশ্ন: পুজোর প্ল্যান কি?
উজ্জয়িনী মুখোপাধ্যায়: গত দু’বছর যে পরিস্থিতিতে সময় কাটিয়েছি সবাই বিশেষ করে শিল্পীরা! এ বছর ইশ্বরের আর্শীবাদে পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক। তাই এই পুজোতে অনুষ্ঠানেই থাকব। তার আগে মহালয়ার পর যে এক-দু’দিন সময় পাবএকটু পরিবারের সঙ্গে আড্ডা দিয়ে নেওয়া। দুর্গা ঠাকুরের মুখ দেখে নেওয়া।
প্রশ্ন: তা হলে মহালয়ার পর পর পরিবারের সঙ্গে মণ্ডপে মণ্ডপে গিয়ে ঠাকুর দেখার পরিকল্পনা আছে?
উজ্জয়িনী মুখোপাধ্যায়: ইচ্ছে তো আছে কিন্তু সে আর হয়ে ওঠে না। কাজের মধ্যেই সময় কেটে যাবে!
প্রশ্ন:পর পর দু’বছর কোভিড আতঙ্ক ছিল। এবছর পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক। এ বছর কি তাহলে খুবই টাইট শেডিউল?
উজ্জয়িনী মুখোপাধ্যায়: হ্যাঁ। তবে পুজোর সময়কার এই ব্যস্ততা কোভিড কালেও ছিল। তখন ভার্চুয়াল ছিল। তবে গত বছর থেকেই শোয়ের জন্য বেরোতে হচ্ছে। এ বছরও তাই। রিহার্সাল, শো, এই সবের মধ্যে কীভাবে যে সময় কেটে যায় বুঝতেই পারি না। শুধু সন্ধে বেলায় পারফর্ম্যান্সের সময় ঠাকুরের মুখ দেখতে পাই। তবে তখন ঠাকুরের মুখ দেখার সুখ কোথায় তখন চলে শো শুরুর চুড়ান্ত প্রস্তুতি, সাউন্ড চেক, থাকে পারফর্ম্যান্স নিয়ে অ্যাংজাইটি। এত বছর ধরে স্টেজ শো করার পরও একটা দর্শকের ভাল লাগা খারাপ লাগা নিয়ে একটা অ্যাংজাইটি থেকেই যায়। এই সব মিলিয়ে হই হই করে কেটে যায় পুজো।
প্রশ্ন: আর পুজোর প্রেম… বিশেষ কোনও স্মৃতি রয়েছে?
উজ্জয়িনী মুখোপাধ্যায়: (হাসি) হ্যাঁ পুজোয় প্রেম, আর সেই প্রেমের হাত ধরেই বিয়ে।
প্রশ্ন:দু’জনেই ব্যস্ত, পুজোতে কোয়ালিটি টাইম পান?
উজ্জয়িনী মুখোপাধ্যায়: পুজোতে দু’জনে মিলে প্যান্ডাল হপিং সেই অর্থে হয় না। আমার ভিড় ভালো লাগে না। তবে আগের বছর পুজোতে বৃষ্টি হওয়ায় ভিড় একটু কম ছিল তখন কাছে পিঠে ঠাকুর দেখতে বেড়িয়েছিলাম নিরিবিলিতে।বেশ ভাল লাগছিল।
প্রশ্ন: কাজের ব্যস্ততার মধ্যে পুজোর শপিং কীভাবে সারলেন ?
উজ্জয়িনী মুখোপাধ্যায়: এখন তো আর আগের মতো শুধুমাত্র পুজোর জন্যেই নতুন জামাকাপড় কেনার ব্যাপারটা নেই। সারা বছরই অনলাইন শপিং করছি। নিজের পছন্দ মতো পেয়ে যাই।
প্রশ্ন: পুজোতে কী ট্রাডিশনাল লুক, ফিউশন না ওয়েস্টার্ন? বিশেষ কোনও ডিজাইনার
উজ্জয়িনী মুখোপাধ্যায়: শাড়ি পরতে ভালই লাগে তবে লাইভ পারফর্ম্যান্সের সময় ইন্ডো ওয়েস্টার্ন ফিউশনে বেশি কমফর্টেবিল ফিল করি। ট্রেন্ডিংয়ে ফ্যাশনের মধ্যে রাফেল শাড়িটা বেশ ভাল লাগে। একটি শোয়ে বেশ কয়েক মাস আগেই পরে গিয়েছিলাম সবাই খুব প্রশংসা করেছে (হাসি)।তবে আমি সব সময় ফ্রি ফ্লোয়িং ড্রেস পছন্দ করি।
প্রশ্ন: পুজোর সাজ হল এবার পুজোর খাওয়া দাওয়া
উজ্জয়িনী মুখোপাধ্যায়: পুজোর ভোগ আমার খুব প্রিয়। পুজো স্পেশাল খাওয়া দাওয়া যতই থাকুক। পুজোর ভোগ আমি মিস করি না। আমি নবরাত্রী করি।
প্রশ্ন: সে কী! বাঙালীর বড় পার্বনে দুর্গাপুজোয় মাছ মাংস খান না?
উজ্জয়িনী মুখোপাধ্যায়: আরে না না আমাদের বাড়িতে বাসন্তি পুজো হয়। সেই সময় নব রাত্রি পালন করি। আর এই সময় পুজোর শো, লাইভ পারফর্ম্যান্সের জন্য বাড়ির বাইরে বাইরে থাকতে হয়। ট্যুরে থাকলে সেভাবে খাবারের বাছ-বিচার করা যায় না।তবে ভুরিভোজের ব্যপারটাও এড়িয়ে যেতে হয় খাওয়া দাওয়া একটু নিয়ম করেই খেতে হয়। শরীর খারাপ হলে আরও সমস্যা। কাজেই খাওয়া দাওয়া নিয়ে সামলে চলতে হয়।
প্রশ্ন: কলকাতার প্রিয় পুজো?
উজ্জয়িনী মুখোপাধ্যায়: (একটু ভেবে) বলা মুশকিল এত ভাল ভাল পুজো রয়েছে শহরজুড়ে…
প্রশ্ন: তাও এমন কিছু পুজো যেগুলো না দেখলেই নয়।
উজ্জয়িনী মুখোপাধ্যায়: এখন তো আর সেভাবে ঠাকুর দেখা হয় না তবে আগে বন্ধুদের সঙ্গে ম্যাডক্স স্কোয়ারে পুজোর মধ্যে অন্তত একদিন যেতামই। খুব ভাল লাগত একডালিয়া ও এফডি ব্লকের পুজো দেখতে।
প্রশ্ন: পুজোর প্রেম, সাজগোজ তো হল এবার আসা যাক ফ্যানদের কথায়, এই পুজোয় তাদের কী উপহার দিচ্ছেন?
উজ্জয়িনী মুখোপাধ্যায়: আছে তো, ‘মহালয়ায় মুক্তি পেয়েছে বাজল তোমার আলোর বেনু’ আর উপল দার সঙ্গে রয়েছে দুগ্গা মায়ের জয়।এছাড়া লাইভ পারফর্ম্যান্স তো থাকছেই।
প্রশ্ন: এ বছর কী শহরে থাকছেন?
উজ্জয়িনী মুখোপাধ্যায়: না না সপ্তমী থেকে দশমী টাইট শেডিউল। পুনে ও দিল্লিতে লাইভ পারফর্ম্যান্স আছে।
প্রশ্ন: পুজোয় আপনার অনুরাগী ও কলকাতা টিভির অনলাইনের দর্শকদের জন্য কী বার্তা দিতে চান?
উজ্জয়িনী মুখোপাধ্যায়: গত দু’বছর যা কেটেছে সবাইকে বলব সুস্থ থাকুন, প্রিয় মানুষদের সঙ্গে সময় কাটান ও পুজোতে খুব আনন্দ করুন।