কলকাতা: ধেয়ে আসছে সুপার সাইক্লোন ডানা (Cyclone Dana in Bengal)। বঙ্গোপসাগরে (Bay Of Bengal) তিনদিনের মধ্যে জন্ম নিতে পারে এই ঘূর্ণিঝড়। ঘূর্ণিঝড় তৈরি হলে তার নাম হবে ‘ডানা’। কাতার এই নাম রেখেছে। সাগরে এই ঘূর্ণিঝড় তৈরি হওয়ার পর উত্তর-পশ্চিম দিকে এগিয়ে ওড়িশা এবং পশ্চিমবঙ্গের উপকূলের দিকে ধেয়ে আসতে পারে। ১৩৫ কিমি বেগে উপকূলে আছড়ে পড়বে সুপার সাইক্লোন ডানা। ঘূর্ণিঝড় নিয়ে সতর্ক করেছে হাওয়া অফিস। এই ঘূর্ণিঝড় স্থলভাগের মাটি ছুঁলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে বলে আশঙ্কা করেছে কেন্দ্র ও রাজ্য। ইতিমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের সচিব পর্যায়ে যোগাযোগ রাখা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে রাজ্যের সঙ্গে বৈঠকে বসেছে কেন্দ্র। ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলা করা নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে।
সুপার সাইক্লোন এর তৈরি হওয়া ঘূর্ণাবর্ত এই মুহূর্তে দক্ষিণ আন্দামান সাগর থেকে উত্তর আন্দামানের দিকে এগোচ্ছে। আগামী ২৩ অক্টোবর বঙ্গোপসাগরের উপর দিয়ে ওড়িষা অন্ধ্র পশ্চিমবঙ্গ উপকূলের দিকে এগিয়ে আসার বিষয়ে ইতিমধ্যেই জানিয়েছে আবহাওয়া দফতর। গতি ও অভিমুখের কোন পরিবর্তন না ঘটলে আগামী ২৪ অক্টোবর ওড়িষা ও পশ্চিমবঙ্গের উপকূলে আছড়ে পড়বে “ডানা”। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই উপকূলবর্তী জেলাগুলির প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সুন্দরবন উপকূলে বাড়তি নজরদারির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে নবান্ন থেকে। সুন্দরবন উপকূল থানাগুলির পক্ষ থেকে মাইকিং শুরু হয়েছে। মৎস্যজীবীদের সতর্ক করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই নবান্নে এবং কলকাতা পুরসভার কন্ট্রোল রুম ২৪ ঘন্টা মনিটরিং করার কাজ শুরু করেছে। উপকূলবর্তী জেলাগুলিতেও ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেটের অফিসে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।
কোস্টাল এরিয়া গুলিতে পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মীরা মাইকিং শুরু করেছে। উত্তাল সমুদ্রে পর্যটক থেকে সাধারণ মানুষ যাতে না নামে ও দূরত্ব বজায় রাখে সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে পেট্রোলিং শুরু করেছে। উপকূলবর্তী অঞ্চল গুলিতে কাঁচা বাড়ি গুলি থেকে বসবাসকারী সাধারণ মানুষকে নিকটবর্তী সেফ জনে স্থানান্তরিত করার কাজ শুরু হয়েছে। প্রয়োজনীয় ত্রিপল খাবার পানীয় জল ওষুধ সহ বিভিন্ন ত্রাণসমগীর পাঠানোর কাজও ইতিমধ্যেই সমুদ্রর নিকটবর্তী জেলাগুলির প্রশাসনের মাধ্যমে শুরু করা হয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে পুলিশ প্রশাসনের অতিরিক্ত ফোর্স এবং এনডিআরএফ এর জওয়ানদের। সুপার সাইক্লোন ডানা আছড়ে পড়ার জেরে যদি গাছপালা ভেঙে পড়ে রাস্তা ব্লক হয়ে যায়। সে ক্ষেত্রে যাতে অতি দ্রুত এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাতায়াতের পথ বন্ধ না হয়ে যায় সেজন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে নির্দিষ্ট টিম ও যানবাহন এর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকারের সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের আধিকারিকদের এই সুপার সাইক্লোন মোকাবিলার বিষয়টি নিয়ে এদিন নবান্নে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।
আরও পড়ুন: অনশনে অনড়, আজ নবান্নে বৈঠক মুখ্যমন্ত্রী-জুনিয়র ডাক্তারদের
১০০ থেকে ১৩০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ের সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখে এবং এর ফলে বাড়ি থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখে ইতিমধ্যেই প্রস্তুতি কাজ শুরু করেছে কলকাতা পুরসভা। গাছ ভেঙে পড়ে যাতে রাস্তাঘাট ব্লক হয়ে গিয়ে যান চলাচল ব্যাহত না হয় সেই লক্ষ্যে ইতিমধ্যেই এসডব্লিউএম বা সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্টের কর্মীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত প্রশাসন। সিইএসসি এর কর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ কথা বলেছে পুরসভা। যাতে তার ছিড়ে যাওয়া থেকে শুরু করে প্রয়োজনে দ্রুত কোন অংশের বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দেওয়া যায় তার জন্য একাধিক টিম প্রস্তুত রাখার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কলকাতার সমস্ত পাম্পিং স্টেশনের পাম্প মেশিনগুলিকে ১০০ শতাংশ প্রস্তুত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নিচু এলাকা গুলিতে জল জমার ক্ষেত্রে অতি দ্রুত জল বের করার লক্ষ্যে ভরাহ্মমান পাম্প সেট এর ব্যবস্থা করতে চলেছে কলকাতা পুরসভা। যেকোনও পরিস্থিতিতে হঠাৎ কোনও বিপর্যয় ঘটলে অতি দ্রুত চিকিৎসা ব্যবস্থার লক্ষ্যে পুরসভার স্বাস্থ্য আধিকারিকদের নিয়েও উচ্চপর্যায়ের বৈঠক শুরু হয়েছে। শহর কলকাতার বিপজ্জনক ভগ্ন প্রায় বাড়িগুলি থেকে প্রয়োজনে অতি দ্রুত যাতে মানুষকে নিরাপদ স্থানে স্থানান্তরিত করা যায় তা নিয়েও বোড়ো গুলিকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সময় যত গড়াচ্ছে সরকার এবং লোকাল প্রশাসনের পক্ষ থেকে সুপার সাইক্লোন ডানা এর মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় সমস্ত রকম ব্যবস্থা করে রাখা হচ্ছে। সুপার সাইক্লোন ডানা এর আছড়ে পড়া নিয়ে চিন্তিত কেন্দ্র ও রাজ্যের সরকার।
আবহাওয়া দফতর জানাচ্ছে, আন্দামান সাগরে তৈরি হওয়া ঘূর্ণাবর্ত আজই নিম্নচাপের রূপ নিতে চলেছে। মঙ্গলবার এটি পূর্ব- মধ্য বঙ্গোপসাগরে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হবে। বুধবার পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগরে গভীর নিম্নচাপ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগরে এই ঘূর্ণিঝড় তৈরি হলে এর নাম হবে দানা। হাওয়ার গতি হতে পারে ঘণ্টায় ৪০ থেকে ৭৫ কিলোমিটার পর্যন্ত। ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়ে গেলে বৃহস্পতিবার উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে ঘণ্টায় ৯০ থেকে ১২০ কিলোমিটার বেগে ঝড় বইতে পারে। হাওয়ার বেগ হতে পারে ১৩৫ কিলোমিটার পর্যন্ত। ওই সময়ে সমুদ্র উত্তাল থাকবে উপকূলের কাছে।মঙ্গলবার থেকে দক্ষিণবঙ্গের জেলায় জেলায় বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে হাওয়া অফিস।
দেখুন ভিডিও