কলকাতা: নিম্নচাপের বৃষ্টির জের ও অন্যদিকে আরও এক লক্ষ কিউসেক জল ছাড়ল ডিভিসি (DVC)। ছাড়া জলে বন্যা পরিস্থিতি ঘাটাল মহকুমার বেশ কিছু এলাকায় সহ একাধিক জেলা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। রাজ্যে লাগাতার বৃষ্টিতে ইতিমধ্যে বাড়তে শুরু করেছে বিভিন্ন নদীর জলস্তর। বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার আশঙ্কা একাধিক জেলায়। মঙ্গলবার ডিভিসি নতুন করে আরও ১ লক্ষ ১০ হাজার কিউসেক জল ছেড়েছে। মাইথন জলাধার থেকে ছাড়া হয়েছে ৩৫ হাজার কিউসেক জল। পাঞ্চেত জলাধার থেকে ছাড়া হয়েছে ৭৫ হাজার কিউসেক জল। বীরভূম, পশ্চিম বর্ধমান, ঝাড়গ্রামের গ্রামগুলি এই জলে প্লাবিত হতে পারে। ফের জল ডিভিসির তরফে ছাড়ায় পশ্চিম মেদি, হুগলি, হাওড়ার, একাধিক অংশ প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে সব থেকে বেশি হুগলি জেলার নিয়ে বেশি সতর্ক নবান্ন।
ডিভিসি থেকে জল ছাড়তে থাকায় উদ্বিগ্ন নবান্ন (Nabanna )। সাত জেলাকে ফের গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ মুখ্য সচিবের। এলাকা এলাকা পরিদর্শন করার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্য সচিব। যেখানে যেখানে জল জমছে বা বন্যার মত পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে সেই এলাকাগুলি পরিদর্শন করুন। প্রয়োজনে এসপি সহ জেলার পুলিশ আধিকারিকদের নিয়ে যান। যে এলাকা গুলিতে বন্যার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে সেখানকার বাসিন্দাদের দ্রুত নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আনার কথা বলা হয়েছে। এলাকায় এলাকায় পরিদর্শন করার সাত জেলার জেলাশাসককে নির্দেশ মুখ্য সচিবের।
লাগাতার ভারী বৃষ্টি ও দামোদরের ওপর বিভিন্ন জলাধার পাঞ্চেত, মাইথন ও দুর্গাপুর ব্যারেজ থেকে ক্রমাগত জল ছাড়ার ফলে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে দামোদরের সংলগ্ন নিম্নবর্তী এলাকা গুলি। জলঢুকতে শুরু করেছে দুর্গাপুর নগর নিগমের ৩৭ নম্বর ওয়ার্ড সংলগ্ন সোনাই চন্ডিপুর এলাকায়। ধাপে ধাপে গ্রামের ভেতর জল ঢোকায় বেশ কিছু নিচু জায়গায় থাকা বাড়িগুলি জল মগ্ন হয়ে পড়েছে। এলাকা পরিদর্শনে আছেন মেজিয়া ব্লকের প্রশাসনিক আধিকারিকরা । তারা এলাকার মানুষের চিরে ,গুর ও ত্রিপল ত্রাণ দেয় । দামোদরের জলে ডুবে গেছে এলাকার সমস্ত চাষাবাদ জমি। ফলে ক্ষতির মুখে পড়েছে কৃষকেরা। পাশাপাশি শহরের সঙ্গে তাদের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। যান চলাচলের ক্ষেত্রেও অসুবিধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে তাদের। নতুন করে যদি আবার ডিভিসি জল ছাড়ে তাহলে এলাকায় প্লাবনের (Flood ) আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
আরও পড়ুন: বকখালি ও গঙ্গাসাগর উপকূলে কড়া নজরদারি, জারি হলুদ সতর্কতা
শিলাবতি নদীর জল ঢুকতে শুরু করেছে ঘাটালের নীচু এলাকাগুলিতে। জলস্থর ক্রমশ বেড়েই চলেছে। ঘাটাল ব্লকের ব্যাঙরালে রাস্তার ওপর জল জমেছে প্রায় হাঁটু সমান, সেই জল পেরিয়ে চলছে স্কুল পড়ুয়া থেকে স্থানীয়দের যাতায়াত। কোথাও জল এক হাঁটু তো কোথাও এক কোমর, আবার কোথাও কোথাও জল পারাপার করার একমাত্র সম্বল ডিঙি। স্থানীয়রা জানান রবিবার থেকে জল বাড়তে শুরু হয় এখনও পর্যন্ত বেড়েই চলছে জল। এলাকার মানুষজন বন্যার আশঙ্কা করছেন। তারা জানান, ভোটের আগে মেলে ভুঁড়ি ভুড়ি প্রতিশ্রুতি। কিন্তু ভোটের পরে দেখা মেলে না কারোরই। প্রতিবছরই বর্ষার সময় জল যন্ত্রণাকে উপেক্ষা করে বেঁচে থাকতে হয় ঘাটাল মহকুমার নিচু এলাকার সাধারণ মানুষ গুলোকে। কবে এই ভয়াবহ জলযন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাবে ঘাটাল বাসী সেই দিকেই তাকিয়ে দিন গুনছে তারা, হুশ নেই প্রশাসনের।
বৃষ্টির ফলে জল বাড়তে শুরু করেছে সুবর্ণরেখা ও কেলেঘাই নদীতে। গালুডি জলাধার থেকে দফায় দফায় জল ছাড়াই সুবর্ণরেখা নদীতে বাড়তে শুরু করেছে জল। আর আগাম প্রস্তুত থাকতে সুবর্ণরেখা তীরবর্তী বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করলেন প্রশাসনের আধিকারিকেরা। বড়া, দক্ষিণ আমডিহা, সোনাকনিয়া সহ একাধিক এলাকা পরিদর্শন করেন প্রশাসনের আধিকারিকেরা। একই সাথে কেলেঘাই নদীতে জল বাড়তে থাকায় সেই পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে নারায়ণগড় ব্লকের পোক্তাপোল এলাকাতে কেলেঘাই নদী পরিদর্শনে গেলেন প্রশাসনের আধিকারিকেরা। জল বাড়তে থাকলে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে আর তার মোকাবেলায় প্রস্তুত প্রশাসন। মঙ্গলবার দুপুরে সেই সমস্ত এলাকা খতিয়ে দেখলেন প্রশাসনের আধিকারিকেরা।