রূপম রায়, নদিয়া: ছিলেন সধবা। ‘ঘরের লক্ষ্মী। চেয়েছিলেন ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার। কিন্তু সরকারি খাতায় হয়ে গিয়েছেন ‘বিধবা । স্বামী জীবিত। লক্ষীর ভাণ্ডারে আবেদন, দুবছর ধরে সরকারি ভাতা তোলার পর পুলিশি হস্তক্ষেপে জানা গেলো আদতেও তা বিধবা ভাতা! একমাত্র পুত্রের কাগজে-কলমে হয়েছে মৃত্যু ঘটালো কে? জলজ্যান্তর ছেলের ডেথ সার্টিফিকেট পেল কোথা থেকে সরকার?
বৌমার নামে মঞ্জুর হওয়া বিধবা ভাতা লক্ষীর ভাণ্ডার ভেবে এতদিন খরচ হয়েছে সংসারে। বিডিওর চাপে সে টাকা একসঙ্গে দেওয়ার সামর্থ্য নেই , একদিকে বেনিফিশিয়ারি হিসাবে দোষী সাব্যস্ত করে ব্যাংকের বই আধার কার্ড রেখে দিয়েছে বিডিও, একসাথে ফেরত চাইছে ২৪ মাসের ২৪ হাজার টাকা, অন্যদিকে সমাজে কলঙ্কিত !
অথচ যে তৃণমূল নেতা তিন হাজার টাকার বিনিময়ে এই কাজ করলেন সে ফেরার! ঘটনাটি নদিয়ার শান্তিপুর শহরের ২১ নম্বর ওয়ার্ডের বিশ্বসুখ পল্লীতে।
সেখানে পরেশ দে ছোট্ট একটি দোকান চালান বাড়ির সামনে, স্ত্রী শেফালী দেবীর দাবি প্রায় দু বছর আগে বেশ কয়েকবার লক্ষ্মীর ভাণ্ডারে আবেদন করেও যখন মঞ্জুর হয়নি, তখন প্রতিবেশী তৃণমূলের তৎকালীন বুথ সভাপতি উত্তম হালদার তার কাছ থেকে কাগজপত্র সহ ১০০০ টাকা নিয়ে কিছুদিনের মধ্যেই জানায় লক্ষ্মীর ভাণ্ডার মঞ্জুর হয়ে গেছে ব্যাংকে গিয়ে দেখে নেওয়ার জন্য।
আরও পড়ুন: সুপ্রিম কোর্টে পিছোল রাজ্যের ২ গুরুত্বপূর্ণ মামলার শুনানি
স্থানীয় স্টেট ব্যাংকের কিয়ক্সে, অ্যাকাউন্ট করা হলেও পাসবুক দেওয়া হয়নি তবে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন এক হাজার টাকা ঢুকেছে একাউন্টে। এরপর সেই বুথ সভাপতি তৃণমূল নেতা আরও ২০০০ টাকা নেয় পূর্ব শর্ত অনুযায়ী।
এভাবেই মাসের পর মাস টাকা জমা দিলে কিয়ক্স ব্যাংক একটা স্লিপ দেয়, অন্যদিকে টাকা তুললেও মেলে স্লিপ! কিন্তু পাসবুক সাপ্লাই নেই বলে জানানো হয়।
সম্প্রতি কয়েকদিন আগে হঠাৎ শান্তিপুর থানার পুলিশ বাড়িতে এসে পৌঁছায় জিজ্ঞাসাবাদ এর জন্য ধরে নিয়ে যায় শাশুড়ি পদ্ম দে এবং বৌমা শেফালী দে দুজনকেই। সেখানে স্পষ্ট হয় বিষয়টি।
পুলিশের নির্দেশে মূলত মূল শাখা অফিস শান্তিপুর স্টেট ব্যাংক থেকে তারা পাসবুক নিয়ে বিগত দু’বছরের স্টেটমেন্ট তুলে দেখে তাদের অ্যাকাউন্টে ঢুকেছে বিধবা ভাতা। এরপর থানার বড়বাবু পাঠায় বিডিওর কাছে। ভিডিও তাদের পাসবুক এবং আধার কার্ড আটকে রেখে দাবি করে সরকারি প্রদেয় ২৪ মাসের ২৪ হাজার টাকা ফেরতের।
বর্তমানে দুশ্চিন্তায় পরিবার। বিডিওর কাছে তিনি অনুরোধ জানিয়েছেন, বিধবা ভাতার পরিবর্তে পুরনো মঞ্জুর হওয়া বিধবা ভাতার তারিখ অনুযায়ী লক্ষ্মীর ভাণ্ডার মঞ্জুর করে দিলেই বিষয়টি আপাতত নিষ্পত্তি হয়। কিন্তু সরকারি সূত্রে জানা গেছে এক খাতের টাকা অন্য খাতে দেওয়া যায় না।
তবে এই নিয়ে রাজনৈতিক চাপানতর শুরু হয়েছে ইতিমধ্যেই বিজেপির কটাক্ষ, কথায় কথায় তৃণমূল বলে কেন্দ্রীয় বঞ্চনার কথা, প্রথমত প্রকল্পের নাম বিকৃত করে কেন্দ্রীয় সহযোগিতা উহ্য রেখে বেনিফিশিয়ারিদের কাছ থেকে কাটমনির অর্থ নিয়ে এভাবে তছরূপ করেছে আগের তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েত সমিতি।
শুধু একটি দুটি নয় কিংবা একটি দুটি বিষয় নয়, সমস্ত সরকারি প্রকল্পে অভিযোগের পর অভিযোগ। অবিলম্বে ওই তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে এফ আই আর করে , কিভাবে ডেথ সার্টিফিকেট ছাড়া সরকারি টাকা মঞ্জুর হয়েছে তা দেখা উচিত।
অন্যদিকে ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর উৎপল সাহা ওই তৃণমূল নেতার দুর্নীতি স্বীকার করলেও তিনি বলেন, বড় কোন পদে সে ছিল না সবচেয়ে বড় কথা সরকারি আধিকারিকরা রয়েছে আমি জনপ্রতিনিধি রয়েছি, তাদেরকে বাদ দিয়ে কাউকে টাকা দেওয়া উচিত হয়নি, তবে তিনিও আশ্চর্য হয়েছেন সরকারি প্রক্রিয়ায় কিভাবে স্বামী বেঁচে থাকা অবস্থায় স্ত্রী বিধবা ভাতা পেলো তা নিয়ে।
তবে এই ঘটনায় ওই ভুক্তভোগী পরিবার শান্তিপুর থানায় লিখিত অভিযোগ জানাবেন ওই তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে বলেও জানা গেছে।
দেখুন অন্য খবর: