ভিয়ারিয়াল–২ লিভারপুল–৩
(বি ডায়াস, এফ ককেলিন) (ফাবিনহো, লুইস দিয়াজ, সাদিও মানে)
(প্রথম লেগে লিভারপুল জিতেছিল ২-০। দুই পর্ব মিলিয়ে তারা ৫-২ গোলে জিতল)
ফুটবল পন্ডিতরা বলেন, বিশ্বের সেরা কোচেরা তাদের ডাল-রুটি রোজগার করে বিরতির পনেরো মিনিটে। কথাটা যে কত দূর সত্যি তা বোঝা গেল, মঙ্গলবার রাতে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালের দ্বিতীয় পর্বের ম্যাচে। প্রথম লেগে নিজেদের মাঠে লিভারপুল জিতেছিল ২-০ গোলে। আশা করা গিয়েছিল ফিরতি ম্যাচে ভিয়ারিয়ালের মাঠ এল মাদ্রিগালে পাল্টা একটা কামড় দেবে উনাই এমেরির দল। দিলও বটে। তিন মিনিটের মধ্যে গোল করে এগিয়ে গেল তারা। ৪১ মিনিটে সেটাই ২-০ হয়ে গেল। বিরতিতে ম্যাচে ২-০ গোলে এগিয়ে ভিয়ারিয়াল। প্রথম পর্ব ধরে ম্যাচ ২-২। তাহলে কি আবার একটা অঘটন ঘটাতে চলেছে ভিয়ারিয়াল? বায়ার্ন মিউনিখের মতো লিভারপুলও বধ হবে তাদের হাতে?
এখানেই খেলটা দেখালেন লিভারপুল কোচ জুরগেন ক্লপ। তিন ফরোয়ার্ডের মধ্যে দিয়োগো জোটাকে তুলে নিয়ে নামালেন লুই দিয়াজকে। কলম্বিয়ার এই ফুটবলারটিকে এ বছর জানুয়ারিতেই পোর্তো থেকে নিজেদের দলে নিয়ে এসেছে লিভারপুল। দিয়াজ নেমেই ম্যাচের খোলনলচে পাল্টে দিলেন। বারো মিনিটের একটা ঝড়ে ম্যাচের রঙ বদলে দিল লিভারপুল। ৬২ মিনিটে প্রথম গোল। ৬৭ মিনিটে দ্বিতীয় এবং ৭৪ মিনিটে তৃতীয় গোল করে ফেলল লিভারপুল। ম্যাচ তাদের পকেটে। গত পাঁচ বছরে এবার নিয়ে তিন বার চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে উঠল। ২৮ মে প্যারিসের সাঁ দেনি স্টেডিয়ামে তারা ফাইনাল খেলবে রিয়াল মাদ্রিদ ও ম্যাঞ্চেস্টার সিটির বিজয়ীর সঙ্গে।
লুই দিয়াজ মাঠে নেমেই সচল করলেন লিভারপুল ফরোয়ার্ড লাইনকে। এতক্ষণ অ্যাটাকিং জোনে মহম্মদ সালাহ, সাদিও মানে এবং দিয়োগো জোটার মধ্যে বাঁধুনিটাই ঠিক মতো হচ্ছিল না। দিয়াজ নেমেই এই সুতোটা ঠিক মতো বাঁধতে শুরু করেন। ফল মিলল খুব তাড়াতাড়ি। প্রথম গোলটা ফাবিনহোর। মহম্মদ সালাহের সেন্টার থেকে হেড করে গোল করলেন লিভারপুল মিডফিল্ডার। দ্বিতীয় গোলটা দিয়াজের নিজের। রাইট ব্যাক আলেক্সজান্ডার টেন্ট বোল্ট ডান দিক থেকে উঠে বাঁ পায়ে যে সেন্টারটা করলেন তা থেকে গড়ানে শটে গোল করলেন লুইস দিয়াজ। কিন্তু তখনও লিভরপুলের ঝড় থামেনি। এবার কেইটার পাস থেকে গোল করলেন সাদিও মানে। তিনটি গোলের ক্ষেত্রেই দায়ী করা যায় ভিয়ারিয়ালের গোলকিপার জেরেনিমো রুলিকে। কখনও দুই হাতের ফাঁক দিয়ে, কখনও দুই পায়ের ফাঁক দিয়ে কখনও বা গোল ছেড়ে বেরিয়ে এসে ফাঁকা গোল উপহার দিয়ে তিনি গোল খেয়েছেন। তবে এই দিয়ে লিভারপুল ফুটবলারদের কৃতিত্বকে ছোট করা যাবে না।
অথচ ম্যাচের প্রথম ৪৫ মিনিটে দাপট ছিল ভিয়ারিয়ালের। তিন মিনিটের মধ্যে গোল করে ফেলেন বৌলায়ে ডায়াস। ৪১ মিনিটে সেটাই ২-০ হয়ে যায় ককেলিনের গোলে। লিভারপুল তখন খোঁড়াচ্ছে। তাদের কোমড় বেঁকে গেছে। এই কোমড়টাই সোজা হল বিরতির পর লুইস দিয়াজ নামায়। ফাইনালে লিভারপুল চ্যাম্পিয়ন হবে কি না তা সময়ই বলবে। তবে জুরগেন ক্লপের কোচিংয়ে যে একটা নতুন পালক সংযোজিত হল ভিয়ারিয়ালের বিরুদ্ধে অ্যাওয়ে ম্যাচে তা কিন্তু ইতিহাস মনে রাখবে।