আইন মানুষের জন্য, আইন সমাজের জন্য, আইন দেশের জন্য, আইন একটা বই এ লেখা শব্দের কচকচানি নয়। এই কথাগুলো বলতে গিয়ে বহু আগে পড়া জেরোম কে জেরোম-এর লেখা একটা বই থ্রি মেন ইন অ্যা বোট এর একটা অংশের কথা মনে পড়ে গ্যালো। সেখানে লেখক এক শীতের রাতে শেষ দাবলডেকার বাসে বাড়ি ফিরছেন। সেদিন ওই বাসে তিনি ছাড়া আছে দুই মহিলা, আর তাদের একটা ছোটত কুকুর। প্রচন্ড ঠান্ডার সেই রাতে কনডাক্টার এসে জানালো আইনের কথা, আইন বলছে কুকুর সমেত যাত্রিরা ডাবল ডেকার বাসের একতলায় বসতে পারেন না, কাজেই তাঁদের ওপরে চলে যেতে হবে। সেই মহিলা দুজন তাঁদের কুকুর নিয়ে চলে গেলেন ওপরে, সেখানে তখন কনকনে ঠান্ডা হাওয়া। খানিক পরেই সহ্য না করতে পেরে তাঁরা অগত্যা আবার তলায় ফিরে এলেন, আবার কন্ডাক্তার এসে জানালেন আইনের কথা, তাঁদের ওপরে যেতেই হবে, আবার তাঁরা ওপরে গেলেন এবং যথারীতি আবার নীচে নেমে এলেন এবঙ্গাবার আইনের কথা শোনালেন কন্ডাক্টর, এরপরে সম্ভবত তাঁদের গন্তব্যের আগেই দুই মহিলা বাস থেকে নেমে চলে গেলেন। ঘটনাটা বলার পরে লেখক বলছেন, সেদিন বাসে আর কোনও প্যাসেঞ্জার ছিল না, এবং স্বাভাবিকভাবেই আইন অমন অক্ষর মেনে পালন করার কোনও দরকার তো ছিল না, লেখক বলছেন আইন তো মানুষের জন্য, মানুষ তো আইনের জন্য নয়, কাজেই কোথাও আইন যদি সাধারণ ন্যায়, ন্যাচারাল জাস্টিসকে না মেনে কেবল ধারা উপধারা মেনে বিচার করে তাহলে তাকে বিচার বলা হয় না। আজ ঠিক সেইরকম একটা জায়গাতে আমরা হাজির হয়েছি, ১০ বছর ধরে এই শিক্ষকেরা চাকরি করছেন, তাঁরা পরাচ্ছেন, মাধ্যমিকের খাতা দেখছেন, স্কুল চালানো জন্য যা যা দরকার সব করছেন, হঠাৎ এক অদ্ভুত রায়ে তাদের সব্বার চাকরি খেয়ে নেবার অর্ডার এসে গ্যালো, তা মেনে নেবার কোনও কারণ আছে কি? আজ ইন্ডোর স্টেডিয়ামে সেই ন্যাচারাল জাস্টিসের পক্ষে দাঁড়ালেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, বললেন সাফ কথায়, আমি থাকতে যোগ্য শিক্ষকদের চাকরি যাবে না, জানিয়ে দিলেন এতগুলো মানুষের ন্যাচারাল জাস্টিস এর বিরুদ্ধে তিনি যাবেন না, সেটাই বিষয় আজকে। মূখ্যমন্ত্রী ধক দেখালেন, যোগ্যদের পাশে আছি: মমতা।
আজ ইন্ডোর স্টেডিয়ামে উনি যা যা বললেন তার বুলেট পয়েন্টগুলো হলো, ১) ‘শিক্ষকরা যেমন ভাবে কাজ করছেন, তাঁরা তেমন ভাবেই কাজ করবেন।’ জানিয়ে দিলেন এখনও রাজ্য সরকারের তরফ থেকে তাঁদের চাকরি নেই এমনটা অফিসিয়ালি জানানো হয় নি। ‘যাঁরা যোগ্য তাঁদের চাকরি নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনেই পুরোটা করব। আপনাদের তো কেউ বরখাস্ত করেনি এখনও পর্যন্ত। কোনও নোটিস পেয়েছেন? আপনার বিরুদ্ধে দুর্নীতি না প্রমাণ করতে পারলে কেউ আপনাকে তাড়াতে পারে না।’
আরও পড়ুন: Aajke | চোর খুঁজে না পেয়ে সব্বার হাজতবাস?
২) ‘আমরা দু’মাসের মধ্যেই বিকল্প ব্যবস্থা করে দেব। যোগ্যদের কারও চাকরি বাতিল হবে না। সুপ্রিম কোর্টের কাছে ব্যাখ্যা চাইব।’ অর্থাৎ আইনী লড়াই এর প্রস্তুতি নিচ্ছে রাজ্য সরকার সেটা জানিয়ে দিলেন। এর আগে বহু জায়গাতে, বহু চাকরির পরীক্ষাতে, ত্রিপুরা শিক্ষকদের চাকরিতে এক লপ্তে চাকরি গেছে বহু মানুষের, সেখানেও দূর্নীতি বেনিয়মেরই অভিযোগ ছিল, কারোর শসে কুলোয়নি তাদের ডেকে সাফ জানিয়ে দেওয়ার, যে আমরা তোমাদের পাশে আছি। ইন্ডোর স্টেডিয়ামে কিছু শিক্ষকেরা চ্যাঁচামেচি করেন, কয়েকজনকে তো চ্যাঁচামেচি করার জন্য রিতীমত উস্কানি দিতেও দেখা গ্যালো, তো এগুলো কি না জেনেই মমতা এসেছিলেন এই মঞ্চে? উনি জানতেন না, ইন ফ্যাক্ট পুলিশের কাছে খবর ছিল এর থেকে বড় রকমের বিক্ষোভ দেখানো হতে পারে, কেয়ার করেন নি মমতা, তিনি ওখানে দাঁড়িয়ে রাজনীতির কথা বলেছেন, আইনের কথা বলেছেন মানবিকতার কথাও বলেছেন। আজ এই মূহুর্তে সব হারানো মানুষগুলোর পাশে দাঁরানো যে একজন নেত্রীর সবচেয়ে বড় কাজ, সেতা উনি ভোলেন নি, এই প্রকাশ্য সভাতে সুপ্রিম কোর্টের রায় নিয়ে বলাটা বহু প্রশ্ন তুলবে, আইনী জটিলতার জন্মও দিতেই পারে, সেসব তোয়াক্কাও না করে মমতা দাঁড়ালেন সেই মানুষগুলোর পাশে যারা চাকরি হারিয়ে অথৈ জলে পড়েছে, জেনেই দাঁড়ালেন এই চাকরি যাওয়ার পেছনে সরকারি গাফিলতি আছে, তাঁর নিজের দলের একাংশের দূর্নীতিও আছে, হ্যাঁ এটাকেই ধক বলে, সাহস বলে, মুখোমুখী দাঁরাবার ক্ষমতা বলে। আমরা আমাদের দর্শকদের জিজ্ঞাষা করেছিলাম যে “ যখন ২০ হাজারের বেশি চিহ্নিত যোগ্য প্রার্থীরা সুপ্রিম কোর্টের রায়ে চাকরি খুইয়ে অথৈ জলে, তখন তাঁদের পাশে দাঁড়ালেন মূখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি, জানিয়ে দিলেন যোগ্য একজনেরও চাকরি যাবে না। আপনারা কি মনে করেন মমতা একজন রাজনীতিবিদের মতই চাকরি খোয়ানোদের পাশে দাঁড়ালেন? নাকি এটাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সমস্যার মুখোমুখি হতে তিনি জানেন? শুনুন মানুষজন কী বলেছেন।
চাকরি বিক্রি হয়েছে, দূর্নীতি হয়েছে, দলের এক অংশ সেই দূর্নীতির সঙ্গে জড়িত, এ আমি আর নতুন করে কী বলবো? দলের মূখপাত্র সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারেই বলেছেন। কিন্তু সেই দূর্নীতির দায়ে বহু মন্ত্রী আমলারা জেলে, তদন্ত চলছে, আর তার মধ্যেই এক্কেবারে রাজনৈতিক হলচল এনেদিল এই সুপ্রিম কোর্টের রায়, এ রায়ে আইন যতখানি, অনেকের মতে রাজনীতিও ততখানি, কিন্তু সেসবের ওপরে গিয়ে সেই শিক্ষকদের পাশে দাঁড়ানোটা খুব জরুরি ছিল, সেই জরুরি কাজটাই করে দেখালেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।