ওয়েব ডেক্স: আরব (Arab) বিশ্বে বর্তমানে যে রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং অর্থনৈতিক সংকটের অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে, তা অঞ্চলটির জন্য বড় ধরনের বিপদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দীর্ঘকাল ধরে চলা এই সংকটের প্রভাব এখন আরও তীব্র হয়েছে। দেশগুলোর মধ্যে চলমান বিভাজন এবং অব্যাহত সংঘাত শুধু আঞ্চলিক নয়, আন্তর্জাতিক পরিসরে শিথিল করেছে শান্তি ও স্থিতিশীলতার ধারণা। তিউনিসিয়া, সিরিয়া, সৌদি আরব ও অন্যান্য আরব দেশগুলোতে এই অস্থিরতা ক্রমশ বেড়েই চলেছে, যা তাদের ভবিষ্যতকে সংকটে ফেলেছে।
তিউনিসিয়া, যেটি আরব বসন্তের সূতিকাগার হিসেবে পরিচিত, সেখানে বর্তমানে গভীর রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে। গত কয়েক মাসে, প্রেসিডেন্ট কাইস সাইয়েদ দেশের সংসদ ও সরকারের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছেন, যা দেশটিতে গণতান্ত্রিক বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে। সাইয়েদের একতরফা পদক্ষেপের ফলে তিউনিসিয়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের জন্য বিভাজনের কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। বিরোধী দলগুলো এই পদক্ষেপকে সংবিধানবিরোধী দাবি করে সাইয়েদকে একনায়ক হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এর ফলে দেশজুড়ে বিক্ষোভ এবং প্রতিবাদ হচ্ছে, যা তিউনিসিয়ার অভ্যন্তরীণ শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে সংকটাপন্ন করে তুলছে।
আরও পড়ুন: বর্ষবরণের উৎসবে ‘নিষেধাজ্ঞা’! বাংলাদেশে জারি হল নতুন নিয়ম
সিরিয়ায়, যেখানে প্রায় এক দশক ধরে গৃহযুদ্ধ চলছে, পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে। দেশটি এখনো যুদ্ধবিদ্ধস্ত এবং অর্থনৈতিক সংকটে জর্জরিত। যদিও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সিরিয়ার সংকটের সমাধানে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে, তবে আসল সমস্যাগুলো এখনও অমীমাংসিত। সিরিয়ার রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং নিরাপত্তা পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক শক্তির দ্বন্দ্বের দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছে, বিশেষ করে ইরান ও রাশিয়া সিরিয়ার সরকারের সঙ্গে একযোগে কাজ করছে, যা আরব বিশ্বের মধ্যে নতুন বিভাজন সৃষ্টি করছে। এই অস্থিরতা শুধু সিরিয়ার জনগণের জন্যই নয়, গোটা অঞ্চলটির জন্যও বিপজ্জনক।
সৌদি আরব এবং ইরান, দুই শক্তিশালী আরব দেশ, দীর্ঘদিন ধরে একে অপরের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কিছু দেশে তাদের শক্তির প্রতিযোগিতা উত্তেজনা আরও বৃদ্ধি করেছে। সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন আরব দেশগুলি ইরানের আধিপত্য বিস্তার ঠেকাতে মরিয়া, যা সিরিয়া, ইয়েমেন এবং ইরাকে সরাসরি প্রভাব ফেলছে। ইরানের আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তার ও সৌদির বিরোধিতার কারণে মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি অস্থির হয়ে উঠেছে। এই বিরোধ আরব বিশ্বে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার পথে অন্যতম বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অর্থনৈতিক দিক থেকেও আরব বিশ্ব সংকটের সম্মুখীন। আরব দেশগুলোর মধ্যে বেশ কিছু দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই শোচনীয়। লেবানন, মিশর, সুদান ও অন্যান্য দেশগুলোর মধ্যে উচ্চ কর্মহীনতা, মুদ্রাস্ফীতি এবং দারিদ্র্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই অঞ্চলের অনেক দেশ তেলের উপর অর্থনীতি নির্ভরশীল হলেও, বিশ্ববাজারে তেলের মূল্য পতন ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিরতা তাদের সংকট আরও বাড়িয়েছে। সাধারণ জনগণের জন্য জীবনযাত্রা আরও কঠিন হয়ে পড়েছে, যা রাজনৈতিক অস্থিরতার সঙ্গে যুক্ত হয়ে আরও গভীর সংকট সৃষ্টি করছে।
এইসব সমস্যাগুলো আরব বিশ্বকে একটি বিপজ্জনক ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। রাজনৈতিক অস্থিরতা, অর্থনৈতিক সংকট এবং আঞ্চলিক সংঘাতের মধ্যে থেকে এই অঞ্চলটি কীভাবে বেরিয়ে আসবে, তা বড় প্রশ্ন। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যদি সক্রিয়ভাবে এই সমস্যাগুলোর সমাধানে এগিয়ে না আসে, তবে আরব বিশ্ব আরও বিভক্ত এবং অস্থির হয়ে উঠতে পারে, যা পুরো অঞ্চলের শান্তি ও উন্নয়নকে বিপদে ফেলবে।রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে নতুন সংঘাত! আরবের উপর সংকট আসন্ন!
দেখুন আরও খবর: