কলকাতা: এবার অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Abhishek Banerjee) পাশে দাঁড়াল আরএসএস (RSS)। সঙ্ঘ পরিবারের মতে, খাতায় কলমে অভিষেকের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ নেই। ইডির রিপোর্টে শুধু কিছু অসংলগ্ন উল্লেখ রয়েছে। সেই কারণেই ইডি আদালতে জানিয়েছে, অভিষেকের গ্রেফতারির বিষয়টি অবান্তর। তৃণমূল বিরোধী শিবিরের তাতে গোঁসা হওয়া স্বাভাবিক। আরএসএসের পশ্চিমবঙ্গ শাখার মুখপত্রের সাম্প্রতিক সংখ্যায় এক নিবন্ধে তাদের এই মনোভাবের কথা প্রকাশিত হয়েছে।
ওই নিবন্ধে লেখা হয়েছে, অনেকের কাছে অভিষেকের যেন তেন প্রকারে আটক ইন্দ্রিয়সুখের শামিল। কেন তিনি আটক হবেন, তা তাঁরা জানেন না। বিষয়টি তদন্তকারী সংস্থাগুলির আওতাধীন। এটা কেবল তাদের ইচ্ছা। স্বাভাবিকভাবে তদন্তের অনেকটাই অজানা। নিবন্ধকারের মতে, অভিষেকের আটক বা গ্রেফতারি নিয়ে সাধারণের ভাবটা খুব একটা গ্রহণযোগ্য বলে মনে হয় না। কারণ, একটাই বিষোদগার শুনতে পাই, ওইটুকু ছেলের এত রোয়াবি সহ্য হয় না। এই গণউষ্মার জন্য অবশ্য তিনি নিজেই দায়ী।
নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তেই সামনে এসেছে অভিষেকের সংস্থা লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস সংস্থার নাম। সেই সংস্থা সম্পর্কে তদন্তে ঢিলেমির জন্য কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডিকে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিনহার তীব্র ভর্তসনার মুখে পড়তে হয়েছে। এমনকী আদালতের নির্দেশে ইডির তদন্তকারী অফিসারকে সরতে হয়েছে। বিচারপতির আরও নির্দেশ, রাজ্যের কোনও মামলার তদন্তের দায়িত্বই ওই অফিসারকে দেওয়া যাবে না। লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের সমস্ত ডিরেক্টর, সিইও এবং সদস্যদের সম্পত্তির খতিয়ান দিতে বলা হয়েছিল ইডিকে। কিন্তু ইডির সেই রিপোর্ট আদালতকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি। বিচারপতি সিনহা তাদের ফের রিপোর্ট পেশ করতে বলেছেন আদালতে। ১০ অক্টোবরের মধ্যে সেই রিপোর্ট দিতে হবে ইডিকে।
আরও পড়ুন: ঝাড়খণ্ডের জল ছাড়া নিয়ে নবান্নে জরুরি বৈঠক
রাজ্যে সিপিএম এবং কংগ্রেসের অভিযোগ, কেন্দ্রের বিজেপির সঙ্গে তৃণমূলের সেটিংয়ের জন্যই অভিষেক এখনও জেলের বাইরে। এই সেটিং তত্ত্ব এবং নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে ইডি-সিবিআইয়ের ঢিলেমির প্রতিবাদে সিপিএম ৫ অক্টোবর বিধাননগরে সিজিও কমপ্লেক্স ঘেরাও অভিযানের ডাক দিয়েছে। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেন, আমরা মাথা পর্যন্ত সব চোরের গ্রেফতারি চাই। পিসি, ভাইপো, কেউ যেন ছাড় না পান। সেটিংয়ের জন্য সারদা কাণ্ডে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পার পেয়ে গিয়েছেন। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও একাধিকবার ইডি, সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে ঢিলেমির অভিযোগ এনেছেন। তিনি বলেছেন, এই সংস্থাগুলির উপর বিশ্বাস রাখতে পারছি না।
এই অবস্থায় আরএসএস অভিষেকের মাথায় হাত রাখায় রাজনৈতিক মহলে নতুন করে চর্চা শুরু হয়েছে সেটিং নিয়ে। সঙ্ঘ পরিবারের রাজ্য মুখপত্রে লেখা হয়েছে, ২০০০ সালে অটলবিহারী বাজপেয়ী সরকারের কাছে আইনশৃঙ্খলার অবনতি আর সিপিএমের অত্যাচারের বিরুদ্ধে শ্বেতপত্র জমা দিয়ে তার কোনও ফল না পাওয়ায় মমতা তখন হতাশ হয়েছিলেন। ইডি, সিবিআই নিয়ে শুভেন্দুর হতাশাকে তাই মান্যতা দিতেই হবে। সন্দেহ নেই, অভিষেকের গ্রেফতার বা আটক এই মুহূর্তে রাজ্যের সবচাইতে আলোচিত বিষয়।
মুখপত্রে আরও লেখা হয়েছে, অভিষেক কেন জেলের বাইরে, এটা অনেকের কাছে মূল সমস্যা। এই একমুখী ভাবনা এখানকার বিরোধীদের সত্য থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখছে। রাজ্য জুড়ে সারাদিন কীর্তনের মতো বেজে চলেছে, পিসি-ভাইপো চোর। অভিষেকের বিরোধীদের কাছে তিনি অপরাধী। আর ভক্তদের মতে, তাঁকে হয়রানি করা হচ্ছে। দুটিই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। ফলে ভুল হওয়াটাই স্বাভাবিক। হচ্ছেও তাই।
