কলকাতা: আরজি কর (RG Kar Case) কাণ্ডে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা সঞ্জয় রায়ের। বিএনএস- ৬৬ নম্বর ধারায় সঞ্জয় রায়কে আমৃত্যু কারাদণ্ডের নির্দেশ আদালতের। সেই সঙ্গে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে আদালত। বিচারক দাস বলেন, এই ঘটনা বিরলের থেকে বিরলতম নয়। তাই মৃত্যুদণ্ডের সাজা শোনানো যায়না। সেই জন্য আমৃত্যু কারাবাস দিয়েছেন। বিচারক দাস বলেন, ‘‘আপনাকে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত জেলে থাকতে হবে। আদালতের নির্দেশ শুনে কাঁদো কাঁদো দেখা গেল সঞ্জয় রায়কে। দোষীর আমৃত্যু কারাদণ্ড ছাড়াও সাত লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। সব মিলিয়ে ১৭ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে সরকারকে। জরিমানার টাকা না দিলে পাঁচ মাস অতিরিক্ত কারাবাসের নির্দেশ। নির্যাতিতার বাবা অবশ্য জানান, ক্ষতিপূরণ চান না। তাঁর উদ্দেশে বিচারক বলেন, আপনি মনে করবেন না টাকা দিয়ে ক্ষতিপূরণের চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে আইনের বিধান অনুযায়ী এই ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দিয়েছি। এই রায়ের দিকে তাকিয়ে ছিল জুনিয়র ডাক্তার থেকে নির্যাতিতার মা-বাবা, সারা দেশে শহর ও রাজ্যবাসী তাকিয়ে ছিল। অবশেষে ১৬৪ দিন পর বিচার পেলেন আরজিকরের নির্যাতিতা।
এদিন প্রথমে সঞ্জয় এবং তাঁর আইনজীবীর আত্মপক্ষ সমর্থনে সুযোগ দেন বিচারক অনির্বাণ দাস (Judge Anirban Das)। তারপর নির্যাতিতার পরিবারের কথা শোনেন তিনি। সিবিআইও আদালত সঞ্জয়ের মৃত্যুদণ্ডের আবেদন জানান। এই ঘটনাকে বিরলের চেয়েও বিরল বলে উল্লেখ করেছে সিবিআই। তারপর দুপুরে শাস্তি ঘোষণা করলেন বিচারক দাস। শনিবার রায় ঘোষণার পর থেকে ধারণা ছিল আরজি করের নারকীয় কাণ্ডে দোষী সঞ্জয় রায়ের সর্বোচ্চ সাজা (Sanjay Roy Punishment) হতে পারে। সেটা হল বিচারক দাস সঞ্জয়কে সর্বোচ্চ সাজা শোনালেন। গত ৯ অগাস্ট আরজি করের নারকীয় ঘটনার প্রতিবাদে বিচারের দাবিতে শহর থেকে জেলা পথে নেমেছিল। স্লোগান উঠেছিল জাস্টিস ফর আরজি কর। সেই ঘটনার ১৬৪ দিনের মাথায় আদলতের ২১০ নম্বর ঘরে সঞ্জয়কে সাজা শোনালেন বিচারক দাস।
গত ৯ অগস্ট আরজি কর হাসপাতালের চেস্ট মেডিসিন বিভাগের সেমিনার হল থেকে মহিলা চিকিৎসকের দেহ উদ্ধার হয়। তাঁকে ধর্ষণ এবং খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। ১০ অগস্ট টালা থানার পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন সঞ্জয়। হাসপাতাল ও সেমিনার রুমের বাইরের সিসিটিভি ফুটেজে সঞ্জয় রায়কে সেমিনার রুমে ঢুকতে ও বেরতে দেখা গিয়েছে। এমনকী সঞ্জয়ের ছেঁড়া হেডফোনের অংশও সেমিনার রুম থেকে উদ্ধার করেছিল পুলিশ। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গিয়েছিল সেমিনারে রুমে ঢোকার সময় সঞ্জয়ের গলায় হেডফোনের ঝুলছিল। কিন্তু সেমিনার রুম থেকে বের হওয়ার সময় সঞ্জয়ের গলায় হেডফোন ছিলনা। সেই সব তথ্যের প্রমাণের ভিত্তিতেই সঞ্জয় রায়কে গ্রেফতার করেছিল টালা থানার পুলিশ। তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ-খুনের ঘটনায় তোলপাড় হয় বাংলা। লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রতিবাদে উত্তাল হয় দেশও।
আরও পড়ুন: কোনও দোষ করিনি, আমি নির্দোষ, আদালতে দাবি সঞ্জয়ের
আদালতে সিবিআইয়ের পেশ করা চার্জশিটে সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়কে (Civic Volunteer Sanjay Roy) একমাত্র অভিযুক্ত বলা হয়েছিল। ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ারকে একমাত্র ‘অভিযুক্ত’ হিসাবে উল্লেখ করে সিবিআই। আদালতে তাঁর ‘সর্বোচ্চ শাস্তি’র আবেদন করেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আইনজীবী। নির্যাতিতার শরীরে ষে ক্ষত চিহ্ন সঙ্গে সঞ্জয়ের দাঁতের ছাপ মিলে গিয়েছিল। এমনকী সঞ্জয়ের লালারসের সঙ্গে নির্যাতিতা তরুণী স্যাম্পেল মিলে যায়। এই নৃশংস অপরাধের জন্য সিবিআইয় সঞ্জয় রায়ের সর্বোচ্চ সাজার দাবি জানিয়েছে আদালতের কাছে। সব পক্ষের প্রমাণ পরীক্ষা করে সঞ্জয়কে দোষী সাব্যস্ত করেছিল আদালত। এই সাজা শোনালেন বিচারক।
গত ৯ আগস্ট (9 August) কলকাতার (Kokata) বুকে ঘটে যাওয়া আরজিকরে (RG Kar) হাড়হিম করা কাণ্ডের সাজা ঘোষণার সময়। গত শনিবার ১৬২ দিনের মাথায় আরজি কর মামলায় (RG Kar Case)সঞ্জয়কে দোষী সাব্যস্ত করেছিল শিয়ালদহ আদালত। ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৬৪, ৬৬, ১০৩(১) ধারায় দোষী সাব্যস্ত করা হয় সঞ্জয় রায়কে। সে দিন সঞ্জয় আদালতে নিজেকে নির্দোষ বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন তাকে ফাঁসানো হয়েছে। তারপরই সঞ্জয়ের উদ্দেশে বিচারক দাস বলেছিলেন,আমি সমস্ত তথ্য প্রমাণ পরীক্ষা করে দেখেছি আপনিই দোষী। শাস্তি আপনাকে পেতেই হবে।’’ বিচারকের পর্যবেক্ষণ, গত বছরের ৯ অগস্ট ভোরে সঞ্জয় আরজি কর হাসপাতালের সেমিনার হলে ঢুকেছিলেন। এক মহিলা চিকিৎসককে তিনি আক্রমণ করেন, তাঁর মুখ এবং গলা টিপে ধরেন। পরে ওই চিকিৎসক মারা যান। এই মামলায় দোষী সঞ্জয় আপনিই।
দেখুন অন্য খবর