জয়জ্যোতি ঘোষ
৯৪২৫ মাইল। জর্জটাউন থেকে কলকাতার দূরত্ব। যাঁরা জর্জটাউন সম্পর্কে অবহিত নন, তাঁদেরকে জানিয়ে রাখি এটি হচ্ছে প্রথম দুটি ক্রিকেট বিশ্বকাপ (১৯৭৫ এবং ১৯৭৯) জয়ী অধিনায়ক ক্লাইভ লয়েডের জন্মস্থান। গায়নার রাজধানী এই জর্জটাউন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জর্জটাউন এবং কলকাতাকে কোথাও এক করে দিলেন বিগ ক্যাট। একটি বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মঞ্চে উঠে ক্লাইভ লয়েড বলেন, ‘আমি নিজেকে কলকাতার বাসিন্দা বলে মনে করি।’ এটা বলার সঙ্গে করতালিতে ফেটে পড়ে কলকাতার এক পাঁচতারা হোটেলের হলরুম। ক্লাইভকে নিয়ে ৭০ দশকের নস্ট্যালজিয়া যেন ক্ষণিকের জন্য পরতে পরতে ফুটে উঠছিল হলরুমের প্রতিকোণায়। বয়স ৮০ ছুঁই ছুঁই। চেহারায় বার্ধ্যকের ছাপ। পরনে ফরম্যাল আউটফিট। কিন্তু ক্রিকেটীয় আভিজাত্যে এতটুকু ভাঁটা পড়েনি ক্রিকেট দুনিয়ার ‘সুপারক্যাট’-এর।
টেস্ট ক্রিকেট না টি-টোয়েন্ট ক্রিকেট কাকে এগিয়ে রাখবেন? এই প্রশ্নের উত্তরে ক্লাইভ লয়েড বলেন, “টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট যদি ‘এক্সহিবিশন’ হয়, তাহলে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট ‘এক্সামিনেশন’। ক্রিকেটীয় দক্ষতার সঠিক পরীক্ষা হয় টেস্ট ক্রিকেটেই।”
ইডেন গার্ডেন্স প্রসঙ্গে স্মৃতি রোমান্থন করতে গিয়ে ক্লাইভ লয়েড বলেন, ‘অফ ফিল্ডের স্মৃতি খুব একটা সুখকর নয়। ১৯৯৬ বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে অভিশপ্ত ভারত-শ্রীলঙ্কা ম্যাচের রেফারি ছিলাম। তবে ক্রিকেটার হিসেবে দারুণ কিছু স্মৃতি রয়েছে ইডেন গার্ডেন্সে।’ প্রসঙ্গত, ক্লাইভ লয়েড টেস্টে সর্বাধিক রানের নিরিখে নিজের কেরিয়ারের চতুর্থ সর্বোচ্চ রান করেন এই ইডেনেই। ১৯৮৩ সালে ক্রিকেটের স্বর্গোদ্যানে ২৯০ বল খেলে ১৬১ রানে অপরাজিত ইনিংস খেলেন এই কিংবদন্তি ক্যারিবিয়ান।
ভারতীয় ক্রিকেট প্রসঙ্গে ক্লাইভ লয়েড বলেন, ‘ভারতীয় ক্রিকেট দারুণ জায়গায় রয়েছে। ফাস্ট বোলিং বিভাগ যথেষ্ট শক্তিশালী। স্পিন বিভাগও যথেষ্ট ঈর্ষণীয়। ব্যাটারদের মধ্যে বিরাট কোহলি অনবদ্য। শচীন তেন্ডুলকরের শততম টেস্ট সেঞ্চুরির রেকর্ড ভাঙার ক্ষমতা রাখেন বিরাট।’
তবে ভিভ রিচার্ডস এবং বিরাট কোহলির তুলনা প্রসঙ্গে বিশ্বজয়ী ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক বলেন, ‘আমি দু’জনের মধ্যে তুলনায় যেতে রাজি নই। দু’জন আলাদা ধরনের ক্রিকেটার। তাই তুলনা হয় না।’ উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সময় ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের ম্যানেজার হিসেবে শেষ কলকাতায় এসেছিলেন ক্লাইভ লয়েড। ৮ বছর পর এসে আবেগপ্রবণ এই ক্যারিবিয়ান তারকা। জানালেন, আবারও ফিরে আসতে চান এই অপরূপ তিলোত্তমায়।
শুধু কলকাতা নয়, কলকাতা থেকে প্রায় ৩ ঘন্টার দূরত্বে পূর্ব বর্ধমানের পূর্ব সাতগাছিয়া গ্রামে সাতগাছিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্লাটিনাম জুবিলি ট্রফির ফাইনালে হাজির ছিলেন প্রাক্তন উইন্ডিজ অধিনায়ক ক্লাইভ লয়েড। এই প্রথম ভারতের কোনও প্রত্যন্ত গ্রামে পা রাখলেন ক্যারিবিয়ান তারকা। স্বভাবতই মানুষের মধ্যে উৎসাহ ছিল চোখে পড়ার মতো। এই গ্রামে এসে ক্লাইভ লয়েড বলেন, ‘যেকোনও কিছুর জন্যই কঠোর অধ্যাবসায় খুব গুরুত্বপূর্ণ। তাই সবাইকে পরিশ্রমী হওয়া প্রয়োজন। ভবিষ্যতের জন্য সঠিক পরিকল্পনা করে এগিয়ে যাওয়া উচিত প্রত্যেকের।’
এদিন এই অনুষ্ঠানেই দ্বাদশ শ্রেণির এক ছাত্র একটি ছবি এঁকে উপহার দেন ক্লাইভ লয়েডকে। সাতগাছিয়ার এই স্মৃতি নিয়ে ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে ফিরবেন ১৯৭৫ এবং ১৯৭৯ বিশ্বকাপের বিশ্বজয়ী ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক ক্লাইভ লয়েড।
অন্য খবর দেখতে ক্লিক করুন: