পবিত্র ত্রিবেদী
সাল ২০১৪। অনেকেই ভেবেছিলেন বিজেপি সভাপতি রাজনাথ সিং দলের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হবেন। কিন্তু, রাজনাথ সিং-ই গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে দলের নির্বাচনী প্রচার কমিটির চেয়ারম্যান করে বার্তা দিয়ে দিলেন। তারপর দেশ দেখল ‘নির্বাচনী মার্কেটিংয়ে’ সোশ্যাল মিডিয়ায় (Social Media) প্রচারের ঝড়। টুইটার (বর্তমানে এক্স হ্যান্ডল), ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ইউটিউবে মোদি ঘরে-ঘরে পৌঁছে গেলেন। বিপুল মার্জিন নিয়ে ভারতের ক্ষমতায় বসলেন নরেন্দ্র দামোদারদাস মোদি। সম্প্রতি আমেরিকায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয়ের জন্য ইলন মাস্কের মালিকানাধীন এক্স হ্যান্ডলের ‘কনটেন্ট’ প্রচারও অনেক প্রভাব ফেলেছে বলে বিশ্লেষকরা অনেকেই দাবি করেছেন। মহারাষ্ট্র ও ঝাড়খণ্ড বিধানসভা নির্বাচন, বিধানসভা উপ নির্বাচনেও সব দলই প্রচারে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করেছে। কিন্তু, সেই প্রেক্ষিতে মহারাষ্ট্র বিধানসভা নির্বাচনের (Maharashtra Assembly Election) ও বিহার বিধানসভা উপনির্বাচনের (Bihar Assembly by Election) ফল প্রকাশের পর তিন নেট প্রভাবীর বাস্তব চিত্র অনেক প্রশ্ন তুলে দিল বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। সোশ্যাল মিডিয়া প্রভাবীদের ‘ভার্চুয়াল জগতে’ লাইক, কমেন্টে ভরিয়ে দিলেও তাঁর মানে তবে কি এই নয়, বাস্তবের মাটিতে তাঁদের আবেদনের প্রতি পূর্ণ সমর্থন করা হয়? সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাবীদের মাধ্যমে রাজনৈতিকদলগুলির ভোট প্রচার আর নেট প্রভাবীদের সরসারি ভোটে নামা কি তবে ভিন্ন মেরুর ঘটনা? জনপ্রিয় ইউটিউবার ধ্রুব রাঠী, কিংবা সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচুর ফলোয়ার থাকা আজাজ খানকে প্রত্যাখ্যান করলেন মহারাষ্ট্রের বাসিন্দারা। একইভাবে বিহারে প্রত্যাখ্যাত হলেন একদা নরেন্দ্র মোদির ডিজিটাল প্রচার সাফল্যের কারিগর ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোর(পিকে)।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ইউটিউবার ধ্রুব রাঠীর (Dhruv Rathee) সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে প্রায় ৩ কোটি সাবসক্রাইবার রয়েছে। তাঁর ভিডিও-র কোটি কোটি ‘ভিউজ’ হয়। রাজনীতি সহ বিভিন্ন বিষয়কে বিশ্লেষণ করেন তিনি। ট্রেন, বাসে অনেককেই ধ্রুব রাঠীর ভিডিও নিয়ে আলোচনা করতে শোনা যায়। এবার প্রথম খুল্লমখুল্লা কোনও নির্বাচনে নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের জোটকে ভোট দেওয়ার আবেদন করেছিলেন বছর তিরিশের ওই তরুণ নেটপ্রভাবী। মহারাষ্ট্রে তা নিয়ে শোরগোল পড়েছিল। তিনি মহারাষ্ট্রের জনগণের স্বার্থে বেশ কিছু প্রস্তাব রেখেছিলেন। তাতে সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় বইয়ে যায়। এবং দাবি করেছিলেন, ‘ইন্ডিয়া জোটের ‘মহা বিকাশ আঘাড়ী’ ক্ষমতায় এলে তারা আমার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের আশ্বাস দিয়েছে। আমি এবং মহারাষ্ট্রের মানুষ অপেক্ষায় থাকব। আপনি আপনার ভোট দিতে ভুলবেন না।‘ একইসঙ্গে বলেছিলেন, ‘আবেদনের ভিডিওটি এত বেশি শেয়ার করুন যে এটি মহারাষ্ট্রের প্রতিটি প্রান্তে পৌঁছে যায়। এটি পরিবর্তন দেখার সময়।‘ কিন্তু, তাতে নিট ফল শূন্য। বরং সব পূর্বাভাসকে পিছনে ফেলে বিজেপির ‘মহাযুতি’ জোট তথা এনডিএ মহারাষ্ট্রে ২৩৫টি আসন পেয়েছে। এর আগে মারাঠাভূমে কোনও জোটই ২০০-র বেশি আসন পায়নি। সেখানে ইন্ডিয়া জোটের মহাবিকাশ আঘাড়ী মাত্র ৪৯টি আসন পেয়েছে। অথচ মাত্র মাস ছয়েক আগে হওয়া লোকসভা ভোটে মহারাষ্ট্রে মুখ থুবরে পড়েছিল এনডিএ। মহারাষ্ট্রে ৪৮টি আসনের মধ্যে এনডিএ পেয়েছিল মাত্র ১৭টি আসন।
আরও পড়ুন: আগামী বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রীর শপথ নেবেন হেমন্ত সোরেন, প্রস্তুতি
আরেকটি চিত্র উঠে এসেছে, সেখানে হিন্দি সহ বিভিন্ন ভাষার সিনেমা ও সিরিয়াল অভিনেতা আজাজ খান (Azaz Khan) মহারাষ্ট্র বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে মাত্র ১৫৫টি ভোট পেয়েছেন! অথচ তাঁর সোশ্যাল মিডিয়া ফলোয়ার ৫৫ লক্ষ। সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর পোস্টে প্রচুর লাইক ও কমেন্ট পড়ে। তাঁদের অনেকেই মহারাষ্ট্রবাসী। তিনি আজাদ সমাজ পার্টির (কাঁসিরাম) হয়ে ভরসোভা কেন্দ্র থেকে ভোটে লড়েছিলেন। এদিকে, এটা সর্বজনবিদিত যে ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদির দেশের ক্ষমতায় ‘এন্ট্রি’তে নির্বাচনী স্ট্র্যাটেজিস্ট প্রশান্ত কিশোরের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। এমনকী সেই সময় দেশের রাজনীতিতে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারে ঝড় বইয়ের সূচনার কৌশলও না কি তাঁর মস্তিষ্কপ্রসূত। অথচ শনিবার ফল প্রকাশের পর দেখা গেল প্রশান্ত কিশোরের (Prashant Kishore) রাজনৈতিক দল ‘জন সুরজ’ বিহার বিধানসভা নির্বাচনে পুরোপুরি ব্যর্থ। চারটি কেন্দ্রেই তাঁর দলের প্রার্থীরা খুব কম ভোট বা মানুষের সমর্থন পেয়েছেন। পর্যবেক্ষকদের অনেকের প্রশ্ন, তাহলে কি বন্যেরা বন্যে সুন্দর, শিশুরা মাতৃক্রোড়ে আর নেট প্রভাবীদের সৌন্দর্য শুধুই ভার্চুয়াল জগতে?
দেখুন অন্য খবর: