Tuesday, July 1, 2025
HomeScrollAajke | রাজ্যজুড়ে দাঙ্গা লাগানোর পরিকল্পনার পিছনে কারা?
Aajke

Aajke | রাজ্যজুড়ে দাঙ্গা লাগানোর পরিকল্পনার পিছনে কারা?

বাঙালির ঘরে যত ভাইবোন, এক হউক, এক হউক, এক হউক হে ভগবান

Follow Us :

পুলিশের কুকুর গন্ধ শুঁকে বলে দিতে পারে অপরাধী কে, বা অপরাধী কোন দিকে পালিয়েছে? মোদ্দা কথা কুকুরের ঘ্রাণশক্তি প্রবল, তারা অপরাধীদের চিহ্নিত করতে পারে। কিন্তু তাদেরকেও ঘটনাস্থলে আসতে হয়, তাদের নিয়ে আসা হয়, অপরাধীর জামা জুতো শোঁকানো হয় ইত্যাদি। কিন্তু যোগী আদিত্যনাথ এই বাংলায় দাঙ্গা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জেনে গেলেন যে এটা ছিল মমতা সরকারের প্ল্যান, আসলে হিন্দুদের উৎখাত করার জন্যই এই দাঙ্গা লাগানো হয়েছে। তিনি এই কথাগুলো বললেন, সুকান্ত, শুভেন্দু মিছিল নিয়ে বের হলেন সামনে ব্যানারে লেখা হিন্দু হত্যাকারী মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ চাই আর ঠিক সেই মুহূর্তে বিজেপির সমাজমাধ্যম জুড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে বিভিন্ন সময়ে দেশের বিভিন্ন রাজ্যের দাঙ্গা হাঙ্গামার ছবি, সেগুলো দিয়ে বলা হচ্ছে এই দেখুন বাংলা জ্বলছে। কারা করছে? কেন করছে? কেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী সেখান থেকেই বলছেন যে আমাদের রাজ্যের ওয়াকফের নামে হিন্দুদের প্রপার্টি কেড়ে নেওয়া হয়েছে? কে দিল ওনার কাছে এই তথ্য? নাকি উনি গন্ধ শুঁকে বার করলেন? রাজ্যে নির্বাচিত সরকার আছে, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতের নির্দেশ এসে গেল কেন্দ্রীয় বাহিনী নামানোর, কোন যুক্তিতে? মণিপুরের দাঙ্গার ৯ দিনের মাথাতেও কেন্দ্রীয় বাহিনী নামানোর প্রয়োজনীয়তা বোধ করেনি কেউ? আজ চটজলদি কেবল কেন্দ্রীয় বাহিনী নামানোর নির্দেশ নয়, আদালত জানিয়েছে তাঁরা চোখ বুজে তো থাকতে পারেন না? যখন মণিপুর জ্বলছিল? এই সেদিনে যখন উত্তরপ্রদেশের সম্বলে দাঙ্গা হল? সেদিন আদালতের চোখে পড়েনি? এই সিলেকটিভ চোখে পড়া কেন? আমরা জানি কেন, সেটাই বিষয় আজকে। রাজ্যজুড়ে দাঙ্গা লাগানোর পরিকল্পনার পিছনে কারা?

অঙ্ক কষে যাঁরা ভোটের হিসেব লিখছেন লিখুন, খাতার অঙ্ক আর ভোটের অঙ্কের মধ্যে ফারাক কয়েক যোজনের, যাঁরা জানেন, তাঁরা জানেন যে এই বাংলায় তৃণমূলের এক বিরাট বড় ভোট ব্যাঙ্ক হল রাজ্যের মুসলমান সংখ্যালঘু মানুষজন। হ্যাঁ এই ভোট একটা সময়ে ছিল বামপন্থীদের দিকে, যতদিন ছিল, ততদিন তাদের নড়ানো যায়নি, জমি কেড়ে শিল্প স্থাপনের ইস্যু এই প্রান্তিক সংখ্যালঘু মানুষজনের মধ্যে এক ধরনের জমি হারানোর ভয় ধরিয়ে দিয়েছিল, তাঁরা সরে এসেছিলেন, সপ্তমেই শেষ, অষ্টম বাম সরকার আর হয়নি, হবে বলে মনেও হয় না।

আরও পড়ুন: Aajke | আটকাও মমতাকে, ডান, বাম, ইউটিউবার, সাংবাদিক এক হও

সেই ভোট ব্যাঙ্ক এখন মমতার দখলে, এখনও রাজ্যের প্রান্তিক সংখ্যালঘুদের সবচেয়ে বড় অংশ মমতার পক্ষেই আছেন। সেই রক সলিড ভোট বেসটাকে নাড়িয়ে দেওয়ার একটা পরিকল্পনা কাজ করছে, ভেতর থেকে এবং বাইরে থেকেও। হিন্দু সংগঠন, আমাদের কাঁথির খোকাবাবু বা দিলু ঘোষ তো বলছিলেনই যে হিন্দু খতরে মে হ্যায়, ওদিকে একই তীব্রতার সঙ্গে ছোট হলেও কিছু মুসলমান সংখ্যালঘুদের সংগঠন এ রাজ্যে ইসলাম খতরে মে হ্যায় বলে স্লোগান দিচ্ছেন। লক্ষ্য একটাই, হিন্দু ভোট যততা পারা যায় কাটো আর পাশাপাশি মুসলমানদের ভোটও সরে যাক মমতার পাশ থেকে, এটাই তৃণমূলকে হারানোর গেমপ্ল্যান। সেই পরিকল্পনার প্রথম পদক্ষেপ হল এমন একটা অবস্থা তৈরি করা যাতে সরকার, প্রশাসন বাধ্য হয়, গুলি চালাতে, লাঠিচার্জ করতে, দু’ চারজনের লাশ পড়ে গেলে তো কথাই নেই। আর সেই প্ল্যানমাফিক লাশ পড়ে গেছে, ওনারা নেমেছেন, শ্যামাপ্রসাদের হিন্দু হোমল্যান্ড বাঁচানোর জন্য, যে শ্যামাপ্রসাদের দলবলকে চূড়ান্ত সাম্প্রদায়িক বলেছিলেন আমাদের নেতাজি সুভাষ বসু, যে শ্যামাপ্রসাদের ওই উস্কানি দেওয়ার মিটিং ভন্ডুল করেছিলেন, নেতাজি সুভাষ বসুর নির্দেশে তাঁর সমর্থকেরা, মাথা ফেটেছিল শ্যামাপ্রসাদের। সেই বাংলায় মাথাচাড়া দিচ্ছে এই সাম্প্রদায়িক বিজেপি, একমাত্র লক্ষ্য আগামী ২০২৬-এর ভোটে হিন্দু ভোটের সর্বোচ্চ মেরুকরণ। যে দলটা মনেপ্রাণে বাঙলি বিরোধী, যে দলের ঘোষিত নীতির জন্যই দেশ জুড়ে আমিষ-নিরামিষ লড়াই শুরু হয়েছে, যে দল মানুষের খাবারের ভিত্তিতে, পোশাক পরিচ্ছদের ভিত্তিতে বিভাজন আনে, সেই দল যারা দুর্গাপুজো বা কালীপুজোর বদলে রামনবমী বা হনুমান জয়ন্তীকে উদযাপন করাটাকে তাদের কর্মসূচির মধ্যে রাখে সেই দল এই রাজ্যে হিন্দুত্বের কথা বলে, যে হিন্দুত্ব বাঙালি চেনে না। কাজেই এসব দিয়ে মানুষের কাছে যাওয়া যাবে না সেটা তারা বুঝে ফেলেছে। এবারে শেষ চাল, দাঙ্গা লাগাও দু’ চারটে দশটা হিন্দু মরুক, আর সেই লাশের সিঁড়ি বেয়ে ক্ষমতার শীর্ষে চড়তে চায় এরা। গোটা উত্তর ভারতের দিকে তাকিয়ে দেখুন, সংখ্যালঘুরা বুঝে গেছেন বাঁচতে হলে মাথা নিচু করেই থাকতে হবে, উদার, ধর্মনিরপেক্ষ মানুষজন প্রতিবাদ ভুলে যাচ্ছেন, হ্যাঁ সেই মাঠে বাংলা এখনও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে যা না-পসন্দ আমাদের মোদি–শাহের, তারা চায় দাঙ্গা, রাষ্ট্রপতি শাসন এবং শেষমেশ লক্ষ্য রাজ্যের ক্ষমতা। আমরা আমাদের দর্শকদের জিজ্ঞেস করেছিলাম, এতদিন ধরে রাজ্যে পাশাপাশি বাস করে আসা হিন্দু মুসলমান ঐক্য ভাঙতে চায় কারা? কারা রাজ্য জুড়ে দাঙ্গা লাগানোর লাগাতার পরিকল্পনা চালাচ্ছেন? শুনুন মানুষজন কী বলেছেন।

আসলে বাঙালির এক সুদীর্ঘ ইতিহাস আছে, যে ইতিহাসের প্রতিটা পাতায় আছে ধর্মনিরপেক্ষতার কথা, ধর্ম নিয়ে এক উদার মনোভাবের কথা, আমাদের বাংলার ইতিহাসে ধর্ম এক অনুষঙ্গ মাত্র, তা কখনও সমাজকে ভাগ করতে পারেনি, আউল বাউল লালন নজরুল রবিঠাকুরের ছায়ায় বেড়ে ওঠা বাঙালিরা তার পড়শিকে নিয়ে বিদ্বেষ ছড়াতে রাজি ছিল না কোনও দিন। দাঙ্গা হয়নি? হয়েছে, কিন্তু দাঙ্গা যত মানুষ করেছে, সে দাঙ্গা থামাতে তারচেয়ে ঢের বেশি লোক নেমেছে রাস্তায়, হাতে হাত ধরেছে, রাখি পরিয়েছে, বাঙালির প্রাণ, বাঙালির মন, বাঙালির ঘরে যত ভাইবোন, এক হউক, এক হউক, এক হউক হে ভগবান, এটাই আমাদের প্রার্থনা ছিল, এটাই আজও আমাদের প্রার্থনা।

RELATED ARTICLES

Most Popular


Deprecated: Automatic conversion of false to array is deprecated in /var/www/ktv/wp-content/themes/techinfer-child/functions.php on line 39