কলকাতা: তৃণমূল কংগ্রেসের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের সিবিআই রক্ষাকবচ সংক্রান্ত আবেদন খারিজ করে দিল কলকাতা হাইকোর্ট। আগাম জামিনের রক্ষাকবচের জন্য অনুব্রতর আইনজীবীদের নতুন করে আবেদন করতে পরামর্শ দিল আদালত। গরুপাচার কাণ্ডে বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলকে একাধিক বার নোটিস দেয় সিবিআই। কিন্তু, প্রতিবারই কোনও না কোনও কারণ দেখিয়ে হাজিরা এড়িয়ে গিয়েছেন বীরভূমের দোর্দণ্ডপ্রতাপ তৃণমূল নেতা। অনুব্রতর রক্ষাকবচ চেয়ে এ দিন আদালতে সওয়াল করেন আইনজীবী কিশোর দত্ত এবং সন্দীপ গঙ্গোপাধ্যায়।
বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার এজলাসে শুক্রবার এই মামলার শুনানি চলার সময় সিবিআইয়ের তরফে অনুব্রতর রক্ষাকবচের বিরোধিতা করা হয়। সিবিআইয়ের পক্ষে অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল এমবি রাজু বলেন, ২০২১-এর এপ্রিলে অনুব্রত মণ্ডলকে প্রথম নোটিস দেওয়া হয়েছিল। তখন থেকেই তিনি সিবিআইয়ের মুখোমুখি না-হওয়ার জন্য নানান টালবাহানা করছেন। আসছেন না। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ফের তাঁকে নোটিস দেওয়া হয়েছিল। তখনও তিনি হাজিরা দেননি। সর্বশেষ নোটিসটি দেওয়া হয়েছে মার্চের প্রথম সপ্তাহে।
আদালতে সিবিআইয়ের আইনজীবীর প্রশ্ন, কলকাতায় অনুব্রত মণ্ডল আসছেন না, এমনটা নয়। তিনি তাঁর প্রয়োজনে কলকাতায় আসেন। তা হলে কেন বারবার তলব করার পরেও হাজির হচ্ছেন না? সিবিআইয়ের আরও বক্তব্য, অনুব্রত নিয়মিত রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় রাজনৈতিক সভা করছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি অ্যাক্টিভও রয়েছেন। রাজনৈতিক প্রোগ্রামের ভিডিয়ো আপলোডও করছেন। একজন অসুস্থ মানুষ কী ভাবে তা করতে পারেন? বিভিন্ন জেলায় রাজনৈতিক কার্যকলাপের তালিকা তারিখ-সহ আদালতে পেশ করে সিবিআই।
আরও পড়ুন: Anubrata Mondal Cow Smuggling: অসুস্থ অনুব্রত, সিবিআই হাজিরায় পাঠালেন আইনজীবীকে
সিবিআইয়ের আইনজীবীর সওয়াল শুনে বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা জানতে চান, গরুপাচার মামলায় অনুব্রত মণ্ডল মূল অভিযুক্ত নয়। তা হলে সিবিআইয়ের মুখোমুখি হতে সমস্যা কোথায়? যদি মনে হয় সিবিআই অনুব্রত মণ্ডলতে গ্রেফতার করতে পারে, সে ক্ষেত্রে কেন তিনি আগাম জামিনের আবেদন করছেন না, বিচারপতি সে প্রশ্নও তোলেন। জবাবে অনুব্রতর আইনজীবীর বক্তব্য, সিবিআই নতুন কোনও মামলায় তলব করলে, সে ক্ষেত্রে ভাবা যেত। ২০১৯ সালের একটি পুরনো মামলা অনুব্রতকে বারবার তলব করা হচ্ছে।
আইনজীবী মারফত অনুব্রতর আবেদন, ‘আমি অসুস্থ। চিকিৎসা চলছে বলে সিবিআইকে জানিয়েছিলাম। আমার পক্ষে কলকাতায় যাওয়া সম্ভব নয়। আমি ভিডিয়ো কনফারেন্সে করতে পারি। বাড়ির কাছাকাছি কোথাও জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও আপত্তি নেই বলে উল্লেখ করা হয়।
আরও পড়ুন: Anubrata Mondal: শ্বাসকষ্ট নিয়ে পিজিতে অনুব্রত, প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছাড়া পেলেন
সবমিলিয়ে মোট চার বার অনুব্রতকে সিবিআই তলব করে। প্রথমবার তাঁকে সিবিআই হাজিরার নির্দেশ দিয়েছিল ভোট পরবর্তী হিংসা-মামলার সূত্রে। সেই সময় তিনি পুরভোটে ব্যস্ততার জন্য হাজির হতে পারবেন না বলে জানিয়েছিলেন। পরে তাঁকে আরও দু’বার তলব করা হয় গরুপাচার কাণ্ডে। ২৫ ফেব্রুয়ারি পুনরায় তলব পেয়ে রক্ষাকবচ চেয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন অনুব্রত। হাইকোর্ট স্বস্তি পেয়ে তৃণমূল নেতার প্রতিক্রিয়া ছিল, ‘আদালতের উপর আমার সম্পূর্ণ আস্থা আছে। আইন আইনের পথে চলবে।’ এর আগেও অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে অনুব্রত সিবিআইয়ের হাজিরা এড়িয়েছিলেন। ওই সময় সিবিআই জানতে পারে, অসুস্থতার কথা বলা হলেও, অনুব্রত হাজিরার নির্দিষ্ট দিনে দলের একাধিক কর্মসূচিতে যোগ দেন। আইনজীবী মহলের মতে, পরপর চার বার সিবিআইয়ের হাজিরা এড়ানো নজিরবিহীন।