কলকাতা: নতুন বছরের শুরু থেকেই অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন রেশন ডিলাররা (Ration Dealer)। ১ জানুয়ারি থেকে আর রেশন পাবেন না সাধারণ মানুষ, এমনটাই জানিয়েছেন অল ইন্ডিয়া ফেয়ার প্রাইস শপ ডিলার্স ফেডারেশনের সেক্রেটারি বিশ্বম্ভর বসু। কমিশন নিয়ে অসন্তোষের জেরে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে সর্বভারতীয় এই সংগঠন। পয়লা জানুয়ারি থেকে দেশের প্রায় ৫ লক্ষ ৩৮ হাজার রেশন দোকান বন্ধ থাকবে। রাজ্যেও বন্ধ থাকবে ২০ হাজারের বেশি রেশন দোকান। যার জেরে সমস্যায় পড়তে চলেছেন প্রায় ৮১ কোটি গ্রাহক।
আজ ২৯ ডিসেম্বর অল ইন্ডিয়া ফেয়ার প্রাইস অফ ডিলার ফেডারেশনের পক্ষ থেকে একটি অবস্থান বিক্ষোভের কর্মসূচি নেওয়া হয় কলকাতার নিউ মার্কেট খাদ্য ভবনের সামনে। বিক্ষোভের মঞ্চ থেকে বিশ্বম্ভর বসু আগামী দিনের আন্দোলনের কর্মসূচি গুলো জানিয়ে তাদের দাবিদাওয়া গুলো নিয়ে দিল্লি সফরে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন। আগামী এক জানুয়ারি থেকে অল ইন্ডিয়া ফেয়ার শপ রেশন ডিলার ফেডারেশন ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। জানুয়ারির ১৬ তারিখ দিল্লিতে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের সঙ্গে দেখা করে ডেপুটেশন দেবে রেশন ডিলার ফেডারেশন।
আরও পড়ুন: ২ মাস ধরে মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেফতার পুলিশকর্মী বাবা
কী কী দাবি থাকছে ফেডারেশন-এর?
(১) Distributor/Wholesaler-দের থেকে রেশনদোকান গুলিতে Doorstep Delivery System এর মাধ্যমে খাদ্যশস্য সরবরাহের সময় Distributor/Wholesaler-দের শ্রমিকদের প্রতি বস্তা ওজন করে খালি চট ও প্লাস্টিকের বস্তার ওজন বাদ দিয়ে সঠিক খাদ্যশস্য প্রত্যেক দোকানে সরবরাহ করতে হবে।
(২) দীর্ঘদিন যাবৎ বাকি থাকা বকেয়া কমিশন অবিলম্বে পরিশোধ করার ব্যবস্থা করতে হবে।
(৩) NFSA আইনানুযায়ী, কমিশন নির্ধারণের সময় যথাক্রমে ৫৪/- টাকা থেকে টাকা ৭০/- টাকা করা হয়েছিল। ডিসেম্বর ২০১৯ থেকে মার্চ ২০২০ পর্যন্ত, সংশ্লিষ্ট চারমাসের জন্য রেশনদোকানদারদের কুইন্টাল প্রতি ১৬/- টাকা থেকে কম কমিশন প্রদান করা হয়েছিল। এছাড়াও যবে থেকে National Food Security Act চালু হয়েছে তবে থেকেই খাদ্যদপ্তর রাজ্যের রেশনদোকানদার গুলিকে আইনানুযায়ী তাঁদের প্রাপ্য কমিশন থেকে বঞ্চিত করে ১৬/- টাকা কুইন্টাল প্রতি কম কমিশন প্রদান করেছে। জানুয়ারি ২০১৬ থেকে নভেম্বর ২০১৯ পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট সাতচল্লিশ মাসের রেশনদোকানদারদের কুইন্টাল প্রতি বকেয়া প্রাপ্য কমিশন অবিলম্বে মিটিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
(৪) করোনার সময়কালীন যখন রাজ্য সরকার বিনামূল্যে রেশনপরিষেবা শুরু করেছিল, উক্ত সময়ের কিছুদিন যাবৎ রেশনডিলারা টাকা দিয়ে মাল কিনে তা বিনামূল্যে বিতরণ করতে বাধ্য হয়েছিলেন। সেই টাকা এখনও অবধি রেশন ডিলাররা পায়নি। সেই টাকা অবিলম্বে দিতে হবে।
(৫) রাজ্য খাদ্যদপ্তরের জারী করা Control Order – Gazette Notification No. 4050-FS/Sectt/Food/4P- 09/2012 (Pt) dated 29.09.2023 এবং 4049-FS/Sectt/Food/4P-09/2012 (Pt) dated 29.09.2023 – গুলিতে সংশোধিত আর্থিক জরিমানার পরিমাণ যা উল্লেখ করা আছে তা অবিলম্বে প্রত্যাহার অথবা সংশোধন করতে হবে কারণ উক্ত Control Order দুটিতে যে আর্থিক জরিমানা কোনওরকম ভাবেই বর্তমান রেশনদোকানগুলির পরিস্থিতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
(৬) বর্তমান রেশনদোকান গুলির স্থিতিশীলতা সুনিশ্চিত না করে নতুন রেশন দোকান খোলার ব্যাপারে রাজ্য খাদ্যদপ্তর যে সকল নতুন ভ্যাকেন্সি ঘোষণা করে রেশনকার্ডের সংখ্যা সীমিত করে দিচ্ছে তা অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে।
এই দাবীগুলিকে মেনে নেওয়ার জন্য ডিসেম্বর ২০২৩ পর্যন্ত ফেডারেশন-এর তরফ থেকে সময় দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে তেমন কোনও সাড়া না পাওয়ায় তাঁরা আন্দোলনের পথে নামতে বাধ্য হয়েছেন বলে উল্লেখ করেছেন ফেডারেশনের সেক্রেটারি বিশ্বম্ভর বসু। আন্দোলনের কর্মসূচী হিসাবে ইংরাজী নতুন বছরের প্রথম দিন থেকেই সারাদেশে অনির্দিষ্টকালীন রেশন বন্ধের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ফেডারেশনের সদস্যরা।
আরও খবর দেখুন