কলকাতা: ভোট পরবর্তী ‘হিংসা’ মামলায় কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে যাবে রাজ্য সরকার৷ সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে এই মামলার তদন্তভার সিবিআই গ্রহণ করেছে৷ কিন্তু, এই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা নিরপেক্ষভাবে কাজ করছে না বলে অভিযোগ রাজ্যের৷ তাই, সপুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হতে চলেছে রাজ্য সরকার৷
বুধবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “সিবিআই কেন্দ্রের নির্দেশে কাজ করছে৷ তাদের থেকে নিরপেক্ষ তদন্ত আশা করা যায় না৷’’ বেশ কয়েক বছর ধরেই রাজ্যের সঙ্গে সিবিআইয়ের বিরোধ ছিল চলছে৷ তার মাঝেই নতুন বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে৷ সিবিআই তৃণমূল কংগ্রেসের পদাধিকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করতে ব্যস্ত বলেও তৃণমূলের তরফে অভিযোগ তোলা হয়েছে৷
আরও পড়ুন-উপ নির্বাচনের উপযুক্ত সময় এখনই, রাজ্যের সুরেই দিল্লিকে জানাল কমিশন
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রের বিজেপি নেতৃত্বাধীন মোদি সরকারের অন্যতম সমালোচক৷ তাঁর দীর্ঘদিনের অভিযোগ, বিরোধীদের সঙ্গে রাজনৈতিক ভাবে পেরে উঠতে না পেরে মোদি সরকার সিবিআই-কে অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করছে৷
আরও পড়ুন-এই খাটিয়ার দাম ৪১ হাজার টাকা, কারণ জানলে অবাক হবেন
১৯ অগস্ট কলকাতা হাই কোর্ট নির্দেশ দেয় রাজ্যের ভোট পরবর্তী ‘হিংসা’য় ‘জঘণ্য খুন-ধর্ষণ’-এর তদন্ত করবে সিবিআই৷ সেই নির্দেশে বিচারক বলেন, একটা বিশেষ তদন্তকারী দল ভোট পরবর্তী ‘হিংসা’ মামলার দতন্ত করবে৷ একই সঙ্গে আদালত রাজ্যের পুলিশকে শাসক দলের হয়ে কাজ করার অপরাধে অভিযুক্ত করে৷ আদালত বলে, কোনও ক্ষেত্রে পুলিশ এফআইআর করেনি, কোথাও আবার গুরুতর অপরাধে শুধু মাত্র এইআইআর করা হয়েছে৷ সঠিক আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি৷
আরও পড়ুন- আফগানিস্তান ক্রিকেট টিমকে টেস্ট ম্যাচ খেলার অনুমতি দিল তালিবান
সিবিআই দায়িত্ব ভার গ্রহণের পর সিবিআই চারটি বিশেষ দল গঠন করেছে৷ প্রতিটি দলের নেতৃত্বে থাকবেন সিবিআইয়ের জয়েন্ট ডিরেক্টর পদমর্যাদার অফিসাররা৷ তাঁদের সঙ্গে তদন্তে সহযোগিতা করবেন অতিরিক্ত ডিরেক্টররা৷ সূত্র্রের খবর, প্রতিটি দলে দুই ডজন করে অফিসার থাকবেন৷ সব মিলিয়ে ৯৬ জন অফিসার ভোট পরবর্তী হিংসা মামলার তদন্তে থাকছেন৷
আরও পড়ুন- চতুর্থ স্তম্ভ: আহা গণতন্ত্র, বাহা গণতন্ত্র(19/08/21)
সূত্রের খবর, বাকি ভাঙচুর করা, মারধর করা, আগুন লাগানো, ঘরছাড়া করার মতো অপেক্ষাকৃত কম অশান্তির ঘটনায় সিট গঠন করার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। তিন আইপিএস আধিকারিক সুমন বালা শাউ , সৌমেন মিত্র এবং রণবীর কুমারের নেতৃত্বে গঠিত হবে সিট।
আরও পড়ুন- ভোট পরবর্তী হিংসা নিয়ে রাজ্যকে অতিরিক্ত হলফনামার নির্দেশ আদালতের
এছাড়াও যে সমস্ত অভিযোগ এখনও পর্যন্ত জমা নেওয়া হয়নি এবং জাতীয় মানবাধিকার কমিশন যে অভিযোগগুলো পায়নি সেই সমস্ত অভিযোগের তদন্তও করবে সিট। সমস্ত তদন্তই হবে আদালতের নজরদারিতে। ৬ সপ্তাহের মধ্যে সিট এবং সিবিআই দুই সংস্থাকেই তদন্তের রিপোর্ট জমা করতে হবে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে।
আরও পড়ুন-মার্কিন বিমান থেকে খসে পড়ে মৃত্যু তরুণ আফগান ফুটবলারের
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের উপর হামলা হয় যাদবপুরে। ছোঁড়া হয় ইট, পাটকেল। সেইদিন দায়িত্বে থাকা আইপিএস রশিদ মনির খানের বিরুদ্ধেও তদন্ত চলবে। তদন্ত করবে সিট এবং সিবিআই দুই তদন্তকারী সংস্থাই। এছাড়াও ভোট পরবর্তী হিংসায় ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে রাজ্যকে। ভোট পরবর্তী হিংসায় যাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাঁদের ক্ষতিপূরণ ব্যাংক ট্রান্সফারের মাধ্যমে দিতে হবে রাজ্য সরকারকে।
আরও পড়ুন- ভোট পরবর্তী হিংসা মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ হাইকোর্টের
গত ৩ অগস্ট এই ভোট পরবর্তী মামলার শুনান হয়েছিল হাই কোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দলের নেতৃত্বে। তবে, বিজেপির তরফে প্রথম থেকেই পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে অভিযোগ তোলা হয়েছিল। এরপর মানবাধিকার কমিশনকে হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে রিপোর্ট তৈরি করে হাইকোর্টে জমা দিতে। তবে, রাজ্য সরকার জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্টে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ এনেছিল। যদিও বৃহস্পতিবার তা ভিত্তিহীন বলে জানিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট।