বোলুপুর: শুক্রবারই কালীঘাটে তৃণমূলের বৈঠকে দলীয় সংগঠনের দায়িত্বে ব্যাপক রদবদল করেছেন নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অনুব্রতহীন বীরভূম আপাতত তিনিই সামাল দেবেন বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন। রাত পোহাতেই বীরভূম জেলার তৃণমূল সহ-সভাপতি সুদীপ্ত ঘোষের এক ফেসবুক পোস্ট ঘিরে জোর বিতর্ক শুরু হয়েছে। ফেসবুকে সুদীপ্ত লিখেছেন, বোলপুর টাউনে কোনও ফালতু রাজনীতি হতে দেব না। এখানে আমরা মিলেমিশে থাকি। ধান্দাবাজ রাজনীতিকদের এখানে কোনও জায়গা নেই।
কাকে নিশানা করে এই পোস্ট করেছেন সুদীপ্ত, তা অবশ্য স্পষ্ট নয়। প্রশ্ন উঠেছে, “ধান্দাবাজ রাজনীতিক বলতে সুদীপ্ত কাকে বোঝাচ্ছেন?” বীরভূমের এক প্রবীণ তৃণমূল নেতা বলেন, এখনও পর্যন্ত নেত্রী বীরভূমের দায়িত্ব ব্যক্তিগতভাবে কাউকেই দেননি। জেলা সামাল দেওয়ার জন্য আট সদস্যের কোর কমিটি গঠন করেছেন। আর বীরভূম তিনি নিজে দেখবেন বলে জানিয়েছেন।
আরও GHলুন : SSC Group C Recruitment | এসএসসি গ্রুপ সির কাউন্সেলিংয়ের তারিখ প্রকাশ্যে
নিজের ফেসবুক পোস্ট নিয়ে শনিবার বেলায় মুখ খোলেন তৃণমূলের এই নেতা। কলকাতা টিভি ডিজিটালকে সুদীপ্ত বলেন, আমি যে ফেসবুক পোস্টটি করেছি সেটা আমার ব্যক্তিগত মত। বোলপুর শহের দীর্ঘদিন ধরে বামেরা রাজনীতি করেছে। সেই সময়ই অনুব্রত মণ্ডল, বিকাশ রায় চৌধুরীরা বিরোধী বোর্ড চালিয়েছেন। বোলপুরে বরাবর শান্তি ছিল। তবে এখন বীরভূমের রাজনীতিতে স্বার্থান্বেষীদের প্রভাব বেড়েছে। বোলপুরের মাটিতে এই সব ধান্দাবাজকে বরদাস্ত করব না।
সুদীপ্ত বলেন, গতকাল দিদি বলেছেন, তিনিই বীরভূমের দায়িত্ব সামলাবেন। বীরভূমে তৃণমূল নামে বাসের চালক খোদ দিদি। কাজেই জেলা কমিটি,কোর কমিটির কোনও মানে নেই। জেলা কমিটি বা কোর কমিটিতে আমি থাকলাম কী থাকলাম না, তাতে কিছু যায় আসে না। দিদি বীরভূমের চালকের আসনে, আমি দিদির অনুগত সৈনিক। ওই সব কোর কমিটি ফমিটি মানি না।
জেলার রাজনীতিতে সুদীপ্ত ঘোষ জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত। বর্তমানে বোলপুর পুরসভার সাংগঠনিক দায়িত্বে রয়েছেন তিনি। তাঁর স্ত্রী বোলপুর পুরসভার চেয়ারপার্সন। তারপরেও কী এমন ঘটল যে, সুদীপ্ত এই ধরনের ফেসবুক পোস্ট করে বসলেন, প্রশ্ন তুলেছেন অনুব্রত বিরোধী বীরভূমের আর এক তৃণমূল নেতা। তিনি বলেন, অনুব্রতর দাক্ষিণ্যে সুদীপ্ত তো অনেক কিছুই পেয়েছেন। আর কত চাই।
অনুব্রত মণ্ডল গ্রেফতারের পর প্রথম বীরভূম সফরে গিয়েও মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, ওই জেলার দেখভাল তিনিই করবেন। মাঝে মধ্যেই বীরভূমে আসবেন। এরপর অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় জেলা তৃণমূল দেখভালের জন্য চার সদস্যের একটি কোর কমিটি গঠন করে দেন। পরবর্তীকালে নেত্রী সেই কোর কমিটির কলেবর আরও বাড়িয়ে সদস্য সংখ্যা আট করে দেন। জেলায় তীব্র অনুব্রত বিরোধী নানুরে দাপুটে নেতা কাজল শেখেকে কোর কমিটিতে রাখার কথা ঘোষণা করেন নেত্রী বীরভূমে দাঁড়িয়েই। কোর কমিটিতেই ঢুকেই তার কার্যকলাপ নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেন। কাজলের অভিযোগ ছিল, কোর কমিটির বৈঠক নিয়মিত হয় না। সেই অভিযোগ ঘিরে কমিটির অন্য সদস্যদের সঙ্গে কাজলের দূরত্ব বাড়ে। এখন কাজল জেলায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। কাজলের বিভিন্ন বক্তব্য নিয়ে দলের অন্দরে অস্বস্তিও বাড়ছে। সুদীপ্ত কাজলেরও বিরোধী বলে পরিচিত। দলের একটা অংশ বলছে, তিনি আসলে কাজলকেই টার্গেট করে এদিন এসব কথা বলেছেন।
জেলার রাজনৈতিক মহল মনে করছে, অনুব্রতহীন বীরভূমে আসলে শাসক দলের অবস্থা বেশ ছন্নছাড়া। তাই নেতারা যে যাঁর মতো বিতর্কিত মন্তব্য করেও পাড় পেয়ে যাচ্ছেন। এই পরিস্থি্তির মধ্যেই কালীঘাটের বৈঠকের পরের দিনই বিতর্কিত ফেসবুক পোস্ট করে বীরভূমের তৃণমূলকে আরও অস্বস্তিতে ফেললেন জেলা সহ-সভাপতি সুদীপ্ত।
শেয়ার করুন