কলকাতা: তিন মাসের মধ্যে বাম-কংগ্রেসের সাগরদিঘি মডেল তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ল। বিধানসভায় কংগ্রেসের (Congress) সবেধন নীলমণি সাগরদিঘির (Sagardighi) বায়রন বিশ্বাস (Byron Biswas) তৃণমূলে যোগ দিলেন। সোমবার ঘাটালে তৃণমূলের (TMC) জনসংযোগ যাত্রার মাঝেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Abhishek Banerjee) হাত থেকে তৃণমূলের পতাকা তুলে নিলেন বায়রন। আর তৃণমূলে যোগ দিয়েই তিনি অভিযোগ করলেন, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীকে (Adhir Chowdhury) বিজেপির বিরুদ্ধে কোনও কথা বলতে দেখেননি তিনি। একই সঙ্গে তিনি বলেন, আমি বরাবর তৃণমূলই করতাম। তৃণমূলের টিকিট পাইনি বলে কংগ্রেসের টিকিটে দাঁড়িয়েছি। দলবদলু বায়রনের আরও দাবি, তাঁর জয়ের পিছনে কংগ্রেসের কোনও অবদান ছিল না। তিনি কংগ্রেসের ভোট পাননি, সাগরদিঘির মানুষের ভোট পেয়েছেন। দল বললে বিধায়ক পদে ইস্তফা দিয়ে দেখিয়ে দেব, ফের জেতার ক্ষমতা রাখি আমি।
বায়রনের তৃণমূলে যোগদান পঞ্চায়েত ভোটের মুখে বাম-কংগ্রেস সমঝোতার পক্ষে যে একটা বড় ধাক্কা, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। মাত্র তিন মাস আগে সাগরদিঘি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে বায়রন জেতার পর বুক বাজিয়ে অধীর দাবি করেছিলেন, এটাই হবে আগামিদিনে বাংলায় মডেল। এই বাম-কংগ্রেস জোটের মডেলেই আগামী সমস্ত ভোটে তৃণমূল এবং বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই হবে। একই কথা শোনা গিয়েছিল সিপিএমের (CPM) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের (Mohammad Salim) গলাতেও। গত বেশ কিছুদিন ধরে শুধু মুর্শিদাবাদ জেলাতেই বিভিন্ন প্রান্তে তৃণমূল এবং বিজেপি ছেড়ে বহু নেতা-কর্মী কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন। প্রায় সমস্ত যোগদান শিবিরে উপস্থিত থেকে অধীর দাবি করেন, এই জেলা থেকে তৃণমূলের শেষের সেদিন শুরু হয়ে গিয়েছে। তার মধ্যেই বিধানসভায় কংগ্রেসের একমাত্র শিবরাত্রির সলতে বায়রন তৃণমূলে যোগ দিয়ে অধীরের বুকে অনেকটাই ধাক্কা দিলেন।
আরও পড়ুন: Abhishek Banerjee | দরজা খুললে অনেকে ঢুকে পড়বে, কেউ চ্যালেঞ্জ করলে খুলে দেব, হুঁশিয়ারি অভিষেকের
এদিন মেদিনীপুরে বায়রনকে পাশে নিয়ে অভিষেকও কড়া ভাষায় আক্রমণ করলেন কংগ্রেস এবং অধীরকে। তাঁর স্পষ্ট অভিযোগ, রাজ্য কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব তৃণমূলের বিরোধিতা করে বকলমে বিজেপির হাত শক্ত করছেন। তিনি বলেন, আমাদের নেত্রী কর্নাটকে নো ভোট টু বিজেপি বলে আওয়াজ তুলেছিলেন। ওই রাজ্যে কংগ্রেসের জয়ের পর নেত্রী বলেছিলেন, যেখানে যে দল শক্তিশালী, সেখানে তাদের প্রাধান্য দেওয়া হোক। সেই সূত্র অনুসারে আমরা কর্নাটকে প্রার্থী দিতে যাইনি।
অভিষেক বলেন, এই রাজ্যে তৃণমূলই বড় শক্তি। আমরাই বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করছি। এই অবস্থায় কংগ্রেসের উচিত আমাদের হাত ধরা। তা না করে অধীর চৌধুরী তৃণমূলের বিরোধিতা করছেন। তাতে তো সুবিধা হচ্ছে বিজেপির।
তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেকের দাবি, ভোটে দাঁড়ানোর আগে থেকেই বায়রন তাঁর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছিলেন। বায়রন তৃণমূল পরিবারেরই লোক। তিনি বলেন, যে কোনও কারণেই হোক, আমার সঙ্গে বায়রনের যোগাযোগ হয়ে ওঠেনি। সম্প্রতি তাঁর সঙ্গে আমার আবার যোগাযোগ হয়। গতকাল আমার সঙ্গে বায়রনের ফোনে কথা হয়। তারপর আজ তিনি তৃণমূলে যোগ দিলেন। আশা করব, তৃণমূলে মতাদর্শ মেনে তিনি বিজেপির বিরুদ্ধে কাজ করবেন আগামিদিনে।
প্রশ্ন হল, বায়রন যে তৃণমূলের সঙ্গে তলে তলে যোগাযোগ রাখছিলেন, তা কি অধীরের মতো পোড় খাওয়া নেতা জানতে পারেননি? নাকি সব জেনেশুনেও তিনি চুপ করে ছিলেন? বেশ কিছুদিন ধরে বায়রন দলের সমস্ত কর্মসূচি এড়িয়ে যাচ্ছিলেন। তখনই তো অধীরের বোঝা উচিত ছিল যে ডাল মে কুছ কালা হ্যায়। এমনটাই বলছেন জেলার অন্য কংগ্রেস নেতাদের একাংশ। যাই হোক, শেষ পর্যন্ত তিনি তৃণমূলে যোগ দিয়ে আবার বিধানসভায় কংগ্রেসকে শূন্য করে দিলেন।