Monday, June 9, 2025
Homeচতুর্থ স্তম্ভচতুর্থ স্তম্ভ: বিজেপির বেড়ে ওঠা কলেবরে মেদ জমছে, কোলেস্টরেল বাড়ছে

চতুর্থ স্তম্ভ: বিজেপির বেড়ে ওঠা কলেবরে মেদ জমছে, কোলেস্টরেল বাড়ছে

Follow Us :

যে কোনও বৃদ্ধির এক সমস্যা আছে, যে কোনও। কোনও প্রতিষ্ঠান, কোনও রাজনৈতিক দল, কোনও ব্যবসা, যা খুশি হোক, তার বৃদ্ধি দেখতে ভালো লাগে, বড় হচ্ছে দেখলে মনে হয় বাহ, এই তো চাই। কিন্তু তারপরেই আসে ভাঙন, বিভিন্ন সমস্যা৷ কিছুদিন আগেও যাকে মনে হচ্ছিল এক বিশাল ব্যাপার তা হঠাৎই তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে। ১৯৫২, ১৯৫৭, ১৯৬২, ১৯৭১-এ কেউ ভেবেছিল ১৯৭৭-এ কংগ্রেসের রাজনৈতিক পরাজয়? ১৯৮৪ লোকসভা নির্বাচন, সেদিন যে ছেলেটির বয়স ১৮, আজ সে ৫৫ কি ৫৬৷ সেদিন সংসদে কংগ্রেসের সাংসদ সংখ্যা ছিল ৪০৪, বিজেপির ২৷ আজ সেই প্রৌঢ় দেখছেন বিজেপি ৩০৩, কংগ্রেস ৫২। এটা একদিনে হয় না৷ ওই বাড়তে থাকার সময়েই মেদ জমে, কোলেস্টরেল বাড়ে, ধমনী শিরা উপশিরায় জমে চর্বি৷ তারপর হঠাৎই সেরিব্রাল, হার্ট অ্যাটাক, আইসিইউ, বলো হরি হরিবোল।

আমরা বাম সরকারকেও দেখেছি৷ ২০০৬-এ ২৩৫ জন বিধায়ক, ২০১১ তে ৩৫, ২০২১ এ শূন্য। সব প্রতিষ্ঠানেই হয়, রাজনৈতিক দলে বিশেষ করে৷ কারণ এখানে বিভিন্ন স্বার্থের সংঘাত লেগেই থাকে৷ কোথায় কে কোনটা মাথায় রেখে দিল, কোথায় কে নিজেকে বঞ্চিত মনে করল, কোথায় কার মনে আরও বড় হবার তীব্র, উদগ্র বাসনার জন্ম হল, কোথায় ক্ষমতার থেকে গড়িয়ে পড়া দুধু আর মধুভান্ডের লোভ কুরে কুরে খেল যাবতীয় আদর্শ, এর হদিশ পাওয়া বড্ড কঠিন৷ তাই রাজনৈতিক দলে এমনটা বার বার হয়৷ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে কিছুটা কারেকটিভ মেজারস নেওয়া সম্ভব হয়, কিছুটা মেরামত করে আবার সোজা হয়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করা যায়, রাজনৈতিক দলের আপাত অবস্থা টের পাওয়াই যায় না, মেরামতটা হবেই বা কী করে? যখন সত্যিই টের পাওয়া যায়, ততদিনে সময় চলিয়া যায়, নদীর স্রোতের প্রায়।

এখন বিজেপির দিকে তাকান, মনে হচ্ছে না, এক অপ্রতিহত শক্তি? সামনে কিছুই দাঁড়াতে পারছে না৷ সাম দাম দন্ড ভেদ দিয়ে সব সামলে নিচ্ছেন মোদি–শাহ। এক ম্যাজিক, যাকে বলাই যায় মোদি ম্যাজিক, যাই হোক উনি দায়ী নন, ওনার গায়ে দাগ লাগছে না। সেইজন্যই দেশের স্বাধীনতার সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়ে কংগ্রেস আজ দেশদ্রোহী, ইংরেজদের কাছে মুচলেকা দেওয়া সাভারকারের উত্তরাধিকারিরা দেশপ্রেমিক। তিনটে যুদ্ধে পাকিস্তান কেবল পরাজিত নয়, পাকিস্তানকে দু’টুকরো করে দেওয়ার নেতৃত্ব দিয়ে কংগ্রেস আজ দেশদ্রোহী৷ পুলওয়ামার ঘটনায় ৫৮ জন সৈনিকের মৃত্যুর পর এক সার্জিকাল স্ট্রাইক চালিয়ে বিজেপি আজ দেশপ্রেমিক। ইউপিতে মঞ্চে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী বলছেন, ফ্রি আনাজ দেওয়া হয়েছে, ফ্রিতে সিলিন্ডার দেওয়া হয়েছে, তৈরি হয়েছে এক বিশাল লাভার্থীবর্গ, যারা নির্বাচনে বিজেপির সঙ্গে থাকবে। সেই প্রধানমন্ত্রীই এই বাংলায় এসে অনুদানের রাজনীতি কী ভয়ঙ্কর, ফ্রিতে চাল ডাল দিয়ে মানুষকে বোকা বানানো হচ্ছে, সেটা মানুষকে বোঝাচ্ছেন, তাঁর দলের লোকজন সেই প্রচার করছে। বিজয় মালিয়া থেকে নীরব মোদি, মেহুল চোকসি সমেত ব্যাঙ্ক লুঠেরারা দেশ ছেড়েছে, কোনও কথা নেই, বিদেশের ব্যাঙ্ক থেকে টাকা ফেরত আনার কথা ছিল, এখন আর শোনা যাচ্ছে না, কিন্তু মাঝে মধেই কংগ্রেস জামানাতে যে বিপুল স্ক্যাম হয়েছিল, টু জি কেলেঙ্কারি হয়েছিল, তার কথা শোনা যাচ্ছে।

বিজেপির প্রায় প্রত্যেক সিনিয়র নেতার ছেলেরা হয় বিরাট ব্যবসায়ী বনে গিয়েছেন, আয় বেড়েছে ১৫০০/২০০%৷ কিংবা রাজনীতিতে নেমেই এমএলএ বা এমপি, এ নিয়ে কোনও কথাই নেই৷ কথা হচ্ছে কংগ্রেস একটি পারিবারিক দল। মানুষ সেটাই বিশ্বাস করছে, আলোচনা করছে, ওই যে, মোদি ম্যাজিক। অন্যদল থেকে সারদা দুর্নীতি, নারদা দুর্নীতি নিয়ে বিজেপিতে আসা হিমন্ত বিশ্বশর্মা, শুভেন্দু অধিকারি নিয়ে কোনও কথা নেই, কিন্তু বিরোধীদের ঘরে রোজ ইডি হাজির। ডিমনিটাইজেশনের ঘাপলা নিয়ে মৌনিবাবা সেজে বসে আছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী৷ বলেছিলেন, একটু সময় দিন, সিদ্ধান্ত যদি ভুল প্রমাণিত হয়, ঝোলা লেকর নিকল পড়েগা। ওদিকে ১৯৪৭ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত দেশকে যে চুলোর দোরে পাঠানো হয়েছে তা প্রতিদিন বিজেপির নেতারা বলছেন, কর্মীরা হোয়াটস অ্যাপ করছেন। অন্যদিকে বিরোধীরা? যত কম বলা যায় ততই ভালো।

তাঁরা একসঙ্গে আছেন, ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন৷ এই মেসেজ মানুষের কাছে পৌঁছনোর আগে নির্বাচন শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু, আগেই বলেছি, সমস্যা যে কেবল বিরোধীদের দিক থেকেই আসবে তা তো নয়, শত্রু নয়, শেষমেষ এক ভাগ্নেই তো বধ করেছিল কংস মামাকে। বিজেপি শুরু থেকেই এক ক্যাডার বেসড পার্টি ছিল, মাথার ওপরে আরএসএস, নিয়ম করে বৈঠক হত, বিভিন্ন স্তরে, সিদ্ধান্ত নেওয়া হত গরিষ্ঠ নেতাদের সম্মতি তে। কিন্তু ২০১৪ থেকে সেই ছবিটা পালটাচ্ছে, দল এখন দু’জনের অধীনে, পুরো কর্তৃত্ব এখন মোদি–শাহের হাতে। আরও ভালো করে বললে, পুরোটাই নরেন্দ্রভাই দামোদরদাস মোদির হাতে। একটু মাথাচাড়া দেবার চেষ্টা করেছিলেন আদিত্যনাথ যোগী৷ তিনিও বুঝেছেন, নির্বাচনী বৈতরণী পার করতে হলে দরকার মোদি ম্যাজিক। রাজ্যের কোনও বিজেপি মুখ্যমন্ত্রীর কোনও স্বাধীন মতামত দেওয়ার ক্ষমতা নেই। এটা কি সেই মুখ্যমন্ত্রীরা মন থেকে মেনে নিচ্ছেন? হয় কখনও? এবং এইখানেই লুকিয়ে আছে বৃদ্ধির সমস্যা। প্রত্যেক রাজ্যে, সারা দেশে।

একটু নজর দেওয়া যাক, গত কয়েকদিনে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনার ওপরে, যা বলছি খানিকটা বোঝা যাবে। ধরুন স্মৃতি ইরানি, তাঁর মেয়ের গোয়াতে অবৈধ বার লাইসেন্স নিয়ে অভিযোগ এসেছে৷ গোয়াতে বিজেপির সরকার, সেই সরকারের এক্সাইজ ডিপার্টমেন্টের তরফে জানানো হয়েছে, লাইসেন্সটি শুধু অবৈধ নয়, জালি, প্রতারণার অভিযোগ আনা হয়েছে। খেয়াল করে দেখুন দল কিন্তু চুপ৷ স্মৃতি ইরানি মানহানির মামলা ইত্যাদির কথা সাংবাদিকদের ডেকে বলেছেন৷ তিনি যা বলার বলছেন, কিন্তু দল চুপ৷ রাজ্য বা কেন্দ্রে দলের কোনও মুখপাত্র এনিয়ে কোনও কথা বলেননি৷ ভাবখানা হল, এটা স্মৃতি ইরানির ব্যাপার, উনিই দেখবেন।

চলুন মেঘালয়ে, সেখানে বিজেপি এবং তার সহযোগী দলের সরকার, দলের ভাইস প্রেসিডেন্ট বার্নার্ড আর মারকের বাগানবাড়ি নাকি ব্রথেল, সেখানে রেইড করল রাজ্য পুলিস৷ ৬ জন নাবালিকা সমেত ৭৩ জন গ্রেফতার৷ ৪০০ বোতল মদ আর ৫০০ র বেশি কন্ডোম পাওয়া গিয়েছে বলে পুলিস জানাচ্ছে৷ মারাক পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এই মারাক কিছুদিন আগে মোদি সরকারের তিন বছর পূর্তি উপলক্ষে বিফ ফেস্টিভালের আয়োজন করেছিলেন৷ ইন ফ্যাক্ট এই বিজেপি নেতা রাজ্যে নির্বাচনের আগে বিজেপি ক্ষমতায় এলে বিফের দাম কমানো হবে এই প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন৷ শুনে অবাক হবেন না, এটাই বিজেপির চরিত্র৷ তাঁরা হিন্দুত্বের কথা বলেন বটে কিন্তু প্রয়োজনে বিফ ফেস্টিভাল করতে তাঁদের কোনও সমস্যাই হয় না।

সে থাক, যা বলতে চাইছি তা হল, রাজ্য বিজেপির ভাইস প্রেসিডেন্টের বাগানবাড়ি, ‘রিম্পুউ বাগান’ সেখানে পুলিশ ঢুকে গেল, অ্যারেস্ট করল৷ মুখ্যমন্ত্রী সহযোগী দলের, এন পি পি র কনরাড সাংমা, পি এ সাংমার ছেলে। ওখানে কি অন্য সমীকরণ তৈরি হচ্ছে? চলুন মহারাষ্ট্রে, মহারাষ্ট্র বিজেপি সভাপতি চন্দ্রকান্ত পাটিল বলেছেন, অনেক কষ্ট বুকে নিয়েই একনাথ শিন্ডেকে মুখ্যমন্ত্রী করা হয়েছে৷ এর আগে বিজেপি দলের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিশ জানিয়েছিলেন, তিনি সরকারে যোগ দিচ্ছেন না৷ তারপর অমিত শাহ, জগৎপ্রকাশ নাড্ডা তাঁর সঙ্গে কথা বলেন, প্রধানমন্ত্রী নিজে কথা বলেন৷ তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার পরেই উপমুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিতে রাজি হন। এবং মজার কথা হল, একমাস হতে চলল, দল ভাঙানো হয়ে গিয়েছে, কিন্তু রাজ্যে দু’জন আছেন এক মুখ্যমন্ত্রী, দুই উপমূখ্যমন্ত্রী, বাকি মন্ত্রী কারা হবেন, সে সিদ্ধান্ত এখনও নেওয়া হয়নি, মানে সমস্যা আছে।

একই ঘটনা আমরা কর্ণাটকে কংগ্রেস জনতা দল সরকার ভাঙার পরেও দেখেছি। ইয়েদুরিয়াপ্পাকে আনা তো হয়েছিল, কিন্তু মন্ত্রিসভা তৈরি করতে একমাস লেগে যায়। মধ্যপ্রদেশেও, কমলনাথের সরকার ভেঙে, সিন্ধিয়াকে নিয়ে, এমএলএদের রিসর্টে নিয়ে গিয়ে মামাজী শিবরাজ সিং চৌহান সরকার তৈরি হওয়ার পরেও এক মাস লেগেছিল মন্ত্রিসভা তৈরি করতে৷ একই প্যাটার্ন, রাজস্থানে বিজয়রাজে সিন্ধিয়া বিদ্রোহী, ছত্তিসগড়েও বিজেপির তিন তিনটে শিবির, বিহারে নীতীশের সঙ্গে সবকিছু ভালো যে চলছে না, সেটা এখন পরিষ্কার। বাংলায় দিলুদা, শুভেন্দু, সুকান্ত, লকেট চট্টোপাধ্যায় চারজনে চারমুখো৷ দলের মুখপাত্র শমিক ভট্টাচার্যের শ্যাম রাখি না কুল রাখির দশা। অর্থাৎ কেন্দ্রে দল যতটা শক্তিশালী হয়ে উঠেছে, সমস্ত ক্ষমতা যেভাবে একজন কী দু’জনের হাতে কেন্দ্রীভূত হচ্ছে, রাজ্যে রাজ্যে ততটাই সংগঠন নড়বড়ে হচ্ছে, নানান সমস্যা দেখা দিচ্ছে, একেই বলে প্রবলেম অফ গ্রোথ, বৃদ্ধির সমস্যা। এ রোগ বড্ড গোপনে বাড়ে, আর হঠাৎই সামনে এসে দাঁড়ায়।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
NATO | Vladimir Putin | NATO বনাম রাশিয়া, তৃতীয় বিশ্বযু/দ্ধ সময়ের অপেক্ষা? দেখুন স্পেশাল রিপোর্ট
00:00
Video thumbnail
Bihar Election | NDA | বিহারে ভাঙল NDA জোট? চিরাগ লড়বেন একা, NDA সরকারের পতন সময়ের অপেক্ষা
00:00
Video thumbnail
Russia-Ukraine | ইউক্রেনে সবচেয়ে বড় হা/ম/লা, রাশিয়ার তৃতীয় বিশ্বযু/দ্ধ কি সময়ের অপেক্ষা?
00:00
Video thumbnail
SSC Update | SSC গ্রুপ C,D-তে এখন টাকা দেবেন না, বিরাট নির্দেশ বিচারপতির, তারপর যা হলো...
00:00
Video thumbnail
Anubrata Mondal | Suvendu Adhikari | অনুব্রতর গড়ে শুভেন্দুর মিছিল, কী অবস্থা? দেখুন এই ভিডিও
07:33
Video thumbnail
Mamata Banerjee | 'প্রস্তুতি সেরে রাখলাম' কী নিয়ে বললেন মুখ্যমন্ত্রী?
08:59
Video thumbnail
Narod Narod (নারদ নারদ) | কমিটির বৈঠকে কে/লেঙ্কা/রি, ঘটনায় উ/ত্তাল সোদপুর
26:58
Video thumbnail
Chinnaswamy Update | চিন্নাস্বামীতে প/দপৃ/ষ্টের ঘটনায় বেঙ্গালুরুর মুখ্যমন্ত্রীকে তলব, দেখুন বড় খবর
18:50
Video thumbnail
বাংলা বলছে (Bangla Bolche) | জি-সেভেন বৈঠকে কেন দেরিতে আমন্ত্রণ মোদিকে?
52:43
Video thumbnail
Barrackpur CP | সরানো হল ব্যারাকপুরের সিপিকে, নতুন সিপি মুরলীধর শর্মা
58:00