Monday, June 2, 2025
Homeচতুর্থ স্তম্ভচতুর্থ স্তম্ভ: সিপিআইএম পার্টি কংগ্রেস

চতুর্থ স্তম্ভ: সিপিআইএম পার্টি কংগ্রেস

Follow Us :

সিপিআইএম ২৩ তম পার্টি কংগ্রেস শেষ হল, কেরালার কান্নুরে। বিশাল জনসমাবেশ, লাল ঝান্ডা, স্লোগান, বিভিন্ন অনুষ্ঠান শেষে জানা গেল ১৭ জনের পলিটব্যুরো তৈরি হয়েছে৷ এই পলিটব্যুরো কি দলের শীর্ষ নেতৃত্ব? না, দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, দলের কেন্দ্রীয় কমিটি হল সর্বোচ্চ কমিটি কিন্তু রোজকার বিভিন্ন রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য, এক কমিটি তৈরি করা হয়, যাকে পলিটব্যুরো বলে। অতএব টেকনিক্যালি এই কমিটি সর্বোচ্চ নয়, যদিও সাধারণ ধারণায় এনারাই দলের শীর্ষতম নেতৃত্ব।

১৭ জনের কমিটি৷ এঁদের মধ্যে প্রকাশ কারাত, অন্ধ্রপ্রদেশের বিভি রাঘভুলু, তামিলনাড়ুর জি রামকৃষ্ণান আর মহারাষ্ট্রের অশোক ধাওয়ালে জীবনে কোনওদিন বিধানসভা, লোকসভা বা রাজ্যসভায় নির্বাচিত হননি৷ এই পলিটব্যুরোর মধ্যেই দলের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি, বৃন্দা কারাত, তপন সেন, নীলোৎপল বসু নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেননি৷ রাজ্যসভায় নির্বাচিত হয়েছেন, কেরালার এ বিজয়রাঘবন, পিনারাই বিজয়ন, মানিক সরকার, কোডিয়ারি বালকৃষ্ণন, এম এ বেবি, সূর্যকান্ত মিশ্র, মহঃ সেলিম, সুভাষিনী আলি, রামচন্দ্র ডোম, এনারা বিভিন্ন সময়ে বিধানসভা, লোকসভার নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন, লড়েছেন, জিতেছেন।

মানে কি দাঁড়ালো? ১৭ জন পলিটব্যুরো সদস্যের মধ্যে, ৯ জন লোকসভা, বিধানসভার নির্বাচনে মানুষের কাছে হাতজোড় করে ভোট চেয়েছেন, নির্বাচিত হয়েছেন৷ বাকি ৮ জন সরাসরি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেননি৷ মানে প্রায় ৫০% পলিটব্যুরো নেতা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেননি৷ বিমান বসু এবারে পলিটব্যুরো থেকে অবসর নিয়েছেন৷ তিনিও কোনওদিন কোনও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেননি৷ এবং উল্লেখযোগ্য হল কেরালা থেকে যাঁরা পলিটব্যুরোতে আছেন বা ছিলেন, তাঁদের প্রত্যেকেই নির্বাচনে লড়েছেন, জিতেছেন।

বাংলার প্রমোদ দাশগুপ্ত বা বিমান বসু জীবনে কোনওদিন পঞ্চায়েত ভোটেও দাঁড়াননি। যে দল, ভারতবর্ষের সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যে থেকে, সংসদীয় গণতন্ত্রেরই রাজনীতি করে, তাদের শীর্ষতম নেতৃত্বের ৫০% জীবনে নির্বাচনে মানুষের মুখোমুখি হননি, এটা একটা তথ্য। যে তথ্যের পাশাপাশি এটাও মাথায় রাখা দরকার যে জনসঙ্ঘ বা বিজেপির প্রত্যেক শীর্ষ নেতা, প্রত্যেকে নির্বাচনে মানুষের মুখোমুখি হয়েছেন, অন্যদিকে তাঁদের থিঙ্ক ট্যাঙ্ক, আদর্শের মূল কেন্দ্র, আরএসএসের কোনও শীর্ষ নেতা নির্বাচনে দাঁড়াননি, সযত্নে এড়িয়ে গিয়েছেন৷ কখনও সখনও আরএসএসের কিছু নেতা বা প্রচারককে বিজেপিই করতে পাঠানো হয়েছে৷ কিন্তু তাঁরা আরএসএসের শীর্ষ নেতা নন, এবং এইখানেই তাঁরা সফল।

আরএসএস এমন একটা ভাব দেখায় যে, ওসব সংসদীয় গণতন্ত্র, তার প্যাঁচ পয়জারে আমরা নেই৷ আমরা সামাজিক সংগঠন, সমাজের দিকনির্দেশ, জাতির করণীয় কর্তব্য নিয়ে আমরা কথা বলব৷  ১০ জন বিধায়ক বা এমপি কেনা বেচার হলে সে বিজেপি করবে, আমরা ওসবে নেই৷ শিল্পপতিদের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা ডোনেশন নিতে হলে বিজেপি নেবে৷ আমরা ওসবে নেই৷ সরকারের জনবিরোধী নীতি ইত্যাদির দায় বিজেপির৷ আমরা তো কেবল দিকনির্দেশের কাজ করে যাব৷ মানে মগজ খাটাবো আমরা, চিন্তাসূত্র আমাদের, বিজেপি সরকারে থেকে তা রুপায়ণের দায় নেবে।

এখানে তারা কতটা সফল ভাবুন একবার, এতবড় কৃষক আন্দোলন হল, কেউ বলেছে যে আরএসএসের নেতারা এর জন্য দায়ী? উলটে এমনও প্রচার হালকা করে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে যে আরএসএস নেতারা এতে খুশি নন৷ একজনও বলেছে যে নোটবন্দি আর তার মারাত্মক প্রভাবের জন্য আরএসএস দায়ী? বরং বলা হয়েছে, আরএসএস মনে করে এ নিয়ে আরও বিবেচনার দরকার ছিল, অর্থাৎ বিজেপি সরকারে থেকে যাই করুক না কেন, আরএসএস যখনই প্রয়োজন, তখনই তার দায় এড়িয়ে যেতে পেরেছে।

কিন্তু বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য মন্ত্রিসভার, নন্দীগ্রাম এপিসোডের দায় প্রকাশ কারাত, বি ভি রাঘভালু বা জি রামকৃষ্ণন এড়িয়ে যেতে পারেননি৷ সিপিআইএম দলের যে কোনও ব্যর্থতা, যে কোনও ঘটনার দায় গোটা দলকে নিতে হয়েছে৷ পলিটব্যুরোর প্রত্যেককেই তার জবাব দিতে হয়েছে৷ সে জবাব যাই হোক না কেন। বিমান বসু কি নন্দীগ্রাম নিয়ে খুব স্বস্তিতে ছিলেন? প্রকাশ কারাত কি সিঙ্গুরে টাটার কারখানা নিয়ে খুব স্বস্তিতে ছিলেন? বা ধরুন বর্ধমানে সাঁইবাড়ি, সত্যিই তো ছিল এক জনবিক্ষোভ, পার্টির পলিটব্যরোর নেতা একজনও তার স্বপক্ষে বলতে পেরেছেন?

অথচ বাবরি মসজিদ ভাঙার পর এমনকি বিজেপিও যখন ব্যাকফুটে, সেদিনও তার স্বপক্ষে আরএসএস নেতাদের কথা বলতে বাধেনি৷ তাদের কোনও সাংবিধানিক দায় নেই৷ অথচ যে রাষ্ট্র কাঠামোকে ভেঙে, এক নতুন রাষ্ট্র কাঠামোর কথা বলে কম্যুনিস্ট পার্টি, তাদের দায় আছে। এক ছাত্র নেতার মুখে শুনেছিলাম, পি সুন্দরাইয়া এক দলিল নিয়ে হাজির হয়েছিলেন৷ যাতে রাষ্ট্রকাঠামোকে দখল করতে কেমন সামরিক দক্ষতা থাকা উচিত, তার বিস্তৃত আলোচনা ছিল৷ সে দলিল আলোর মুখ দেখেনি, এদিকে কিভাবে উত্তরপ্রদেশের পুলিশকে দাঁড় করিয়ে রেখে, একটা ৫০০/৬০০ বছরের কাঠামোকে কয়েক ঘন্টার মধ্যে ভেঙে ফেলতে হবে, তার ছক কিন্তু আরএসএসের নাগপুর দফতরেই তৈরি হয়েছিল৷ এবং লক্ষ লক্ষ মানুষের সামনেই সেই পরিকল্পনা রুপায়িত হয়েছিল, মানে সংবিধানবিরোধী, সংবিধান না মেনে কাজ করার দায় আরএসএস অনায়াসে নিতে পারে৷ কম্যুনিস্ট পার্টি, সিপিএম দল নিতে পারে না।

আবার সংসদীয় গণতন্ত্রের প্রশ্নেই আসুন, আরএসএসকে মায়াবতী, জয়ললিতা বা নীতীশ কুমারের সঙ্গে জোটের দায় নিতে হয় না৷ বিজেপি যেখানে যেমন দরকার, সেখানে সেই দলের সঙ্গে জোট করতে পারে, তাদের নামে যে দুর্নীতির দায়ই থাকুক না কেন, তারা ক্ষমতা পাওয়ার জন্য সেই জোট করতে পারে, করেছেও৷ কিন্তু সিপিআইএম, তেমন জোট করলেই দলের মধ্যে, দলের বাইরে প্রশ্ন উঠবে, দায় তাদের বইতে হবে, আরএসএসের সেই দায় নেই। বিজেপি কাদের দলে নিল, কাদের নিল না তা নিয়ে আরএসএসের কোনও দায় আছে কি? তাদের গায়ে কোন দুর্নীতির ছিটে আছে, কোন নারদা কেলেঙ্কারির অভিযুক্ত বিজেপিতে ঢুকছে, তার চিন্তা আরএসএসের নেই৷ কিন্তু তারা বিজেপির প্রতিটি, প্রতিটি রাজনৈতিক কার্যকলাপকে প্রতিদিন নিয়ন্ত্রণ করে,

কতটা? একটা উদাহরণ দিই, লালকৃষ্ণ আদবানি, যাঁর রামমন্দির আন্দোলন, রথযাত্রা বিজেপিকে ক্ষমতায় এনেছে, যিনি একাই দাবি করতে পারেন সেই বিরাট কৃতিত্বের, সেই তিনি ২০০৫ এ পাকিস্থানে গেলেন, ৪ জুন করাচিতে গেলেন, জিন্নার সমাধিস্থলে৷ সেই জিন্নাহ, যাঁকে হত্যার ষড়যন্ত্রে এই আদবানিও অভিযুক্ত ছিলেন৷ সেই আদবানির এক বিরাট ভোলবদল৷ তিনি ওখানে গিয়ে বললেন, দেশ বিভাগ এক বাস্তবতা ছিল, যা এড়ানো যেত না৷ তিনি কায়েদে আজম মহম্মদ আলি জিন্নাহকে ধর্মনিরপেক্ষ বললেন৷ বললেন জিন্নাহ ছিলেন হিন্দু মুসলমান ঐক্যের প্রচারক৷ অ্যামবাসাডর অফ হিন্দু মুসলিম ইউনিটি৷ তিনি তখন সংসদে বিরোধী দলনেতা। তারপর থেকে আদবানি বিজেপির রাজনীতিতে সেই কল্কে আর পাননি৷ তাঁকে এক্কেবারে সরিয়ে, এমনকি মন্ত্রিসভাতেও না রেখে নরেন্দ্র মোদির সরকার হল৷ তিনি থাকলেন মার্গদর্শক মন্ডলীর সদস্য হয়ে৷ ১২ নম্বর খেলোয়াড়ও নন, মাঠের বাইরে পাঠানো হল তাঁকে। এটাই আরএসএস।

আজ সিপিআইএম পার্টি কংগ্রেসের কথা বলতে গিয়ে এই কথাগুলো আসছে কেন? আসছে৷ কারণ, সেই ১৯২৫ এ কম্যুনিস্ট পার্টি তৈরি হয়েছিল কানপুরে৷ আরএসএস তৈরি হয়েছিল নাগপুরে৷ আজ বিজেপি কেবল ক্ষমতায় নয়, প্রবলভাবে ক্ষমতায়৷ সিপিআইএম টিঁকে আছে কেরালায়৷ সেটাও কতটা কম্যুনিস্ট, কতটা বাম, তা নিয়ে হাজারো প্রশ্ন আর বিতর্ক থেকেই যাচ্ছে। এবং এই প্রশ্ন আমি তুলছি না৷ এই বিষয়ের উথ্বাপন হয়েছে পার্টি কংগ্রেসে৷ আরএসএস–বিজেপি কোন মন্ত্রে এগিয়ে গেল? কিভাবে? কোন পদ্ধতিতে? তা নাকি বোঝার চেষ্টা করছেন সিপিআইএম নেতৃত্ব৷

সত্যিই কি বোঝার চেষ্টা করছেন? তাহলে এক কথায় মূল সারটা বোঝা যাক৷ আরএসএস তার দর্শনকে কোথাও একটুও নড়চড় হতে দেয়নি৷ ডাইলিউট হতে দেয়নি৷ তারা হিন্দু রাষ্ট্রবাদ থেকে একচুলও সরেনি৷ দেশের সংখ্যালঘুদের নিয়ে তাঁদের যা বক্তব্য, তা একই আছে৷ ৩৭০ ধারা বিলোপ থেকে ইউনিফর্ম সিভিল কোড নিয়ে তাঁদের বক্তব্য যা ছিল তাই আছে৷ অথচ বিজেপির সংখ্যালঘু সরকার, মিলিজুলি সরকার চালানোর সময়ে বিজেপি এ সব ইস্যুগুলোর কথা মুখেও আনেনি৷ তখনও প্রতিদিন আর এসএস নেতারা কিন্তু তাঁদের এই ইস্যুগুলো থেকে এক পাও পিছু হটেননি৷ অথচ রাজ্য চালাতে হবে, বেকারদের চাকরি দিতে হবে বলে, কমিউনিস্ট পার্টি টাটার সঙ্গে মিটিং করে, তাঁদের সস্তায় জমি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন৷ ওদিকে কর্মসূচি বলছে, ওই টাটা, বিড়লা, ডালমিয়া গোয়েঙ্কা ইত্যাদি একচেটিয়া পুঁজির বিরুদ্ধে তাঁদের লড়াই, তাদেরকে উৎখাত করতে হবে, যে সামন্ততান্ত্রিক অবশেষের বিরুদ্ধে জনগণতান্ত্রিক বিপ্লব করবে সিপিএম, তাদেরই প্রতিনিধি চরণ সিং এর লোকদল, পশ্চিম ইউপির খাপ পঞ্চায়েতের নেতাদের সঙ্গে জোট করতেও তারা পিছুপা নন,

এই স্ববিরোধিতাই তাঁদেরকে ডুবিয়েছে, ডোবাচ্ছে৷ তার জন্য সাংগঠনিক কাঠামোতে যে পরিবর্তন আনা দরকার, তার কথা সিপিএম নেতৃত্ব ভেবেও উঠতে পারছেন না৷ এভাবেই যদি চলে, তাহলে খুব শিগগির আমরা এসইউসিআই দলের এক নিষ্ঠাবান সহযোগীকে পাব৷ বছরে দু’বার শিবদাস ঘোষ লাল সেলাম বলা ছাড়া যাঁদের আর কোনও কর্মসূচিই নেই৷ দেশের অন্যতম বাম দল, তাদের প্রভাব কমে যাওয়াটা দেশের কাছে দুর্ভাগ্যজনক, কিন্তু সেই দুর্ভাগ্যকে এড়ানোর কোনও সদিচ্ছে, অন্তত এই ২৩ তম পার্টি কংগ্রেসে দেখা গেল না।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
বাংলা বলছে (Bangla Bolche) | 'সিঁদুর' বনাম 'লক্ষ্মী', 'অর্ধেক আকাশ', ভোটের টার্গেট ২৬-শে কী হবে?
00:00
Video thumbnail
Bangladesh Money | এক দেশ, ২ রকম টাকা, জিনিসপত্র কিনতে গিয়ে বিরাট মুশকিলে বাংলাদেশের মানুষ
00:00
Video thumbnail
Russia | Ukraine | হা/ম/লা, পাল্টা হা/ম/লা, রাশিয়া-ইউক্রেনের ইস্তানবুলে বৈঠক, আদৌ থামবে যু/দ্ধ?
00:00
Video thumbnail
Covid 19 | ভয় ধরাচ্ছে করোনা, আ/ক্রান্তের সংখ্যা বাড়ল ১৩০০%, এবার কী হবে? আবার কী লকডাউন?
00:00
Video thumbnail
OBC List|বহু প্রতীক্ষিত OBC তালিকায় ২৫ সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব,অনুমোদন মন্ত্রিসভার বৈঠকে
00:00
Video thumbnail
Chirag Paswan | কী খেলা চলছে বিহারের বিজেপি জোটে? চিরাগের এই কথায় কীসের ঈঙ্গিত?
00:00
Video thumbnail
Bangla Bolche | ছাব্বিশে ভাইপো মুখ্যমন্ত্রী হবে
00:50
Video thumbnail
Bangla Bolche | নামকরনের ক্ষেত্রে আরও সতর্ক হতে হবে
01:41
Video thumbnail
Fourth Pillar | যু/দ্ধ জয়ী প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীরা, সৈন্যের পোষাকে কেউ সাজেননি তারা
01:01
Video thumbnail
Fourth Pillar | বিজেপি ব্যর্থ সরকার, তাই করে মিথ্যে প্রচার
00:59