Tuesday, June 10, 2025
Homeচতুর্থ স্তম্ভচতুর্থ স্তম্ভ: ওহ তো ঝোলা লেকে চল পড়ে, নিয়ে ঝোলা চললো ভোলা 

চতুর্থ স্তম্ভ: ওহ তো ঝোলা লেকে চল পড়ে, নিয়ে ঝোলা চললো ভোলা 

Follow Us :

ওহ তো ঝোলা লেকে চল পড়ে৷ না না যার কথা ভাবছেন তিনি নয়৷ আপাতত নন্দসেনা গোতাবায়া রাজপক্ষে ঝোলা নিয়ে বেরিয়ে গিয়েছেন, কোথায় গিয়েছেন তা জানা নেই৷ আপাতত তাঁর সাধের রাষ্ট্রপতি ভবনে শ্রীলঙ্কার আম জনতা৷ তারা কেউ রাষ্ট্রপতির বিছানায় শুয়ে ঘুমোচ্ছে, কেউ তেনার জিমে গিয়ে ওয়াকারে একটু হেঁটে নিচ্ছেন৷ কেউ রান্নাঘরের ফ্রিজ খুলে দেখছেন কী খেত লোকটা? কেউ কেউ আবার ঝপাং, ঝাঁপ দিয়েছেন স্বচ্ছ নীল সুইমিং পুলে৷ সে জল কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘাম আর মাটি মিশে ঘোলাটে হয়ে গিয়েছে৷ বুঝুম্ভুল অবস্থা প্রহরীদের, হাতে অস্ত্র আছে, কিন্তু ব্যবহার করার সাহস তো দূরের কথা, ব্যবহার করার কথাও মাথাতে আসছে না।

এই জুলাই মাসের ১৪ তারিখে, ১৭৮৯ সালে আমজনতা এইভাবে চড়াও হয়েছিল ফ্রান্সের বাস্তিল দূর্গে৷ সে দূর্গ আজ আর নেই৷ একটা স্মারক স্তম্ভ শুধু রয়েছে৷ আর রয়েছে বাস্তিল মেট্রো স্টেশন৷ ব্যস। কিন্তু যাই হোক টিঁকে আছে শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রপতি ভবন, রাষ্ট্রপতি পালিয়েছেন। সেন্ট পিটসবার্গ, জারের শীতপ্রাসাদ থেকে পালিয়েছিল শেষ জার, আলেকজান্ড্রাভিচ রোমানভ, নিকোলাস দুই। কিউবার প্রেসিডেন্ট বাতিস্তা ১৯৫৯ এর পয়লা জানুয়ারি, ভোর তিনটেয় ঝোলা কাঁধে নিয়ে পালিয়েছিলেন কিউবা থেকে, ইতিহাসে এমন ঘটনা অনেক আছে৷ শ্রীলঙ্কায় যা দেখছি তা ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি মাত্র৷

শ্রীলঙ্কায় প্রথম নয়, শ্রীলঙ্কা শেষও নয়। যদি ইতিহাস দেখা যায়, তাহলে একটা জিনিস তো পরিষ্কার, মানুষ স্বৈরতন্ত্রকে মেনে নেয়নি কোনওদিন। যদিও আধুনিককালে এই স্বৈরতন্ত্র কিন্তু আসে মানুষের প্রবল সমর্থন নিয়ে, মানুষ তাদেরকে সাদরে ডেকে নিয়ে আসে, মনে হয়, ইনিই থেকে যাবেন যুগ যুগ ধরে৷ তারপর এক মাহেন্দ্রক্ষণে তিনি, ওই যে ঝোলা লেকে চল পড়ে। স্বৈরতন্ত্র তিন ধরনের, এক তো রাজা, সম্রাট, সুলতানদের ব্যাপার, সে আজ আর নেই৷ দ্বিতীয় হল ধর্মের ভিত্তিতে স্বৈরতন্ত্র, আমরা মধ্য প্রাচ্যে এবং আরও কিছু ইসলামিক দেশে দেখেছি, দেখছি। তৃতীয় হল, নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় এসে স্বৈরতান্ত্রিক হয়ে ওঠা, সংখ্যাগুরুবাদকে আশ্রয় করে এক আধুনিক স্বৈরতন্ত্র, যা এক সাংঘাতিক ব্যাপার। কেন? কারণ সামনে গণতন্ত্র থাকে, নির্বাচন থাকে, সংবিধানও থাকে৷ কিন্তু এসব কে চুলোর দোরে পাঠিয়েই সংখ্যাগুরুবাদ, মেজরেটেরিয়ানিজম কাজ করে।

আমাদের বেশি সাংসদ আছে, তাই নাগরিক কারা আমরা ঠিক করব, আমরা ঠিক করব কোন মন্দির কোথায় গড়া হবে, আমরা ঠিক করব কোনটা ইতিহাস, আমরাই বলে দেব কী খাওয়া উচিত। আসুন এবার শ্রীলঙ্কার পরিপ্রেক্ষিতে, এই সংখ্যাগুরুবাদের বিষয়টাকে বোঝা যাক। রাষ্ট্রপতি গোতাবায়া রাজাপক্ষে, ইনি কে? ২০০৫ এর আগে এনার নাম তেমন শোনা যায়নি৷ ২০০৫ এ তাঁর ভাই মাহিন্দ্র রাজাপক্ষের নির্বাচনী ক্যাম্পেনে এনাকে শ্রীলঙ্কার মানুষজন দেখে৷ স্লোগান তখনই ঠিক হয়েছিল, মেরুকরণের স্লোগান, শ্রীলঙ্কা সিংহলি বৌদ্ধদের, মেরুকরণের উল্টোদিকে বিভিক্ত তামিল হিন্দু মানুষজন৷ দেশের মুসলমান জনসংখ্যা এবং কয়েকটা জায়গায় খ্রিষ্টান মানুষজন। সিংহলি হিন্দু, বৌদ্ধরা খতরে মে হ্যায় স্লোগান কাজে দিয়েছিল৷ মাহিন্দ্র রাজাপক্ষে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হলেন৷ গোতাবায়া ভালো পদ পেলেন, সামরিক দায়িত্ব পেলেন।

প্রথম কাজ হল এলটিটিই কে শেষ করা৷ আমেরিকা চাইছিল, ভারত চাইছিল, এমনকি চীনও সামনে না এলেও তাই চাইছিল৷ প্রথমে এলটিটিইর বড় একটা ফ্র্যাকশনকে বিচ্ছিন্ন করা হল৷ ক্যাপ্টেন করুনা চলে গেলেন বিদেশে৷ তারপর গণহত্যা, সাধারণ তামিল দেখলেই গুলি করো, হাসপাতাল, স্কুল কিচ্ছু বাদ গেল না৷ প্রভাকরণকেও মারা হল৷ এলটিটিই শেষ৷ সবাই জানলো পিছনের মুখ গোতাবায়া রাজাপক্ষে৷ মজার কথা হল এই গোতাবায়ার সামরিক শিক্ষা আমাদের দেশে, অসমের কাউন্টার ইনসারজেন্সি অ্যান্ড জঙ্গল ওয়ারফেয়ার স্কুলে পড়াশুনো৷ ডিফেন্স সার্ভিস স্টাফ কলেজ, ওয়েলিংটন থেকে পি এস সি, এম এস সি করে দেশে ফিরেছিলেন৷ কিছুদিন কাজ করার পর ১৯৯১ তে উনি চলে যান আমেরিকা৷ পেশা ব্দলে আইটি সেক্টরে ব্যবসা৷ মার্কিন নাগরিকত্ত্ব নিয়ে আমেরিকাতেই সেটলড। ২০০৫ এ দেশে ফেরা, কেন? ওই যে বললাম, ভাই মাহিন্দ্র রাজাপক্ষের নির্বাচনে আসা। এরপর তিনি আবার শ্রীলঙ্কার নাগরিক হলেন৷

এলটিটিই চলে যাবার পরে তাঁর উচ্চতাও বাড়ল। মাহিন্দ্র রাজাপক্ষে ২০১৫তে হেরে গেলেন, দু বছর পর এবার গোতাবায়া রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে জিতলেন৷ ক্ষমতার বিভিন্ন জায়গায় রাজাপক্ষে ফ্যামিলির লোকজন বসল৷ আবার সেই সিংহলি হিন্দু, বৌদ্ধ খতরে মে হ্যায় স্লোগান উঠল৷ প্রায় সমস্ত নিয়ম কানুনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে, প্রতিটা সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে অগ্রাহ্য করে শুরু হল গোতাবায়া যুগে৷ উনি যা বলছেন, সেটাই ঠিক, সেটাই নিয়ম, বিরোধী দলের কেউ কথা বললেই জেল। অভিযোগ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, দেশদ্রোহিতা। এবং চতুর্থ স্তম্ভ চলে গেল দেশের কিছু বড় ব্যবসায়ীদের হাতে৷ তারা হয়ে উঠল শ্রীলঙ্কার গোদি মিডিয়া৷ স্বাধীন খবর দিতে চাওয়া কিছু মানুষ দেশ ছেড়ে, বিদেশ থেকে নিউজ পোর্টাল চালানো শুরু করলেন৷ হিরন বি জয়সুন্দরের কলম্বো টেলিগ্রাফ দেখুন, বুঝতে পারবেন।

এইখানে বলে রাখি, শ্রীলঙ্কায় আমাদের দেশের বহু আগে মুক্ত অর্থনীতি চালু হয়েছিল, ১৯৭০ এ। কাজেই ওই সময় থেকেই শ্রীলঙ্কায় মধ্যবিত্ত, উচ্চ মধ্যবিত্ত শ্রেণির সংখ্যা বাড়তে থাকে৷ জিডিপি বাড়তে থাকে৷ পার ক্যাপিটা ইনকাম বাড়তে থাকে৷ শ্রীলঙ্কার ট্যুরিজমও ছিল৷ এর একটা কারণ, এলটিটিই-র যাবতীয় মুভমেন্ট শেষ হবার পরে ট্যুরিজম বিরাট ভাবে বেড়েছিল৷ বিভিন্ন দেশের আর্থিক সহায়তা, চীনের সহায়তা নিয়ে বেড়ে ওঠে শ্রীলঙ্কা, আমাদের দেশের চেয়ে পেট্রলের দাম কম, আমাদের চেয়ে হাঙ্গার ইনডেক্সে কম, আমাদের চেয়ে হ্যাপিনেশ ইনডেক্সে বেশি, এ সবই ছিল৷

কিন্তু ২০১৭ থেকে তিন ধরনের বদল শুরু হয়৷ ধর্ম আর জাতির ভিত্তিতে প্রবল মেরুকরণ ঘটে, যা দেশের সামাজিক শান্তি, স্থিতিশীলতাকে নষ্ট করে৷ গণতান্ত্রিক আন্দোলন, প্রতিবাদ থেমে গিয়ে দেশ মূলত গোতাবায়ার কথায় চলতে থাকে৷ বিরোধী মতের হলেই সে লোপাট হয়ে যাচ্ছিল, জেলে পোরা হচ্ছিল এবং সংবাদপত্র, সংবাদ মাধ্যম মোটামুটি চাকরবাকরের স্তরে নেমে যায়৷ এই সময় প্যান্ডেমিক আসে, ট্যুরিজম বন্ধ হয়, অর্থনীতি ঝুলতে থাকে, গোতাবায়া অর্থনৈতিক জরুরি অবস্থা জারি করেন৷ আরও উল্টোপাল্টা সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়৷ খোলা বাজারের অর্থনীতিতে এক ধাক্কায় কড়া অনুশাসন জারি করতে গেলে যা যা হয় তাই হয়েছে, কেউ গোতাবায়াকে মানা করতে পারেনি।

আরেকটা ঘটনা খুব সাংঘাতিক৷ হঠাৎ এক সকালে রাষ্ট্রপতি গোতাবায়া ঘোষণা করলেন, মিত্রোঁ……… শ্রীলঙ্কা এখন থেকে পুরোপুরি অর্গানিক চাষ করবে৷ কোনও ধরনের কেমিক্যাল ফার্টিলাইজার বা পেস্টিসাইড ব্যবহার করা যাবে না৷ এই ঘোষণার পিছনে কোনও প্রস্তুতি ছিল না, কৃষিক্ষেত্রে অরাজকতা শুরু হল৷ চা থেকে দেশের ১০% রোজগার আসত৷ চা প্রোডাকশন অর্ধেক কমে গেল৷ ধান, সবজিতেও৷ দেশ জুড়ে ত্রাহি ত্রাহি রব৷ দেশে খাদ্য নেই, চা, ট্যুরিজম থেকে ফরেন এক্সচেঞ্জ আসত৷ আপাতত বন্ধ। অথচ মাত্র তিন বছর আগে এই রাজাপক্ষে যেখানেই গিয়েছেন, মানুষ ভিড় করেছে৷ নয়া শ্রীলঙ্কার জনক বলা হয়েছে, তিনি চেষ্টা চালাচ্ছিলেন যাতে করে সংবিধানকে হাতে এনে চিরটাকাল রাষ্ট্রপতি থাকা যায়৷ দেশের বিভিন্ন মিডিয়াতে এ নিয়ে আলোচনাও শুরু হয়েছিল৷ তাকিয়ে দেখুন এত বড় বিক্ষোভ, বিরোধী দল আছে? নেই। কারণ বিরোধী দল প্রায় শেষ করেই ফেলেছেন গোতাবায়া রাজাপক্ষে৷ কিন্তু মানুষের সহ্য করার একটা সীমা আছে৷ সে রোজ রোজ প্রতিবাদে নামে না৷ কিন্তু তার পিঠ যদি দেওয়ালে ঠেকে যায়, তাহলে পথে নামে, আর মানুষ পথে নামলে জার থেকে বাতিস্তা হয়ে রাজাপক্ষের দল, ওই ঝোলা লেকে চল পড়ে, রইল ঝোলা চললো ভোলা।

এসব দেখে শুনে চায়ের দোকানে বসে হরিপদদা গান গাইছিলেন, চিরদিন কাহারও সমান নাহি যায়। এবং এর মধ্যেই আমার কাছে আরেক ভিডিও এল, কোথাকার? বিহারের কাটিহার জেলার আবাদপুর থানার কাছে, বারিয়াউল আপগ্রেডেড মিডল স্কুলের ছাত্রদের ছবি, তাদের মিড ডে মিল তারা পাচ্ছিল না, তারা আজ তাদের মত করে প্রতিবাদ করেছে, মনে করিয়ে দিয়েছে হোয়ার অর্ডার ইজ ইনজাস্টিস, ডিসঅর্ডার ইজ দ্য বিগিনিং অফ জাস্টিস। যখন নিয়মটাই হয়ে দাঁড়ায় শোষণ, লুন্ঠন আর অত্যাচার, তখন বেনিয়মেই সেই অত্যাচারের মুখোমুখি দাঁড়াতে হয়, লড়তে হয়।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
Rekha Patra | BJP | খবরের জেরে গতকাল সুস্থ, আজ অসুস্থ? রেখাকে নিয়ে রাজনৈতিক জল্পনা তুঙ্গে
00:00
Video thumbnail
Rekha Patra | BJP | সোমবার কী বললেন রেখা পাত্র? দেখুন কলকাতা টিভি EXCLUSIVE
00:00
Video thumbnail
Rekha Patra | BJP | সন্দেশ আ/টকে শুভেন্দুর গলায়, হাসপাতালে রেখা, দেখুন কলকাতা টিভি EXCLUSIVE
00:00
Video thumbnail
Rekha Patra | BJP | রবিবার রেখা পাত্রর স্বামী কলকাতা টিভিকে কী বলেছিলেন? দেখুন EXCLUSIVE ভিডিও
00:00
Video thumbnail
বাংলা বলছে (Bangla Bolche) | শেষ মুহূর্তে G-7-এ আমন্ত্রণ, বিপাকে বিশ্বগুরু?
00:00
Video thumbnail
CESC | Nabanna | স্মার্ট মিটারে ভুরি ভুরি অভিযোগ, বড় সিদ্ধান্ত বিদ্যুৎ দফতরের
00:00
Video thumbnail
Anubrata Mondal | Suvendu Adhikari | অনুব্রতর গড়ে শুভেন্দুর মিছিল, কী অবস্থা? দেখুন এই ভিডিও
00:00
Video thumbnail
NATO | Vladimir Putin | NATO বনাম রাশিয়া, তৃতীয় বিশ্বযু/দ্ধ সময়ের অপেক্ষা? দেখুন স্পেশাল রিপোর্ট
00:00
Video thumbnail
Bihar Election | NDA | বিহারে ভাঙল NDA জোট? চিরাগ লড়বেন একা, NDA সরকারের পতন সময়ের অপেক্ষা
00:00
Video thumbnail
Dilip Ghosh | BJP | ২৬-এর ভোটে বিজেপির প্রার্থী হবেন দিলীপ ঘোষ? দেখুন কলকাতা টিভি EXCLUSIVE
00:00