Wednesday, July 2, 2025
Homeচতুর্থ স্তম্ভচতুর্থ স্তম্ভ: আসা যাওয়ার মাঝখানে

চতুর্থ স্তম্ভ: আসা যাওয়ার মাঝখানে

Follow Us :

কংগ্রেসে আসা যাওয়া লেগেই থাকে, সে কেবল আজ নয়, বহুকাল ধরে। স্বাধীনতার আগে, স্বাধীনতার পরে আসা যাওয়া চলেছে, বহুবার। রাজাগোপালাচারি ভারত ছাড় আন্দোলনের সময়, তারও আগে নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু, স্বাধীনতার পরে তো বহু নাম। সাম্প্রতিক ইতিহাসে কেবল বাংলার দিকে তাকালেই বহু নাম পাওয়া যাবে, সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায় থেকে প্রিয়রঞ্জন দাসমুন্সি, প্রণব মুখোপাধ্যায় এবং হ্যাঁ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে কংগ্রেসে এই আসা যাওয়ায় দুটো নাম, হ্যাঁ মাত্র দুটো নাম বিশেষ করে উল্লেখযোগ্য, এক সুভাষ চন্দ্র বসু। দুই, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এঁরা দু’জন কংগ্রেসের বাইরেও নিজেদের সংগঠন সফলভাবে তৈরি করতে পেরেছেন, বাকিদের মধ্যে বর্তমানে অন্ধ্রপ্রদেশ মুখ্যমন্ত্রী জগন রেড্ডি, অন্তত রাজ্যে ক্ষমতা ধরে রেখেছেন, যদিও জগন রেড্ডি কংগ্রেসী মুখ্যমন্ত্রীর ছেলে হলেও নিজে সেভাবে কংগ্রেসের উল্লেখযোগ্য নেতা ছিলেন না। এঁদের বাদ দিয়ে বাকিরা কংগ্রেস থেকে বেরিয়েছেন, আবার গেছেন, আবার বেরিয়েছেন, তাঁরা প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন কিন্তু কংগ্রেসের পরিচয়েই। স্বাধীনতার আগে, স্বাধীনতার বহুদিন পর পর্যন্ত কংগ্রেসের এই আসা যাওয়া কংগ্রেসের ওপর খুব একটা প্রভাব ফেলেনি, কারণ কংগ্রেস তখন ক্ষমতায়, বা ক্ষমতা না থাকলেও একমাত্র শক্তিশালী বিরোধী দল। এখন কিন্তু অবস্থাটা সেই আগের মত নেই, কিন্তু যাওয়া আসা লেগেই আছে। সেই যাওয়া আসার বেশ কয়েকটা ঘটনা, দিন দুয়েক কংগ্রেস কে আর কিছু না হোক, খবরের কাগজে, সংবাদ মাধ্যমে প্রথম পাতায়, আলোচনার আসরে এনে হাজির করেছে। মানে অনেকদিন পরে কংগ্রেস আবার আলোচনায়, এটা এভাবেও দেখা যায়। প্রথমে জানা গেলো, পরে বুধবার বিকেলে গোয়ার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী লুইজিনহো ফেরেইরো কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিলেন। জানা গেলো, পঞ্জাবের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী দিল্লি পৌঁছেছেন, তিনি নাকি অমিত শাহ, জে পি নাড্ডা র সঙ্গে দেখা করবেন। সাত সকালে প্রাক্তন জেএনইউ সম্পাদক, সিপিআই জাতীয় পরিষদ সদস্য কমরেড কানহাইয়া কুমার, গুজরাটের দলিত নেতা জিগনেশ মেওয়ানি রাহুল গান্ধীর সঙ্গে চলে গেলেন, শহিদ এ আজম ভগত সিংয়ের মূর্তিতে মালা দিতে, কথা ছিল সেখান থেকেই তাঁরা তিনজনে যাবেন কংগ্রেস দফতরে, সাংবাদিকদের মুখোমুখি হবেন। কিন্তু মালা দেবার পরেই খবর এল সিধু পাজি, পঞ্জাব প্রদেশ সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। এমনিতেই সিধু পাজি কোনওদিনই মিঃ ডিপেন্ডেবল নন, বরং উল্টোটা। মনে করুন ১৯৯৬ এ ভারতীয় ক্রিকেট টিম গিয়েছিল ইংল্যান্ডে, আমাদের সিধু পাজি সেই ট্যুরের মাঝখানেই হঠাৎই দেশে ফিরে এসেছিল। আজহারউদ্দিনের সঙ্গে মনোমালিন্য ইত্যাদির কারণে, কিন্তু শুধু মনোমালিন্যের জন্য জাতীয় দল থেকে সোজা বাড়ি চলে আসা, এরকম আগে তো আর হয়নি। তিনি বিজেপিতে ছিলেন, অরুণ জেটলিকে অমৃতসরে টিকিট দেওয়া হল, উনি কেবল সেই কারণে দল ছেড়ে আপে ভিড়লেন, কী চাই? মুখ্যমন্ত্রী পদের দাবি। কেজরিওয়াল সেটা বুঝেই পাত্তা দেননি, সিধু চলে এলেন কংগ্রেসে, আবার সেই একই দাবি, মুখ্যমন্ত্রীত্ব চাই। তাঁকে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি করা হল, ৭২ দিনের মাথায় তিনি রিজাইন করলেন, কেউ কেউ বলছে তিনি বিএসপি’র সঙ্গেও কথা বলছেন, ওনার তুলনা একমাত্র আমাদের রাজ্যের রুদ্রনীল ঘোষের সঙ্গেই করা যায়, তো সেই নভজোৎ সিং সিধু পদত্যাগ করলেন।

এই আসা যাওয়া নিয়েই আজকের চতুর্থ স্তম্ভ। গোয়ার রাজনীতি নিয়ে এখনই কিছু বলার নেই, ফেলেইরো এসেছেন। সম্ভবত তাঁর নেতৃত্বে তৃণমূল কিছু আসন পাবে, সেই আসন ৫/৬/৭ হলেও, হাং অ্যাসেম্বলির ক্ষেত্রে বিরাট গুরুত্বপূর্ণ হতেই পারে। কিন্তু তৃণমূলের কাছে এটা গুরুত্বপূর্ণ, তাঁরা দ্বিতীয়বার গোয়ার একজন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়ে, আবার গোয়ার মাঠে নামছেন। কিছুটা অগ্রগতিও তাদের জাতীয় দল হিসেবে অন্য মাত্রা দিতেই পারে। নজর গোয়ার বিধানসভা নির্বাচন নয়, ২০২৪। এটা পরিস্কার।

আসুন বামপন্থী, মার্কসবাদী কমরেড কানহাইয়া কুমার বা একসময় আলট্রা লেফট হিসেবে চিহ্নিত, দলিত নেতা জিগনেশ মেওয়ানির কংগ্রেসে যাওয়া নিয়ে,ক’টা কথা বলা যাক। চারিদিকে এ কি? এ কি হল? শোনা যাচ্ছে। একজন বামপন্থী ছাত্র নেতা, এআইএসএফ থেকে নির্বাচিত জেএনইউ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক, তিনি কিনা কংগ্রেসে গেলেন। জেএনইউ’র আল্ট্রা লেফট বলে পরিচিত ছাত্ররা জিগনেশ মেওয়ানির নির্বাচনী প্রচারে গিয়েছিলেন, সেই জিগনেশ কংগ্রেসে? যাঁরা বলছেন, তাঁদের একটু ইতিহাস মনে করিয়ে দিই, ৯২-৯৩ এ জেএনইউ সংসদের সভাপতি এসএফআইয়ের সাকিল আহমেদ খান, এখন বিহারে কংগ্রেসের এমএলএ, দলের জাতীয় সম্পাদক। ৯৬-৯৮ দু’বছরের জেএনইউ সংসদের সভাপতি, এসএফআইয়ের বট্টি লাল বৈরওয়া, এখন রাজস্থান প্রদেশ কংগ্রেস সম্পাদক। এসএফআইয়ের সৈয়দ নাসির হুসেন, ১৯৯৯-২০০০ এ জেএনইউ সংসদের সভাপতি ছিলেন, এখন কংগ্রেসের রাজ্যসভা সাংসদ, কর্ণাটক থেকে। সিপিআইএমএলের ছাত্র সংগঠন এআইএসএ’র তরফে ভোটে দাঁড়িয়ে, ২০০৭-২০০৮ এ জেএনইউ সংসদের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন কমরেড সন্দীপ সিং। এখন পলিটিকাল অ্যাডভাইসার টু প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। ওই একই এআইএসএ এর মোহিত পান্ডে জেএনইউ ছাত্র সংসদের সভাপতি ছিলেন, ২০১৬-১৭ তে, মাত্র ক’দিন আগে। তিনি এখন উত্তর প্রদেশ কংগ্রসের সোশ্যাল মিডিয়া চিফ। এবার সেই তালিকায় কানহাইয়া কুমার, নতুন কিছু তো নয়। এটা স্বাভাবিক কারণ এরা প্রত্যেকেই তুখোর বক্তা, ভাল সংগঠক, মানুষের কাছে পরিচিত। অথচ এদের ছাত্র জীবনের পরে এরা কেউ জেলা কমিটি, কেউ বড়জোর রাজ্য কমিটি, তাঁদের কাজ করার জায়গা কোথায়? আপাতত বিপ্লব হচ্ছে না, তাহলে? এদের এক অংশ যাদের রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্খা আছে, যা থাকা স্বাভাবিক, তাঁরা একটা মেন স্ট্রিম দলে যাবে, যাচ্ছে। যাবার জায়গা আপাতত একটাই, কংগ্রেস, তাঁরা সেখানেই গেছে। খুব অস্বাভাবিক কি? এই যাওয়ায় তাঁদের লাভ আছে, বড় দলের হয়ে খেলতে পারবে, আর কংগ্রেসের লাভ, জমিতে থাকা রাজনৈতিক লড়াকু নেতার যোগদান, দল আরও শক্তিশালী হবে। আগামী গুজরাট নির্বাচনে হার্দিক প্যাটেল, জিগনেশ মেওয়ানি জুড়ি, কংগ্রেসকে আবার লড়াইয়ের মাঠে এনে হাজির করবে, দেখে নেবেন। আর কংগ্রসে যোগ দিয়েই কানহাইয়া কুমার যেটা বলেছেন, সেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। অনেকেরই মাথায় ঢুকছে না, দেশের অন্তত ২৪৫ টা আসনে, বিজেপির উল্টোদিকে একমাত্র কংগ্রেস আছে, এটাই তো বাস্তব। সারা দেশের প্রতিটা জেলায়, প্রতিটা ব্লকে কিছু কংগ্রেস কর্মী পাওয়া যাবে, এটাই তো বাস্তব। কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে এখনও বিজেপি বিরোধী রাজনীতি অসম্পূর্ণ, কংগ্রেসের হাজার ভ্রান্তি, হাজার ভুল পদক্ষেপ থাকার পরেও এটাই বাস্তব। কিন্তু এটা কংগ্রেসকেও বুঝতে হবে, আত্মঘাতী গোল করে আজকের দিনে রাজনীতিতে টেঁকা যায় না।

নভজোত সিং সিধুর ওপরে আজকের দিনে কোন রাজনৈতিক নেতা ভরসা করে? এই সিধু এর আগে অমরিন্দর সিংয়ের বিরুদ্ধে ঘোঁট পাকিয়েছেন, এখন বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে, নির্বাচনের ক’মাস আগে, পদত্যাগ করে, দলকে আরও বড় বিড়ম্বনার মধ্যে ঠেলে দিলেন, কেন? সম্ভবত নিজেও জানেন না। আসলে কংগ্রেসের আজকের এই পতনের জন্য, কংগ্রেসই দায়ী, তাদের দিল্লি থেকে রাজনীতি চালানোর যে ধারা, আগে ছিল, তা আজও বরকরার। বিজেপি ও তাদের মুখ্যমন্ত্রী পালটে দিচ্ছে, একবার নয়, দু’বার, তিনবার। কিন্তু কোথায়? গুজরাটে। তো গুজরাটে মোদি, অমিত শাহের চেয়ে বড় কোনও নেতা আছে? কর্ণাটকে? কর্ণাটকে একা ইয়েদুরিয়াপ্পার কতটা শক্তি? শক্তি তো লিঙ্গায়েত ভোটের, মোদি আমিত শাহ সেখানে বোম্মাইকে আনলেন, তিনিও লিঙ্গায়েত, প্লাস মোদির করিশ্মা। প্রায় চুপচাপ সরে গেলেন ইয়েদুরিয়াপ্পা। অসমে সর্বানন্দ সোনওয়ালকে কেন্দ্রে এনে, হিমন্ত বিশ্বশর্মাকে বসানো, কংগ্রেসকে আরও দুর্বল করা, কোনও রিস্ক নেই। উত্তরাখন্ড তো বিজেপি জিতবে নরেন্দ্র মোদির জোরে, সেখানে বাকিরা ল্যাম্প পোস্ট। কিন্তু উত্তর প্রদেশ, সেখানে মুখ্যমন্ত্রীর জনভিত্তি আছে, হাজার ইচ্ছে থাকলেও নির্বাচনের আগে তারা হাতও দিল না। ২০২৪ পর্যন্ত হাতও দেবে না, কারণ নির্বাচন। পঞ্জাব কে জেতাবে? রাহুল গান্ধী? প্রিয়াঙ্কা গান্ধী? বা রাজস্থান? বা ছত্তিশগড়? সেখানে তাদেরকে, কংগ্রেসকে নির্ভর করতেই হবে সেখানকার নেতাদের ওপর, কাজেই একটাও ভুল চাল, সেই রাজ্যে কংগ্রেসের বিপর্যয় ডেকে আনবে, যে বিপর্যয় তারা ডেকে এনেছে সারা দেশ জুড়ে।

অন্ধ্রপ্রদেশ, কংগ্রেসের চূড়ান্ত বিপর্যয়, ১৯৭৭ এর নির্বাচনেও দারুণ রেজাল্ট, সেই অন্ধ্রতে ক্ষমতা চলে যাবার পরেও ওয়াইএসআর রেড্ডির ব্যক্তিগত দক্ষতায় কংগ্রেস আবার ক্ষমতায় এল, তিনি মারা যাবার পর, তাঁর ছেলে জগন রেড্ডিকে পাত্তাই দিল না কংগ্রেস হাইকমান্ড, ফল হাতেনাতে। কংগ্রেস অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে মুছে গেছে। কর্ণাটকে একই অবস্থা, বিরেন্দ্র পাটিলকে সরিয়ে দেবার পর থেকে লিঙ্গায়েত ভোট চলে গেছে, বসানো হয়েছিল ধরম সিংকে তিনি আদতে কর্ণাটকের লোকই নন, কর্ণাটক ছিল কংগ্রেসের দূর্গ।  সেই কর্ণাটক, যেখান থেকে ইন্দিরা গান্ধী জিতে এসেছিলেন, সোনিয়া গান্ধীও জিতেছিলেন, সেখানে কংগ্রেস এখন জনবিচ্ছিন্ন। পশ্চিম বাংলার কথা তো জানাই আছে, সেদিনের যুবনেত্রী মমতা আজ তাঁর দল নিয়ে ক্ষমতায়, কংগ্রেস শূন্য। কংগ্রেসকে বুঝতে হবে সেই জমিদারি চলে গেছে, এখন মাটিতে পা রেখে, রাজ্যের নেতাদের গুরুত্ব দিয়ে রাজনীতি করতে হবে, এবং পাশাপাশি সমমনভাবাপন্ন দলগুলোর সঙ্গে ভাল সম্পর্ক রাখতে হবে, না হলে সিধু চলে যাবে, কানহাইয়া কুমার আসবে, কংগ্রেসের কোনও লাভ হবে না।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
Kasba Incident | কসবা কাণ্ডে ঘটনার পর কী কী হয়েছিল? দেখুন বিস্তারিত এই ভিডিও
00:00
Video thumbnail
Kasba Incident | কোন ফাঁদে গ্রেফতার মনোজিৎ? দেখুন চাঞ্চল্যকর ভিডিও
00:00
Video thumbnail
Gujarat | High Court | শুনানি চলাকালীন আইনজীবীর কীর্তি, ভিডিও দেখলে চমকে উঠবেন
00:00
Video thumbnail
Alifa Ahmed | বিধানসভায় শপথ গ্রহণ আলিফার, দেখুন এই ভিডিও
00:00
Video thumbnail
Samik Bhattacharya | বিজেপির রাজ্য সভাপতি হলেন শমীক ভট্টাচার্য
06:51
Video thumbnail
Europe Heat Wave | বিরলতম ঘটনা, ইউরোপে প্রবল তাপপ্রবাহ, ফ্রান্সে বন্ধ স্কুল, ইতালিতে সতর্কতা জারি
03:59
Video thumbnail
Russia frigate | রাশিয়ার ফ্রিগেট ভারতের হাতে, ভয়ে কাঁপছে কোন কোন দেশ? দেখুন স্পেশাল রিপোর্ট
04:21
Video thumbnail
Russia-Ukraine | Drone | রাশিয়ায় ইউক্রেনের ড্রোন হা/ম/লা, ফের যু/দ্ধ শুরু? দেখুন বড় খবর
03:07
Video thumbnail
Ali Khamenei | Iran | মা/রা/র পরিকল্পনা হয়েছিল খামেনিকে, স্বীকার কাটজের, পাল্টা কী করবে ইরান?
07:00
Video thumbnail
Colour Bar | দ্বিতীয় গান কবে আসছে? জানালেন অনির্বাণ
05:59

Deprecated: Automatic conversion of false to array is deprecated in /var/www/ktv/wp-content/themes/techinfer-child/functions.php on line 39